২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হিজাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কাঠগড়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ

হিজাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কাঠগড়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ - সংগৃহীত

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গ শহরের জিপী গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সাতজন মুসলিম শিক্ষার্থীর পরিবার বিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে তাদের মেয়েদের ধর্মীয় স্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন। তারা এ ব্যাপারে মিমাংসার জন্য দেশটির আদালতে বিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।

গত কয়েক মাস ধরে বিদ্যালয়টি মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব পরিধান করে বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে এমন খবর সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়েছে।

কিছুদিন পূর্বে বিদ্যালয়টির সাতজন হিজাবী শিক্ষার্থীকে জানানো হয় যে, তাদেরকে বিদ্যালয়ের পোশাক বিধি ভঙ্গের জন্য নিয়ম নীতি সংক্রান্ত শুনানিতে অংশ গ্রহণ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের প্রতি নিয়ম নীতি সংক্রান্ত নোটিশ জারির পরে ক্লিফে ডেকার নামের স্থানীয় একজন আইনজীবী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন শুনানিকে বেআইনি ঘোষণা করেছেন।

ক্লিফে ডেকার নামের ওই আইনজীবী বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি একটি নোটিশ জারি করে বলেছেন যে, শিক্ষার্থীদের প্রতি নিয়মনীতি সংক্রান্ত শুনানির জন্য যে নোটিশ জারি করা হয়েছে তা বৈষম্যমূলক এবং বিদ্যালয়টির ইউনিফরম সংবিধান পরিপন্থী।

ক্লিফে ডেকার বলেছেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী তাদের ধর্মীয় পোশাক পরিধান করতে চায় তাদের অধিকার, সম্মান এবং সমতাকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করতে পারে না।’

ক্লিফে ডেকারের ওই নোটিশের পরে স্থানীয় শিক্ষা বোর্ড জিপী গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের হিজাব সম্বলিত ইউনিফরম পরিধান করার অনুমতি দিতে বলেছে।

বিদ্যালয়ের প্রতি জারি করা ওই নোটিশে এমন কয়েকটি লাইন ছিলো- ‘বোধগম্য ব্যাখ্যা হচ্ছে এই যে, বিদ্যালয়টিতে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যারা শিক্ষার্থীদেরকে অসম্মান প্রদর্শন করতে অভ্যস্ত এবং সেখানে ইউনিফরম নিয়ে একটি সঙ্কট চলমান রয়েছে।’

ক্লিফে ডেকার দ্যা সেটারডে স্টারকে বলেন- ‘বিদ্যালয়টির আচরণ বিধিতে মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে আলাদা করে দেখানো হয়েছে এবং আমার মক্কেল বিদ্যালয়ে তার ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে তারা কিভাবে বিদ্যালয়ের প্রতি তাদের ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি করা যায় তা খুঁজে বেড়াচ্ছেন।’

‘আমাদের মক্কেল এখনো বিদ্যালয়ের সাথে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত আছেন।’
ক্লিফে ডেকার বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে এ ব্যাপারে একটি শুনানি করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি, কিন্তু যদি কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে তবে তিনি এবং তার মক্কেলের সামনে আদালতে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।

তবে আশার বিষয় হচ্ছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়ম-নীতি সংক্রান্ত শুনানিটি স্থগিত করেছে এবং এ ব্যাপারে একটি তদন্ত আরম্ভ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার একজন সমাজবাদী নেতা ইউসুফ আবরেমজি এক টুইট বার্তায় জানতে চান- মুসলিম শিক্ষার্থীদের কেন চুল ঢেকে রাখার জন্য শাস্তির মুখোমুখি করা হয়েছে?

 

‘হিজাবী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার-বাজে আচরণ, নোংরামি ছাড়া আর কিছুই না’

নাইজেরিয়ার লাগোস রাজ্যের মুসলিম শিক্ষার্থীদের সংগঠন এমএসএসএন অঞ্চলটির গভর্নর আকিনউনমি আম্বোডের প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে হিজাব পরিধান করা নিয়ে যে সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার দুর করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

দি মুসলিম স্টুডেন্টস সোসাইটি অব নাইজেরিয়া (এমএসএসএন) এর পক্ষ থেকে চলতি মাসের ৯ তারিখে এবিষয়ে একটি পিটিশন দেয়া হয়। পিটিশনটিতে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই দেশটির একটি আদালত কর্তৃক দেয়া একটি পর্যবেক্ষণের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়- হিজাব পরিধান করা নাগরিকদের একটি মৌলিক মানবাধিকার।

 এমএসএসএন তাদের আবেদনে গভর্নরকে আদালতের দেয়া পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী অঞ্চলটির প্রধানের প্রতি জনগণের হিজাব পরিধান করার অধিকারকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করতে আহ্বান জানায়।

MSSN এর আবেদনটির একাংশে বলা হয়েছে- ‘আমাদের সদস্যদের প্রতি সম্প্রতি যে আচরণ দেখানো হচ্ছে তা সংবিধান পরিপন্থী কাজ। যেভাবে লাগোসের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে হিজাব পরিধানকারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে, তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছ এবং তাদের প্রতি বাজে আচরণ করা হচ্ছে তা একটি নোংরা কাজ ছাড়া আর কিছুই না।

হিজাব পরিধানকারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ আদালত অবমাননার সামিল। আমাদের দাবী আপনি আপনার ক্ষমতার সঠিক ব্যাবহারের মাধ্যমে আদালতের দেয়া রায়ের প্রতিফলনের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলোর প্রতি জরুরি ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক আচরণের অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নিবেন।’

 লাগোস রাজ্যের ইসলো উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা জে. ও. সাহাদারে তার বিদ্যালয়ে হিজাব পরিধান করে আসার অজুহাতে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেন। এমএসএসএন এর বিবৃতিতে বলা হয়, বিদ্যালয়ে হিজাব পরিধান করা যে কারো মৌলিক অধিকার।

ওনোবেল্লো ডট কম

হিজাব পরা ফৌজদারি অপরাধ যেসব দেশে

পৃথিবীর অনেক দেশেই হিজাব পরা ফৌজদারি অপরাধ।  নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, স্পেন, ফ্রান্স, চাদ ও ক্যামেরুনে হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। 

নেদারল্যান্ডে মুখ ঢেকে রাখা তথা নিকাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এটিকে একটি ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আইন অনুযায়ী, যে কেউ বোরকা পরবে- যেটি তার পুরো মুখ এবং শরীর ঢেকে রাখে বা নিকাব যেটি জনসমাগম স্থানে শুধু মুখ ঢেকে রাখে সে ব্যক্তিকে ৪৫০ ইউরো বা ৪৭২ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হবে। 

সুইজারল্যান্ডে ১ জুলাই ২০১৬ স্কার্ফ-বোরকা-নেকাব পরিধানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আইন অনুযায়ী টিচিনো নামক ইটালিয়ান ভাষাভাষীর একটি স্থান যেটি দক্ষিণ সুইজল্যান্ডে অবস্থিত সেখানকার মুসলিম মহিলারা ৯,২০০ ইউরো জরিমানার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অধিকাংশ সুইস নাগরিক সমগ্র দেশে জনসমাগম স্থানে মুখ ঢেকে রাখে এমন পর্দার উপর নিষেধাজ্ঞা চায়। 

২০১১ সালে বেলজিয়াম মুখ ঢেকে রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ আইন অনুযায়ী যে কেউ পর্দা বা এমন পোশাক যা জনসমাগম স্থানে মানুষের মুখ ঢেকে রাখে বা মুখ চিনতে কষ্ট হয় এমন পোশাক পরিধান করে সে ব্যক্তি ৭ দিনের কারাবাস অথবা ১,৩৭৮ ইউরো জরিমানার সম্মুখীন হবেন।

উত্তর-পূর্ব স্পেনের কাতালোনিয়া নামক স্থানের কিছু অংশে মুখ ঢেকে রাখে এমন পর্দার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২০১৩ সালে স্পেনের সুপ্রিম কোর্ট এ আইন উঠিয়ে দেয় এবং মতামত প্রদান করেন যে, ‘এটি ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সীমিত করবে’। তবে কিছু কিছু অঞ্চলে এখনো নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। 

ফ্রান্স ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে মুখ ঢেকে রাখে এমন পর্দার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এটা হয়েছিল ২০১১ সালে। এ আইন অনুসারে কোনো মহিলা যদি এ আইন ভঙ্গ করে তবে তাকে ১৫০ ইউরো জরিমানা করা হবে এবং যদি কেউ কোনো মহিলাকে তার মুখ ঢেকে রাখতে বাধ্য করে তবে তাকে ৩০,০০০ ইউরো জরিমানা করা হবে। 

২০১৫ সালের জুন মাসে সেখানে পর পর দুইবার আত্মঘাতী বোমা হামলার দুদিন পরেই মুখ ঢেকে রাখে এমন পর্দা নিষিদ্ধ করে চাদ। উক্ত হামলার পরেই, দেশটির প্রধানমন্ত্রী কালজেউব ফাহিমি ডেউবেট বোরকা পুড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান। বোরকা পরার দন্ড হিসেবে গ্রেফতার অথবা কারাবাসের আইন করা হয়। 

নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ক্যামেরুনও মুখ ঢেকে রাখে এমন পর্দা পরিধান নিষিদ্ধ করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement