আগস্ট বিপ্লবের পর ৬ হাজার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:৪৪
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ছয় হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ২ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সেনাবাহিনী সদর দফতরের অফিসার্স মেস-এ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন সেনা সদরের মিলিটারী অপারেশনস ডাইরেক্টরেট (সামরিক অভিযান অধিদফতরের) স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ মোতায়েন সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম ও স্থানীয় মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এই মুহূর্তে দেশের ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনী জনগণের জান-মাল, রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই) এবং সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোকে রক্ষার লক্ষ্যে কাজ করছে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী যেসব দায়িত্ব পালন করেছে তা হলো- পুলিশ বাহিনীকে পুনরায় কার্যক্ষম হতে সহায়তা করা; আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা; বিদেশী কূটনৈতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কারখানাগুলোকে সচল রাখতে সহায়তা করা; বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অরাজকতা ও ভাংচুর প্রতিরোধ করা; পাশাপাশি জনগণের ভোগান্তি এড়াতে এবং দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে মূল সড়কগুলোকে বাধামুক্ত রাখা।
তিনি আরো বলেন, কারখানাগুলো চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ-সহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যার সুবাদে বর্তমানে দেশের প্রায় ২ হাজার ৮৯টি পোশাক কারখানার প্রায় সবকটিই সুষ্ঠুভাবে চলছে।
তিনি জানান, এর পাশাপাশি ৭০০-এর অধিক বিভিন্ন ধরণের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, যার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৪১টি, সরকারি সংস্থা বা অফিস সংক্রান্ত ৮৬টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৯৮টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ৩৮৮টি।
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময় মতো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এবং বহু মানুষের জান ও মালের ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।
বিদেশী কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কূটনৈতিক এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক সেনা টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সামরিক এ কর্মকর্তা আরো বলেন, সেনাবাহিনী অবৈধ মাদক উদ্ধার, মাদক ব্যবসায়ী, উস্কানিদাতা ও বিভিন্ন অপরাধী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের চক্রান্তকারীদের ধরতেও তৎপর রয়েছে।
এছাড়া সেনাবাহিনী অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা, বিভিন্ন অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার করার কাজেও সম্পৃক্ত রয়েছে। যৌথ অভিযানে ৭০০ জনের অধিক মাদক কারবারি অথবা মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজাসহ অন্যান্য অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৭ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন এবং এসব দায়িত্বের পাশাপাশি, সেনাবাহিনী অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ চলাকালীন উভয় দলের খেলোয়াড়, কর্মকর্তা এবং ভেন্যুগুলোর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
এ বছর অক্টোবরে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উদযাপন করতে দেশব্যাপী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে সেনাবাহিনী।
উৎসব চলাকালীন, সারা দেশে অতিরিক্ত ১৩৩টি সেনাক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল এবং ১০ হাজারের বেশি অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায় যাতে নিরাপদে প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান উৎসব পালন করতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছে সেনাবাহিনী। দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২৯৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে খুবই সচেতন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শীর্ষ নেতৃত্ব সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে যে কোনো অবস্থাতেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হতে দেয়া যাবে না। আমরা এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবো।’
সূত্র : বাসস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা