একটি বিরিয়ানির প্যাকেট
- রুহুল আমিন রাকিব
- ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০, আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:৫৬
হুমায়রাকে সাথে নিয়ে সে দিন বিকেলে উলিপুর গেছি। হুমায়রা আমার একমাত্র ভাতিজি। ছোট ভাইয়ের মেয়ে বয়স মাত্র পাঁচ বছর চলছে। হাসিখুশি একটি মেয়ে। বাড়িজুড়ে সবার আদরের মধ্যমণি।
যখন যা বায়না ধরে সাথে সাথে কাছে চাই। হুমায়রার সব থেকে বড় গুণ চোখের সামনে যা দেখবে পই পই করে জানতে চাইবে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেই চলবে। জানার ও শেখার আগ্রহ আমাকে মুগ্ধ করে। এতটুকু বয়সে মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও আচার ব্যবহার দেখে গর্বে বুক ভরে।
আজ প্রথম উলিপুর শহরে যাবে হুমায়রা। সেই খুশিতে বাড়িজুড়ে তা-ধিন তা-ধিন করে নেচে চলছে। আমাকে শার্ট প্যান্ট পরা দেখেই নিজেও তৈরি হলো। আম্মুর কাছে বায়না ধরে হলুদ কালারের জামা পরল। আমার কাছে এসে বলল, বড় আব্বু দেখো না। আমি আজ হলুদ পরী সেজেছি। আমিও বললাম জি, আমার লক্ষ্মী মামণিটা আজ ঠিক হলুদ পরী সেজেছে। অটোরিকশায় চড়ে আমরা চলছি উলিপুর শহর ঘুরে দেখতে। রাস্তায় কত কিছু দেখছে হুমায়রা। চোখে মুখে হাসির ঝিলিক খেলা করছে। বড় বড় বাস গাড়ি দেখে বলল, আমাকেও এমন বড় একটা গাড়ি কিনে দেবে কিন্তু শহর থেকে।
দেখতে দেখতে উলিপুর শহরে চলে এলাম। রিকশা থেকে নেমে ঘুরে দেখলাম শহরের বিভিন্ন মার্কেট।
এক সময় একটি হোটেলে ঢুকলাম খাবার খেতে। হুমায়রা বিরিয়ানি খেতে ভীষণ পছন্দ করে। দুই প্লেট অর্ডার করলাম। খাবারে হাত দেয়ার আগে হুমায়রা আমাকে স্মরণ করিয়ে বলল। আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। নানা রকম জীবাণু মিশে আছে আমাদের হাতে-মুখে। চলো বড় আব্বু সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে নেই। পরিষ্কার হয়ে খাবার খাওয়া শেষে হুমায়রা বাড়ি নিয়ে আসার জন্য এক প্যাকেট বিরিয়ানি কিনল। হোটেল থেকে বেরিয়ে পাশ ফিরে উত্তর দিকে তাকাতেই হুমায়রার চোখ পড়ল একটি মহিলা ও তার ছোট একটি শিশুর প্রতি। হোটেলের ফেলে দেয়া পচা-বাসি খাবারগুলো গপ গপ করে খাচ্ছে মা ও শিশুটি। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে আজ কত দিন ধরে তারা খাবার খায় না! হুমায়রা আমার আঙুুল ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে তাদের কাছে চলে। পাশে গিয়ে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দেয়। নিজের হাতে থাকা বিরিয়ানির প্যাকেট। অশ্রুসজল চোখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মা ও শিশুটি। হুমায়রা মহিলাটির চোখের পানিগুলো আপন হাতে মুছে দেয়ার চেষ্টা করে। এবার ওই মহিলা কান্নামাখা কণ্ঠে বলতে লাগল, আজ কয়েক দিন ধরে তার শিশুটি বিরিয়ানি খাওয়ার বায়না ধরেছে। গরিব মানুষ, ওর বাবা বেঁচে নেই। খাস জমিতে কোনোরকমে একচালা টিনের ঘরে বসবাস করে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কখনো বা ভিক্ষা করে সংসার চালায়। বিরিয়ানি খাওয়ার মতো টাকা জোটে না। বিভিন্ন হোটেলের বারান্দায় ঘুরে ঘুরেও এক মুঠো বিরিয়ানি পায়নি কারো কাছে। তাই আজ বাধ্য হয়ে মেয়েকে নিয়ে এই পচা-বাসি খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছি।’ হুমায়রা মহিলাকে বলল, চাচী এসব খাবার খেলে শরীরে নানান রকম অসুখ বাসা বাঁধে। এসব খাবার খাওয়া একদম ঠিক না। মহিলা হুমায়রার কথার তালে তালে মাথা নাড়ায়। ছোট শিশুটি বিরিয়ানির প্যাকেটটি হাতে নিয়ে মুখে তৃপ্তির হাসি এনে হুমায়রাকে বলল, তোমাকেও তোমার বড় আব্বুকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। হুমায়রার এমন সুন্দর ব্যবহার দেখে আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম। আল্লাহ যেন নেক হায়াত দান করেন, বাকি জীবনেও যেন এমনভাবে সবার পাশে দাঁড়াতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা