০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

অন্যায়কে রুখতে হবে

-

‘এইটা একটা বিশ্ববিদ্যালয়? আর আমিও একজন শিক্ষক? ছি: ছি: ছি:...’। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার, সে বিশ্ববিদ্যালয় কেন বিশ্বের এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নেই, তা নিয়ে আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবীর কতই না মায়াকান্না! ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত বুয়েট ছাত্র আবরারের কথা আমাদের স্মৃতিতে এখনো তরতাজা।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত বলে পেটানো হয়েছে ভিপি নুর ও তার সঙ্গীদের। বহিরাগত থাকলেই হামলা করা, ছাদ থেকে ফেলে দেয়া বৈধ? আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো নয় কি? তাহলে ছাত্রলীগ কেন বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসুতে মারামারি করল! ক্যাম্পাসে কি কখনো বহিরাগত আসে না? শুধুই আসা-যাওয়া নয়, ছাত্রহলগুলোতে বহিরাগতরা তো সব সময়ই থাকছে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের ‘অতিথি’ হিসেবে। বুয়েটের ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলেও আরো ২০ ছাত্রের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। তারা সবাই মেধাবী ছিল। এই মেধাবী ছাত্ররা রাজনীতির ছত্রছায়ায় এসে এক সময় দানবে পরিণত হয়েছে। এসব মেধাবী ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় দানবে পরিণত হচ্ছে, তা চিহ্নিত করে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করা দরকার।
নুরুল হক ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাকে নির্বাচিত করে নেতা বানিয়েছেন। নুরের কার্যালয়ে আলো নিভিয়ে (নিজেদের আড়াল করতে) যেভাবে হামলা করা হয়েছে, যা সভ্য সমাজে অচিন্তনীয়। এমনকি হামলাকারীদের নির্দয় আঘাতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের এক নেতাকে লাইফ সাপোর্টে পর্যন্ত নিতে হয়। একজন নির্বাচিত ভিপির ওপর দাঙ্গাবাজি কায়দায় বারবার এবং প্রকাশ্যে হামলা? ঢাকার বাইরেও আক্রমণের শিকার হয়েছেন তিনি। এভাবে বারবার প্রাণঘাতী হামলা হচ্ছে অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ কিংবা সরকার তাকে ক্যাম্পাসে কিংবা বাইরে ন্যূনতম নিরাপত্তাও দিতে পারছে না? প্রশাসন এবং ছাত্রলীগ থেকে বলা হয়েছে, সেখানে ডাকসু ভবনে নুরের সাথে বহিরাগতরা ছিল। নুর তা স্বীকার করেই বলছেন, তিনি অনিরাপত্তাজনিত কারণে একা চলাফেরা করেন না। যদি প্রশাসন বহিরাগত বিষয়টিকেই জোর দেয় তাহলে প্রশ্ন, নুরের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসন কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল?
হামলার প্রতিবাদে চরম ব্যথিত ও মর্মাহত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদি নিজের ফেসবুক পেজে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন।
‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ সংগঠনটির কর্মী পরিচয়ে এর আগেও নুরুলসহ একাধিক ছাত্রনেতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাদের খুঁটির জোর কোথায়? হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারা জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের সংগঠনের নেতারা নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার কথা নয়, কিন্তু তারা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নাম দিয়ে কেউ এ ধরনের কাজ করলে তা সমর্থনযোগ্য নয়।
ডাকসু ভবনে হামলার নেতৃত্ব দেয়া মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দায়িত্ব এখন কেউই নিতে চাইছেন না। সবাই এখন এই সংগঠনের সাথে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার পাশ কাটাতে চাইছেন। কারা এই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ চালাচ্ছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশিষ্টজন বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের নাম নিয়ে যারা এ ধরনের হামলা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন, তারা কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কেউ হতে পারেন না। এ হামলার ব্যাপারে তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট অবস্থানও দাবি করেন। মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের হৃদয়ে মিশে আছে। এর সম্মান আকাশসম। যারা মুক্তিযুদ্ধের নাম ব্যবহার করে সন্ত্রাসী করে, তারা আর যেই হোক দেশপ্রেমিক হতে পারেন না।
ভিপি নুরকে এভাবে বারবার পিটিয়ে আর লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ আরো তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। এখন তিনি সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সহানুভূতি পাচ্ছেন। চলনে-বলনে ফ্যাশনেবল না হয়েও নুর তার সাধারণ স্বাভাবিকতা নিয়ে তাদের কাছে চলে যেতে পেরেছেন, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণ। একদল ছেলেমেয়ের মনের জোরে ভর করে নুর আজ বড় ছাত্রনেতা। গত কয়েক বছরে যে নির্দলীয় ছাত্র অধিকার আন্দোলন চলে আসছে, তার শেকড় অবশ্যই সমাজের গভীরে। নুর ব্যক্তি হিসেবে কে! কী! কেমন? তার চেয়ে বড় কথা তিনি যাদের প্রতিনিধিত্ব করেন, তারা বিরাট, বিপুল ও সংগ্রামী মনোভাবসম্পন্ন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সরকারের সব অর্জন ধুলায় মিশিয়ে দিতে ছাত্রলীগ একাই যথেষ্ট। আমরা উগ্রতা বা সন্ত্রাসের জায়গায় বারবার ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনকে দেখেছি। তারা কেন এটা করে? ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনটির বেপরোয়া হতে এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে! ভুলে গেলে চলবে না, ঢাকার রাজপথে দর্জি যুবক খুন হওয়ার ঘটনার দায়ও ছাত্রলীগের। বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের কথাবার্তায় বোঝা যায়, তারা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। ছাত্রলীগ কি তাহলে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে? পেশিশক্তি ব্যবহার করে সব নিয়ন্ত্রণের এই সহিংস পথ যেকোনো সময় চরম অরাজকতার কারণ হতে পারে। সংশ্লিষ্টদের হুঁশ হওয়া জরুরি। যারা রক্ত ঝরাচ্ছে তারা যদি পরিস্থিতি অনুধাবন না করে আগামীর বাংলাদেশ তাদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। হ
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
শেখ হাসিনার কার্যক্রম নিয়ে দিল্লিকে প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশী জাহাজ ও ৯ বাংলাদেশী ক্রু আটক গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়ে যা বললেন কামাল আহমেদ গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মায়ের মৃত্যু, ৩ মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি তিউনিসিয়ার অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের বিচারের দাবিতে তাহিরপুরে স্মারকলিপি প্রদান সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ৫ ম্যুরাল ভাঙচুর নওগাঁ ভটভটি উল্টে নিহত ১ পাকুন্দিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে দিলো ছাত্ররা-জনতা রুবাইয়াত ও আলমগীরকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ শেখ হাসিনার বক্তব্যে আবারো উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল

সকল