‘ইয়েমেন এখন শিশুদের জন্য জাহান্নাম’
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৩৮, আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৫১
যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়ে উঠছে। দেশটির এক কোটি ১০ লাখ শিশু চরম খাদ্য সঙ্কট ও নানা ধরনের অসুখে ভুগছে। এদের অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলেছে, ইয়েমেন এখন শিশুদের জন্য জাহান্নামে পরিণত হয়েছে।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বলেছে, প্রায় ৪০ লাখ শিশু এতটাই খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে যে, তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে না পারলে মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে যাবে। হুদায়দা বন্দরে সামরিক সঙ্ঘাত ইয়েমেনের লাখ লাখ শিশুর খাদ্য সরবরাহের েেত্র হুমকি হয়ে উঠেছে।
গত ১৩ জুন থেকে হুদায়দা বন্দর দখলের লক্ষ্যে ব্যাপক হামলা শুরু হয়েছে। ইয়েমেনে মানবিক ত্রাণ সরবরাহের প্রধান পথ হচ্ছে হুদায়দা বন্দর। যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরো কয়েকটি দেশের সহযোগিতায় ২০১৫ সালের মার্চ থেকে দরিদ্র প্রতিবেশী দেশ ইয়েমেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে সৌদি আরব। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত শিশুসহ ১৪ হাজারের বেশি ইয়েমেনি নিহত হয়েছে। সম্প্রতি শিশুদের বহনকারী একটি বাসে হামলা চালিয়ে স্কুলগামী বহু শিশুকে হত্যা করেছে সৌদি বাহিনী।
আরো পড়ুন: ইয়েমেন আলোচনা পুনরায় শুরুর উদ্যোগ জাতিসঙ্ঘের
ইয়েমেন বিষয়ক জাতিসঙ্ঘ দূত মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি দেশটির সৌদি আরব সমর্থিত সরকার ও হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে আবারো আলোচনা শুরুর উদ্যোগ নেবেন। দেশটিতে যুদ্ধের অবসানে সমঝোতার লক্ষ্যে প্রথম দফার আলোচনার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি এ কথা বললেন।
আনুষ্ঠানিক শান্তি আলোচনার জন্য জেনেভায় গত সপ্তাহের প্রাক বৈঠকে হুতি বিদ্রোহীদের বিভিন্ন দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা বৈঠকে যোগ দেয়নি।
জাতিসঙ্ঘ দূত মার্টিন গ্রিফিথস নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, ইয়েমেন যুদ্ধের অবসানে ধারাবাহিক আলোচনা আয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের দৃঢ় অঙ্গীকার পেতে বুধবার তিনি মাস্কাট সফর করবেন এবং পরে সেখান থেকে সানা ও রিয়াদে যাবেন।
এদিকে আহত বিদ্রোহীদের ওমান সরিয়ে নেয়া এবং বিদ্রোহী প্রতিনিধি দলকে নিরাপদে সানায় ফিরে আসার দাবিতে বিদ্রোহীরা জেনেভায় প্রাক শান্তি আলোচনায় যোগ দেয়নি।
গ্রিফিথস নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে বলেন, ইয়েমেন শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়ার ‘উত্থান ও পতন’ থাকবে। এক্ষেত্রে তিনি সমঝোতা উদ্যোগের প্রাথমিক বাধাকে সাময়িক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
‘সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে’ তার নতুন কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন গ্রিফিথস।
২০১৬ সাল থেকে সেখানে যুদ্ধরত বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে আলোচনা আয়োজনের লক্ষে এটি ছিল প্রথম পদক্ষেপ।
বৈঠকের পর মার্কিন দূত নিকি হেলি সাংবাদিকদের বলেন, জেনেভায় এ আলোচনায় হুতি বিদ্রোহী গ্রুপ অংশ না নেয়ায় নিরাপত্তা পরিষদ দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং পরবর্তী কোন আলোচনায় সরল বিশ্বাসে অংশ নিতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।= উল্লেখ্য, দারিদ্রপীড়িত ইয়েমেনে ২০১৫ সাল থেকে এ যুদ্ধে ১০ হাজার লোক নিহত হয়েছে।
আরো পড়ুন: গাজায় ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে নিহত তিন
ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলা ফিলিস্তিনিদের সাপ্তাহিক বিক্ষোভে গতকাল শুক্রবারও গুলি চালিয়েছেন দখলদার বাহিনী। এদিন গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরাইলি সেনা চালানো গুলিতে তিন ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও ৩০ জন আহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
ইসরাইলি সেনা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, প্রায় ১২ হাজার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হয়ে সীমান্ত বেড়া ভাঙার চেষ্টা করলে তারা গুলি করে। সেনাদের দাবি, বিক্ষোভকারীরা টায়ার পোড়ানো ধোয়ায় নিজেদের আড়াল করে তাদের লক্ষ্য করে পাথর ও আগুনের গোলা ছুঁড়েছে।
নিহত তিন জনের মধ্যে ১৪ বছরের এক কিশোর রয়েছে। এই নিয়ে গত ৩০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ পর্যন্ত ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়ালো ১৭৭ জনে।
১৯৭৬ সাল থেকে বছরের ৩০শে মার্চ ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের দখলদারিত্বের প্রতিবাদে ‘ভূমি দিবস’ পালন করছে। ওইদিন নিজেদের মাতৃভূমির দখল ঠেকাতে বিক্ষোভে নামলে ইসরাইলি সেনাদের হাতে ৬ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এর প্রতিবাদে প্রতিবছর ৩০ মার্চ থেকে ছয় সপ্তাহের কর্মসূচি পালন করে তাকে ফিলিস্তিনিরা। চলতি বছর প্রাণহানি বেশি হওয়ায় এখনও বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে ফিলিস্তিনিরা।