ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল থেকে কবে রেহাই মিলবে!
- ইমরান ইমন
- ১৮ আগস্ট ২০২০, ০২:৫৫
মহামারী করোনাভাইরাসের থাবায় এক দিকে যেমন বিপর্যস্ত মানুষের জীবন-জীবিকা, অন্য দিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আবার এর ওপর সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল। মোটা দাগে যাকে বলে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
বিদ্যুৎ বিভাগ ইউনিটের চেয়ে অতিরিক্ত বিল করে এটি কমবেশি গ্রাহকের নিত্য অভিযোগ বিষয়বস্তু ছিল। করোনাকালীন সময়ে এ অভিযোগের পাল্লা আরো ভারী হয়ে উঠেছে। মূলত করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লাইন ধরে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধকে নিরুৎসাহিত করে বিদ্যুৎ বিভাগ ফেব্র“য়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিলে বিলম্ব মাসুল মওকুফ করলেও ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়াসহ সব বিল পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে; অন্যথায় জরিমানা, সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে আশঙ্কায় বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা।
দেশের এই মহাদুর্যোগে বিদ্যুৎ বিভাগের এমন অমানবিক, নিষ্ঠুর ও লোভাতুর আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। অনেক বাসাবাড়িতে অকল্পনীয়, অস্বাভাবিক বাড়তি বিদ্যুৎ বিল এসেছে।
এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে তাদের মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি যেতে পারেননি, তাই গড় হিসাব করে বিল দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে প্রতি মাসের বিলই বেড়ে যাবে কেন? আর যদি তাদের মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতি মাসের বিলের মিটার চেক করতে না পারেন, সে দায় কি গ্রাহকের?
অনুমান করে কি বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত করা যায়!
করোনা মহামারীর মধ্যে গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল চাপিয়ে দেয়া নিয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়Ñ ‘ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল সমস্যার সমাধান হবে, জুলাই থেকে রিডিং দেখে বিদ্যুৎ বিল করা হবে।’ তা ছাড়া অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল ক্রমেই সমন্বয় করা হবে। কিন্তু দুর্ভোগের বিষয় হলো বিতরণ কোম্পানিগুলো এখনো অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল করার প্রবণতা থেকে বের হতে পারেননি। এখনো বন্ধ হয়নি তাদের ‘পুকুর চুরি’। জুলাই মাসেও অনেক গ্রাহকের স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক গুণ বেশি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল এসেছে। জুলাই মাসে আমার নিজের বাসার বিলও স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি এসেছে।
সরকারের সাথে একটি নির্দিষ্ট চুক্তির ভিত্তিতে বিতরণ কোম্পানিগুলো কাজ করে থাকে এবং একটা অর্থবছর ঘিরে তাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকে। অর্থবছরের শেষ দিকে এসে কোম্পানিগুলো নিজেদের ঘাটতি মেটাতে গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল চাপিয়ে দেয়। হয়রানির আশঙ্কা থেকে অনেক গ্রাহক এ নিয়ে আপত্তি করতে সাহস করেন না। ফলে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল করে ওই সব কোম্পানি জনসাধারণের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। যেটা খুবই অমানবিক ও বেআইনি। করোনা সঙ্কটকালে এ প্রতারণা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।
স্বাভাবিক সময়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের সমস্যা সমাধানে গ্রাহকরা অফিসে ছোটাছুটি করতে পারেন। কিন্তু এই করোনা মহামারী সময়টাতে যা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও কঠিন। এমনিতেই করোনার তাণ্ডবে মানুষের আয়-রোজগার তথা জীবন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, তার ওপর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বোঝা চাপিয়ে দেয়া মোটা দাগে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
এই দুঃসময়ে দেশের জনসাধারণের সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের এমন প্রতারণা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিদ্যমান এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আপনারা বিষয়টি অতি দ্রুত সমাধান করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিরসন করুন। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected].
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা