০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

ট্রাফিক বাতির সাতকাহন

-

লাল বাতি জ্বললে সড়কে গাড়িগুলোর চাকা বন্ধ হয়ে যায়। হলুদ বাতি জ্বলে এবার জ্বলল সবুজ বাতি, গাড়ি ছুটবে আবার আগের মতো। বিশ্বব্যাপী আধুনিক নগরগুলোতে এই ট্রাফিক বাতি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাফিক বাতি চালুর ঘটনা ছিল ওই সময়ের সাড়া জাগানো এক উদ্ভাবন। আবিষ্কারের ১০৫ বছরে পা দিলো বৈদ্যুতিক ট্রাফিক বাতি। ব্রিটিশ রেলওয়ে প্রকৌশলী জে পি নাইট ১৮৬৮ সালে শহরের রাস্তায় ট্রাফিক বাতি চালু করেন লন্ডনে, তখন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের সামনে শুরু করা হয়েছিল হাতে জ্বালানো-নেভানো গ্যাসে চালিত ট্রাফিক বাতি। তখনকার সেই ট্রাফিক বাতিগুলো ব্যবহার হতো ঘোড়ায় টানা গাড়ির চলাচল থামিয়ে পথচারীদের রাস্তা পারাপারের সুবিধার্থে। লন্ডনের সেই ট্রাফিক বাতিই আজকের বিশ্বজনীন বৈদ্যুতিক ট্রাফিক বাতির পূর্বসূরি। কিন্তু হাতে জ্বালানো-নেভানো গ্যাসে চলা ট্রাফিক বাতি ছিল বিপজ্জনক। লাল আর সবুজ লণ্ঠন দু’টি ধাতব হাতে নাড়াতেন রাস্তায় দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ। হাত নাড়ানোর পাশাপাশি লণ্ঠনগুলোও জ্বালাতে-নেভাতে হতো তাকে। উদ্ভাবনের এক বছর পার হতে না হতে গ্যাসে জ্বালানো লণ্ঠনের বিস্ফোরণে দায়িত্বরত পুলিশ গুরুতর আহত হলে বিপজ্জনক এই ট্রাফিক বাতি বন্ধ করে দেয়া হয়।
দেশ-বিদেশের মতো বাংলাদেশেও এখন বৈদ্যুতিক ট্রাফিক সিস্টেমে রাস্তায় চলা যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে এ ব্যবস্থাটি কতটুকু কার্যকর তা বলা মুশকিল। রাজধানী ঢাকার বিজয় সরণি উড়াল সেতুর তেজগাঁও ট্রাফিক সিগন্যাল প্রান্তে একটি লোহার স্ট্যান্ডে মোট আটটি বাতি থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র দু’টি। ঝুলন্ত অবস্থায় আছে আরো তিনটি বাতি। বাকি তিনটি বাতির স্থান ফাঁকা। একই চিত্র নগরীর ব্যস্ততম সড়ক মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল ও গুলিস্তানের। তবে কিছুটা ভিন্নচিত্রও চোখে পড়ে রাজধানীর বিভিন্ন সিগন্যাল পয়েন্টে দিনরাতই জ্বলছে বাতি। টাইম কাউন্টডাউন যন্ত্র থাকলেও নেই ব্যবহার।
ডিএসসিসির তথ্যসূত্রে জানা যায়, দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় যানজট নিরসনে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর ৬৫টি ট্রাফিক সিগন্যাল মোড়ে টাইম কাউন্টডাউন মেশিন বসানো হয়েছে। মেশিন বসানো হলেও যেখানে স্বয়ংক্রিয় সঙ্কেত বাতি ব্যবহার করা হচ্ছে না, সেখানে এ অর্থ খরচ করে টাইম কাউন্টডাউন মেশিন ব্যবহার হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে মস্তবড় জিজ্ঞাসা। তবে প্রকল্পটির পরিচালক শিহাব উল্লাহ বলেন, যানজটের কস্ট লাঘবেই ট্রাফিক লাইটের পাশাপাশি টাইম কাউন্টডাউন মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। নাগরিকদের মধ্যে আইন মানার অভ্যাস না এলে কোনো পদ্ধতিই কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কাওরান বাজারের সিগন্যাল পয়েন্টে দেখা যায়, সঙ্কেতের বাতিতে লাল আলো জ্বললেও এগিয়ে চলছে সারি সারি গাড়ি। অন্য দিকে, গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। গাড়ির চালক বা ট্রাফিক পুলিশ কেউই খেয়াল রাখছেন না সিগন্যাল বাতির দিকে। লাল, হলুদ, সবুজ যে বাতিই জ্বলুক না কেন; গাড়িচালকরা অপেক্ষায় আছেন কখন দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সদস্য হাত উঁচিয়ে সঙ্কেত দেবেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী প্রায় ১২ লাখ গাড়ি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে হাতের ইশারায়। ঢাকার যানজট নিরসনে সরকার একের পর এক ব্যয়বহুল প্রকল্প নিলেও সমন্বয়হীনতার অভাবে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ ছাড়া, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ প্রজেক্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাদে ঢাকার ৭০টি সিগন্যাল পয়েন্টে বাতির বিদ্যুৎ খরচ, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি বছর খরচ হয় ৮০ লাখ টাকা; যা সিটি করপোরেশনকে বহন করতে হয়। অথচ এই ৮০ লাখ টাকার কোনো সুফলই পাচ্ছেন না নগরবাসী, বরং রাজধানীর যানজট দিন দিন অসহনীয় মাত্রায় বেড়েই চলেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুসারে, যানজট নিরসনে রাজধানীর রাস্তায় ব্যাপকভাবে শুরু হয় ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন। ২০০১-২০০২ অর্থবছরে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে ‘ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের আওতায় ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর ৫৯টি সড়কের ৭০টি মোড়ে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়। এর মধ্যে রাজধানীর ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগে ৩৪টি, পূর্ব বিভাগে ১২টি, উত্তরে ১১টি ও পশ্চিমে ১৩টি ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে। ২০০৯ সালে বিশ^ব্যাংকের ঋণসহায়তায় ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট কেস প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট ১০০টি স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সঙ্কেত স্থাপন করা হয়। ট্রাফিক বাতির ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভিজ্ঞতা, অর্থ ও দক্ষতার অভাবে এসবের সুফল পাননি রাজধানীবাসী। অল্প দিনের মধ্যেই শিথিল হয়ে যায় সেগুলো এবং আবার শুরু করা হয় হাতের ইশারায় নিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক ব্যবস্থা।
রাজধানীর যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে ২০১৫ সালের ১৭ মে পরীক্ষামূলক কাকলি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ১১টি পয়েন্টে অটোসিগন্যালও চালু করা হয়। তবে যানজটের শঙ্কায় চালুর পরপরই এগুলোর ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৮ সালের শুরুতে নতুন করে হাতে নেয়া হয় আরো একটি প্রকল্প। এতে আগের মতো যন্ত্রনির্ভর না হয়ে যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা ট্রাফিক পুলিশের হাতে রাখার কথা বলা হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও কার্যকর না থাকায় কোনো সুবিধাই পাচ্ছে না রাজধানীবাসী। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল যুবায়ের সালেহীন বলেছেন, আধুনিকায়নের সর্বশেষ প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে গত মার্চে। কিন্তু আমরা এখনো আমাদের ইন্টারসেকশনগুলো বুঝে পাইনি। দায়িত্ব বুঝে না পাওয়ায় এখনো উত্তরের সিগন্যাল বাতিগুলো সেভাবে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
সনধঢ়ঢ়ু২৪৭@মসধরষ.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement
মির্জাপুরে ছিনতাই হওয়া ট্রাকসহ ১২ হাজার লিটার সয়াবিন উদ্ধার নবীনগরে তিতাস নদীতে ট্রলার ডুবিতে নিহত ১ বগুড়ায় ইজিবাইকচাপায় ভাই-বোন হতাহত একুশে পদকের জন্য মনোনীত ১৪ ব্যক্তি ও নারী ফুটবল দল চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো পাকিস্তান থেকে চিটাগুড় আমদানি করছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে বিপদে অস্ট্রেলিয়া সিংগাইর থানার ফেসবুক আইডিতে শেখ হাসিনার বক্তব্য শেয়ার, দুঃখ প্রকাশ এলজিইডি ক্রিম-ক্রিলিকের কেএফডব্লিউ রিভিউ মিশন সম্পন্ন সিলেটে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারের পাশে জামায়াত মোংলায় ভেঙে দেয়া হলো শেখ মুজিবের ম্যুরাল

সকল