কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের নাম বদল ও পুনর্গঠনের দাবি কৃষিবিদদের

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) নাম পরিবর্তন করে কৃষি অধিদফতর করার দাবি জানিয়ে বিসিএস (কৃষি) অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসচিব মো: রেজাউল ইসলাম (মুকুল) বলেছেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নাম হওয়ায় আমাদের সম্প্রসারণের মধ্যে আটকে থাকতে হয়। কৃষি অধিদফতর নাম করা হলে কৃষি সেক্টর নিয়ে বিভিন্নভাবে কাজ করা সহজ হবে।’

শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে ডিএই পুনর্গঠন ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা' শীর্ষক এক সভায় তিনি এ দাবি জানান।

সংগঠনের আহ্বায়ক ও ডিএইয়ের প্রশাসন ও অর্থবিষয়ক পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো: সাহিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ডিএইয়ের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো: ছাইফুল আলম। এ সময় আরো বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক পরিচালক আহম্মেদ আলী চৌধুরী ইকবাল, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশিদ প্রমুখ।

এ সময় সভায় মূল প্রবন্ধে কৃষিবিদ রেজাউল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘স্বাধীনতা পর দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে অথচ ফসলি জমি দিন দিন কমছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার, যান্ত্রিক চাষাবাদ, কৃষি উপকরণের যৌক্তিক ব্যবহারের ফলে শাকসবজি, ধান, আলু আমসহ বেশ কিছু কৃষিপণ্য উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ রয়েছে। গবেষণা উদ্ভাবিত সর্বশেষ কৃষি প্রযুক্তি কৃষকের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর পাশাপাশি মানসম্মত কৃষি পণ্য সার, বীজ, কীটনাশক, বালাইনাশককের মান নিয়ন্ত্রণ, কৃষিজ পণ্য আমদানি-রফতানির নীতি নির্ধারণসহ কৃষি উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিসিএস (কৃষি) কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

তিনি বলেন, ‘দেশে বিগত ৫২ বছরে জমির পরিমাণ কমেছে ৩০ শতাংশ কিন্তু উৎপাদন বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে ধানের উৎপাদন বেড়েছে ৩ দশমিক ৮ গুণ। গমের উৎপাদন বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৭ গুণ ও ভুট্টায় বেড়েছে দু’হাজার ২৬৭ দশমিক ৬৭ গুণ বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদ মো: রেজাউল ইসলাম মুকুল।

এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন নুরে আলম সিদ্দিকী, বিসিএস কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব ও ডিএই খামারবাড়ি ঢাকার ফোকাল পার্সন কৃষিবিদ মো: রেজাউল ইসলাম মুকুল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিবর্তে কৃষি অধিদফতর করার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, ‘আগের নামের কারণে শুধুমাত্র সম্প্রসারণেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। আর শব্দটি বাদ দিলে সার্বিক কৃষির উন্নয়ন সম্ভব হবে।
তাছাড়া বিসিএস কৃষি একাডেমি গঠনের আহ্বান জানানো হয়। তার সাথে ডিএই মহাপরিচালক পদকে সিনিয়র সচিব ও ৯টি উইং-এর পরিচালকের বিপরীতে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গ্রেড-১), আঞ্চলিকের অতিরিক্তি পরিচালক-দ্বিতীয় গ্রেডসহ বেশকিছু পদ সৃষ্টির মাধ্যমে কৃষি কর্মকর্তাদের মানোন্নয়নের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনেও বিরাট ভূমিকা রাখবে।’

কৃষিবিদ রেজাউল ইসলাম মুকুল তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় কৃষির উৎপাদনের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে দেশে ধান উৎপাদন হয়েছে ৪২১ টন ও ২০৫০ সালে প্রয়োজন হবে ৫২০ টন, গম উৎপাদন হয়েছে ১১ দশমিক ৭২ টন, দরকার হবে ১৫ টন।’

ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে ৬৮ দশমিক ৮ টন, দরকার ৮৫ টন। ডাল উৎপাদন হয়েছে ৮ দশমিক ৪ টন, দরকার হবে ১১ টন। তৈলবীজ উৎপাদন হয়েছে ২০ দশমিক ৬ টন, দরকার হবে ২৫ টন এবং সবজি উৎপাদন হয়েছে ২৪১ টন, ২০৫০ সালে দরকার হবে ৩০০ টন।

কর্মশালায় মুক্ত আলোচনা পরিচালনা করেন কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও ডিএই প্রশাসনের পরিচালক কৃষিবিদ ড. শাহিনুল ইসলাম এবং মুক্ত আলোচনার সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন কৃষিবিদ আরিফুর রহমান (প্রকল্প পরিচালক)।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিএইয়ের মহাপরিচালক মো: ছাইফুল আলম বলেন, ‘আমাদের কৃষিকে আরো বেগবান করার লক্ষ্যে ডিএই পূর্ণগঠন প্রয়োজন।’