০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির অপেক্ষায় লকডাউন

ঢাকাসহ সারাদেশে লকডাউন দেয়া হয়েছে-এমন তথ্য সঠিক নয়
প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির অপেক্ষায় লকডাউন - ছবি : সংগৃহীত

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে জোনভিত্তিক (রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন) লকডাউন ঘোষণার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে। তার সম্মতি পেলেই জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যক্রম শুরু করবেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে রোববার রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ও করোনা সংক্রান্ত মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মো. হাবিবুর রহমান খান নয়া দিগন্তকে বলেন, লকডাউনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলেই ব্যবস্থা হবে।

‘রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৩৮টি এলাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা লকডাউন নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্র দিয়ে গতকাল রোববার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পুরনো কোনো ওয়েব সাইটের সূত্র ধরে নিউজগুলো হয়তো করা হয়েছে। গত ২-৩ দিন ধরে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, এসবের কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

আমাদের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। সরকারের উচ্চ পর্যায় (প্রধানমন্ত্রী) থেকে সিদ্ধান্ত আসছে দ্রুতই যাতে এটির বাস্তবায়ন হয়, সে চেষ্টাই চলছে।

এর আগে গত শনিবার মো. হাবিবুর রহমান খান জানিয়েছিলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন এলাকা রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার জন্য অ্যাপ করা হয়েছে। রোববার নাগাদ ঢাকা শহরের একাধিক জায়গার রেড জোনে লকডাউনের মাধ্যমে পাইলটিং শুরু হবে। আর প্রত্যাশা করছি, সারা দেশে আগামী বুধবারের মধ্যে জোনিং করে কাজ শুরু করা হবে।

জনপ্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনা আক্রান্তের হার বিবেচনায় ঢাকাসহ সারাদেশকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন-এই তিন জোনে বিভক্ত করে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের প্রস্তাবনা তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য পাঠানো হয়েছে। গতকাল রোববার এই প্রস্তাবনাটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপিত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

গত শনিবার সন্ধ্যায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী নয়া দিগন্তকে জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পরেই জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যক্রম শুরু করা হবে। এর আগে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার। তিনি জানিয়েছেন, আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রধানদের সমন্বয়ে একাধিক সভা করেছি। সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাংশ তৈরি করে তা প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য পাঠিয়েছি। আমাদের তৈরি করা সারাংশতে উল্লিখিত প্রস্তাব বা সিদ্ধান্তগুলো যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা সেটি বাস্তবায়ন করবো।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটিতে ছিল দেশ।
অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকার ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে সীমিত আকারে সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলার ঘোষণা দিয়েছে। একই সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধ থাকা গণপরিবহনও (বাস, লঞ্চ, ট্রেন) চালু হয়। কিন্তু, চলমান করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আরো কঠোর হচ্ছে সরকার। পুরো দেশকে ‘রেড, ইয়েলো ও গ্রিন’-এই তিন জোনে ভাগ করে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এর আগে গত করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্রম অবনতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর গত ১ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা সংক্রমণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার কথা জানান।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়েলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা মুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেড জোনকে লকডাউন করা হবে, ইয়েলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। সতর্কতা থাকবে গ্রিন জোনেও।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকায় প্রতি এক লাখে যদি ৩০ জন বা এর বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত থাকে তবে সেটাকে রেড জোন বলা হবে। ৩ জনের বেশি কিন্তু ৩০ জনের কম থাকলে তবে সেই এলাকাকে ইয়েলো জোন বলা হবে। এক বা দু’জন বা কেউ না থাকলে সেটাকে গ্রিন জোন বলা হবে। তবে জোন ঘোষণার ক্ষেত্রে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। জানা যায়, কোন এলাকা কোন জোন (রেড,ইয়েলো ও গ্রিন) অ্যাপের মাধ্যমে তা চিহ্নিত করা থাকবে। আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে গেলে, রেড জোন পর্যায়ক্রমে ইয়েলো ও গ্রিন হবে। প্রযুক্তিগত সহায়তার কাজটি করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও এটুআই। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআর (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান) তথ্য সরবরাহ করবে।

লকডাউন শুরু নিয়ে নাটকীয়তা
রোববার ভোররাত থেকেই বিভিন্ন অনলাইনে করোনা প্রাদুর্ভাব অধ্যুষিত রাজধানী ঢাকার ৩৮টি এলাকা আংশিক লকডাউন শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর প্রকাশিত হয়। এছাড়া দেশের ৪০টি জেলা ও ৪৮০টি উপজেলা রেড জোন বিবেচনায় পুরোপুরি লকডাউন, ১৩ জেলা ও ১৯ উপজেলাকে ইয়েলো জোন বিবেচনায় আংশিক লকডাউন এবং গ্রিন জোন বিবেচনায় মাত্র একটি জেলা ঝিনাইদহ এবং ৭৫টি উপজেলাকে লকডাউনের বাইরে বলে প্রচার পায়। এ নিয়ে তথ্য বিভ্রাট সৃষ্টি হলেও দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement