বাইসাইকেল এবং জুতা
- শেখ সজীব আহমেদ
- ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০৫
এশার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে শুনতে পেলাম, আমাদের সুবচনী বাজার যাওয়ার পথের বড় ব্রিজের দিকে, পানির মধ্যে একটি বাইসাইকেল ও শুকনো স্থানে একজোড়া জুতা পড়ে আছে। এক অটোরিকশাচালক দেখেছেন, ছেলেটি বাইসাইকেলসহ রোডের নিচের দিকে দ্রুত পড়ে যায়। অটোরিকশাচালক ভাবলেন, হয়তো ছেলেটির এক্সিডেন্ট হয়েছে। (অটোরিকশাচালকের সাথে শুধু একজন যাত্রী ছিলেন) অটোরিকশা থামিয়ে রেখে তারা ছেলেটিকে বাঁচাতে রোডের নিচে নামলেন, দেখতে পেলেন বাইসাইকেলটি পানিতে এবং জুতাজোড়া শুকনো স্থানে পড়ে আছে। বাইসাইকেল আছে জুতাও আছে, তবে ছেলেটি নেই, তারা তো অবাক! চোখের পলকে ছেলেটি গেল কোথায়? নাকি ডুবে গেল (চারদিকে বর্ষার পানি)! বাইসাইকেলটিও ছোট, ছেলেটিও ছোট, তেমন বড় হবে না। হয়তো সাঁতার জানে না, পানিতে ডুবে গেছে।
ঘটনাটি শোনার পর সেখানে যাওয়ার আগ্রহ জাগল। নামাজের সময়ও হয়ে যাচ্ছে, নামাজ শেষে মুসল্লি ও ইমাম সাহেবসহ সেখানে গেলাম। ছেলেটিকে খুঁজে বের করার জন্য, অনেক লোক পানিতে ডুব দিচ্ছেন সন্ধ্যা থেকেই। তারা ডুবতে ডুবতে হয়রান হয়ে গেছেন। ছেলেটিকে তো পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ জিন-ভূতের কাহিনী বলা শুরু করলেন, জায়গাটি নাকি আগে অনেক ভয়ঙ্কর ছিল, মাথা ছাড়া মানুষ দেখা যেত। বর্ষাকালে এ দিকে নৌকা নিয়ে এলে, নৌকাটি অযথাই ডুবে যেত। এক লোক এখানে রহস্যজনকভাবে মারাও গেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, ‘অটোরিকশাওয়ালা অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। মনে হয়, শিশু ছেলেটি মারা গেছে। তাই শিশু ছেলেটির লাশ লুকিয়ে রেখেছে, নিজেকে বাঁচানোর ল্যাগা।’ এক লোক বললেন, ‘জুতাজোড়া তো দেখা যাইতাছে, বড় মানুষের জুতা, হয়তো কোনো বড় মানুষ অইব।’ আরেক লোক বললেন, ‘এত ছোট সাইকেলটি তো বড় মানুষ চালাতে আহে নাই।’
আবার কেউ বলছেন, ‘ছেলেটারে সাইকেলসহ রোডের নিচে পড়তে দেখলাম, চোখের পলকে শিশু ছেলেটি যাইব কই? নিশ্চয় ছেলেটি পানিতে ডুবে গেছে।’
অবশেষে পুলিশ এলো, এলো সাংবাদিক, ঘটনাটি শুনে তারা অবাক! অটোরিকশাচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, রহস্য তো খুঁজে পাচ্ছেন না। কেউ সন্তানের খুঁজেও আসছেন না। মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। ঠিক এ সময়ে এক লোক এলেন, বাইসাইকেলটি দেখে চিনতে পারলেন, তার ভাতিজার বাইসাইকেল। লোকটি তো ঘটনাটা শুনে অবাক! লোকটি বললেন, ‘ভাতিজার আবার কিছু হলো নাকি?’
বাড়িতে ফোন দিয়ে জানলেন, ভাতিজা বাড়িতেই আছে, তবে বাইসাইকেলটি চুরি হয়েছে সন্ধ্যার দিকে। তাহলে চোর কে? অটোরিকশাচালক বলছেন, ‘১০ থেকে ১১ বছরের এক ছেলে অইব, শুধু চেহারাটা খেয়াল করতে পারি নাই, তবে জুতা তো দ্যাহা যায় বড় মানুষের জুতার মতো, হয়তো ওর বাপ-দাদার জুতা পইরা আইছে।’
কোনো রহস্য খুঁজে পেলেন না। পুলিশ ও সাংবাদিক বড় চিন্তিত। আরেক লোক এসে বললেন, ‘আমি টঙ্গীবাড়ি যাওয়ার সময় সন্ধ্যার দিকে সড়ক দিয়া যাইতে দেখলাম ১০ থেকে ১১ বচ্ছরের একটি ছেলে ভেজা শরীরে ওদের বাড়ির দিকে। আমার মনে হয় ওই ছেলেটাই অইব।’
লোকটি বাড়িটি দেখিয়ে দিলেন।
ক’জন লোক বাড়িতে গিয়ে দেখলেন, ভেজা পোশাক বাইরে শুকাতে দিয়েছে। এই পোশাকই ছিল ছেলেটি। শিশু ছেলেটিকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ ও জেরা করতে লাগলেন। ছেলেটির কথায় ছেলেটি ধরা পড়ে যায়। তাহলে, এই ছেলেটিই বাইসাইকেলটি চুরি করেছিল।
অবশেষে জানতে পারলাম, বাইসাইকেলটি ব্রিজের নিচে পানিতে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিল, তবে বিক্রি করার ইচ্ছে ছিল না। ছেলেটির স্বভাব কোনো কিছু চুরি করে লুকিয়ে রাখা। এর আগেও অনেকের অনেক কিছু চুরি করে লুকিয়ে রেখেছিল।
যা হোক, এখন প্রশ্ন হলো- চারদিকে পানির মধ্যে চোখের পলকে ছেলেটি কীভাবে পালিয়ে চলে গেল? জবাবে জানতে পারলাম, ছেলেটি যখন বাইসাইকেল নিয়ে দ্রুত রোডের নিচে নামল, রোডের নিচে লোক আসছে সঙ্কেত পেয়ে, ছেলেটি তখন ডুব দিয়ে ব্রিজের অপর পাশ দিয়ে রোডে ওঠে এসে বাড়িতে চলে আসে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা