কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া
- মো: এমদাদ উল্লাহ
- ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সুস্বাস্থ্যের জন্য জনপ্রতি আমাদের প্রতিদিন প্রায় ২৫০ গ্রাম শাকসবজি, ১২৫ গ্রাম ফল, প্রায় ৫০ গ্রাম প্রোটিন, ৩৫-৪০ গ্রাম শর্করা, ২৫-৩০ গ্রাম আঁশ, এক চা-চামচের নিচে আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া প্রয়োজন। অথচ আমরা প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ গ্রাম শাকসবজি, ৪০-৪৫ গ্রাম ফল, ১৫ গ্রাম শর্করা খেয়ে থাকি। খাদ্যের প্রাপ্যতা, প্রবেশাধিকার ও পুষ্টির সামগ্রিক রূপকে বলা হয় খাদ্যনিরাপত্তা। একটি দেশ, সমাজ বা পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি শুধু ভাতপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা, তথা চাল বা ধান উৎপাদনে কোনো দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনকে বিবেচনা করা হয় না, পুষ্টি সরবরাহকারী সব খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তাকেও বুঝিয়ে থাকে। খাদ্য নিরাপত্তা হলো এমন এক অবস্থা, যখন খাদ্যের যথেষ্ট মজুদ থাকবে, মানুষের কাছে সে খাদ্যের সহজপ্রাপ্যতা থাকবে এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সে খাদ্য পাওয়া যাবে। কাজেই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি এবং যথাযথ পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম শর্ত। প্রযুক্তির কারণে অনেক কারখানায় মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়াই তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের খাবার।
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষিব্যবস্থা। বীজতলা থেকে উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে রয়েছে প্রযুক্তি। যে লাঙল-জোয়াল আর হালের বলদ ছিল কৃষকের চাষাবাদের প্রধান উপকরণ, সে জায়গা এখন দখল করেছে ‘আধুনিক লাঙল’ ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, ব্রডকাস্ট সিডার পাওয়ার রিপার মেশিন ইত্যাদি। কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষাবাদের কারণে একদিকে যেমন সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে, তেমনি ফসলের উৎপাদনও বেড়েছে। ফলে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। কেবল জমি চাষই নয়, নিড়ানি ও সার দেয়া, কীটনাশক ছিটানো, ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো ও ধান থেকে চাল সবই আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে বর্তমানে দেশের আবাদি জমির ৯০-৯২ শতাংশ যান্ত্রিক প্রযুক্তিতে চাষ হচ্ছে। যদি চাষাবাদের সব পর্যায়ে অর্থাৎ জমি তৈরি থেকে শুরু করে চাল উৎপাদন পর্যন্ত পুরোপুরি আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় তাহলে রীতিমতো বিপ্লব ঘটবে কৃষিতে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম সংযোজনের একটি হচ্ছে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল কাটা, খোসা থেকে দানা আলাদা করা যায়। ছোট আকৃতির ধানি জমি চাষেও রয়েছে এর ব্যবহার। এ ছাড়া বীজ বপন, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটানোর জন্যও রয়েছে ব্রডকাস্ট সিডার। নির্দিষ্ট অবস্থানে বীজ বপনের জন্য আছে সিডড্রিল। জমির মাটি সমান করার জন্য ল্যান্ড লেভেলার, এক যন্ত্র দিয়ে একই সাথে চাষ ও বেড তৈরি এবং বীজ বপন করা যন্ত্র বেড প্লান্টার, আলু গ্রেডিং যন্ত্র, গবাদিপশুর জন্য খড় কাটার যন্ত্র, নন-টিপিং ট্রেইলর, টিপিং ট্রেইলর, ওয়াটার ট্যাঙ্ক, অয়েল ট্যাঙ্ক, আলু বপন যন্ত্র, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র, নিড়ানি যন্ত্র, ফুড পাম্প। জমির শক্ত মাটি কর্ষণে যন্ত্র, ধান কিংবা অন্যান্য ফসলি বীজ শুকানোর জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রায়ার যন্ত্র। ধান, গম, ভুট্টা শুকাতেও ব্যাচ ড্রায়ার নামক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়াও গম, ভুট্টাসহ শাকসবজি চাষে কৃষক হাইব্রিড জাতের বীজ ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিয়েছে। মাটির স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ রেখে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি এ ক্ষেত্রে কম্পোস্ট সার, ভার্মি-কম্পোস্ট এবং কুইক-কম্পোস্ট খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। তা ছাড়া কৃষকরা মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করছে। ফলে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা হচ্ছে। অনলাইন ফার্টিলাইজার সুপারিশসহ উপজেলা সার নির্দেশিকা প্রযুক্তিগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষিকর্মীর মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে। ফলে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে। সার ব্যবহারে গুটি ইউরিয়ার ব্যবহার, ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, এমওপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, এলসিসি প্রযুক্তিগুলো মাঠে খাদ্য উৎপাদনে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে। কৃষকরা সরকারের কৃষি কলসেন্টার ১৬১২৩ নাম্বারে কল করে কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারে। হ
লেখক : সাংবাদিক
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা