২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জীবনের পরিবর্তন

জীবনের পরিবর্তন -

যে দিন আমি প্রথম স্কুলে যাই, তিনটি বই ও খাতা-কলমের একটা ব্যাগ মা আমার কাঁধে তুলে দিয়েছিলেন। আব্বা হাত ধরে স্কুল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন। প্রাইমারির দিনগুলো আমার খুব আনন্দেই কেটেছে। টিফিনটাইম হলেই পেতাম এক প্যাকেট বিস্কুট! তারপর কত্তোরকম খেলা! ক্লাস থ্রিতে যখন উঠি; আমার মনে বিরাট পরিবর্তন আসে। আমি স্কুল ছেড়ে মাদরাসায় চলে আসি। ওই শিশু বয়সেই যখন আমি জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিলাম; মা-আব্বা কেউ আমাকে বাধা দেননি। উল্টো তাঁরা খুশি হয়েছেন। একে নিজেদের ইহ ও পরকালীন সৌভাগ্যের কারণ ভেবেছেন।
এরপর যখন একটু বড় হলাম, গ্রামের মাদরাসা থেকে জেলাশহর; সেখান থেকে রাজধানী এলাম। সময় বয়ে চলল। আমিও ক্লাসের পর ক্লাস উতরিয়ে সামনে চললাম। এরই মধ্যে কত কি ঘটে গেল! এক বোর্ড পরীক্ষার আগের দিন খবর পেলাম দাদী মারা গেছেন! পরীক্ষা ফেলে আসতে পারলাম না দাদীকে শেষবারের মতো দেখতে! গত ছুটিতে বাড়ি গিয়ে খেয়াল করলাম, আমাদের সেই লাল বকনা বাছুরটা এখন বৃদ্ধ গাভী হয়ে গেছে। ঘরের পেছনের আমগাছের চারাটা এখন ঝাকড়া হয়ে কালো মেঘের মতো টিনের চাল ছেয়ে নিয়েছে। আব্বার চুলদাড়িতে পড়ন্তের দ্যুতি পরিস্ফুটিত হয়েছে। আমার সেই কচিমুখে কুচকুচে দাড়ি উঠেছে।
আমি শৈশব থেকে তারুণ্যে উত্তীর্ণ হয়েছি। একাডেমিক লেখাপড়ার পাঠও আমার চুকে এসেছে।
গতকাল আমার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এটাই ছিল আমার শিক্ষাজীবনের শেষ পরীক্ষা। আমি বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিলাম। ফোন দিয়ে মাকে জানিয়ে রওনা হলাম। আমি যেদিন গাড়িতে থাকি মায়ের খাওয়া-ঘুম সে দিন আর হয় না। সেই প্রথম যেদিন ঢাকা আসি সেদিন যেমন ছিল আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
প্রতিবার দেখেছি, আমি বাড়ি পৌঁছার সম্ভাব্যসময় ধরে মা গরম গরম রান্না করে রেখেছেন। তারপর আমার পৌঁছতে একটু দেরি হলেই ঘরবারান্দা ও বারান্দাঘর ঘুরে ঘুরে মা উদ্বিগ্ন হয়েছেন। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটেছে এবার আমার জীবনে।
এতদিন বাড়ি যেতাম আমার কাঁধে থাকত দুয়েকটা পাঠ্যবই, প্রয়োজনীয় কয়েকটা কাপড় ও হাতখরচ থেকে বাঁচানো টাকায় কেনা মা-আব্বার জন্য সামান্য উপহার। কিন্তু আজ এই যাত্রায় আমার কাঁধে উঠেছে দায়িত্ব আর সংগ্রামম্খুী ভবিষ্যতের ভার!

 


আরো সংবাদ



premium cement