০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

খাদ্যের মান ও দাম

-

সমাজ ও রাষ্ট্রে সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নাগরিকের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পাওয়ার অধিকার মৌলিক ও সাংবিধানিক। খাদ্যের মান রক্ষা এবং তদারকি করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। সমাজে বিভিন্ন পেশা ও শ্রমের মানুষের বসবাস। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ জীবিকার সন্ধানে বাসাবাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। অফিস আদালত কোর্ট-কাচারিতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের কর্মব্যস্ততা থাকে। ফলে এসব কর্মময় মানুষ জীবন ধারণের তাড়নায় রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে থাকেন। খাবারের টঙ দোকান থেকে শুরু করে আভিজাত রেস্টুরেন্ট যেখানে হোক না কেন, প্রয়োজনে ওই সব স্থানে খাবার খেতে আমাদের যেতে হয়। কিন্তু এসব খাদ্য রেস্টুরেন্টের খাদ্য তৈরি, পরিবেশন, দাম এবং মান নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। পচা-বাসি খাবার থেকে শুরু করে একেবারে নিম্নমানের মেয়াদোত্তীর্ণ পোড়া তেল ব্যবহার করে এসব খাদ্য রান্না করে খাওয়াতে দেখা যায়। উপরে চাকচিক্য রেস্টুরেন্টের নামদাম থাকলেও ভেতরে ভেজালে ভরপুর। পোড়া তেল আর নিম্নমানের আটা-ময়দা দিয়ে তেলে ভাজা ফাস্টফুড ছাত্র থেকে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে চড়া দামে খাওয়ানো হয়। এসব নাশতার আইটেমের নামে ভিন্নতা হলেও দামের মধ্যে চড়া পার্থক্য দেখা যায়। গরু, মুরগি, খাসির গোশতের মধ্যে ভেজাল লক্ষ করা যায়। চড়া দামে খেতে হয় ক্রেতাদের। ফার্মের মুরগি কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে হলেও রেস্তোরাঁয় ছোট আকারের দুই টুকরো মুরগির গোশত সাধারণ রেস্টুরেন্টে দাম নেয়া হয় ১০০ টাকা। আর দেশী মুরগি হলে মূূল্য বেড়ে হবে ২০০ টাকা। গরুর গোশতের কথা বলে মহিষের গোশতের বিক্রির নজির অহরহ। সে ক্ষেত্রে মাত্র ছোট ছয় টুকরো গরুর গোশতের দাম পড়ে ১৫০ টাকা। এভাবে অন্যান্য যেসব খাবার রেস্টুরেন্টে পরিবেশন করা হয়, সবগুলোর দাম প্রায় তিনগুণ বলা যায়।
একটি রেস্টুরেন্টের খাদ্য আইটেমের মূূল্যতালিকার সাথে আরেক রেস্তোরাঁর মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। ইচ্ছেমতো দাম হাঁকিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটা হয়। মাছ, গোশত পরিবেশনে ভেজাল কারচুপি তো দৃশ্যমান বিষয়। একজন সাধারণ মানুষ একটি সাধারণ খাদ্য রেস্টুরেন্টে কমপক্ষে সাধারণভাবে খেলেও তার এক থেকে দেড় শ’ টাকা খরচ হয়। এভাবে রেস্টুরেন্টে পচা-বাসি খাবারের সাথে যে পরিমাণ দাম হাতিয়ে নেয় হচ্ছে; তা যেন দিব্যি চোখ বুজে আমরা গ্রহণ করে যাচ্ছি। শ্রমজীবী, পেশাজীবী থেকে ভিআইপি খদ্দেরও এসব রেস্টুরেন্ট অথবা ফাস্টফুডের দোকানে খাবার খেয়ে থাকেন। কিন্তু এসব খাবারের মান আর মূল্য নিয়ে কারো বাদ প্রতিবাদ নেই বললেই চলে। যা রেস্তোরাঁ মালিকেরা চান তাই দিয়ে খদ্দের বেরিয়ে যান। কেন এত দাম নেয়া হয়, একবারের জন্য কোনো গ্রাহক বলতে দেখা যায় না। যারা নিয়মিত রেস্টুরেন্টে খেয়ে জীবন-জীবিকার সন্ধান করেছেন, তাদের জন্য এ মূল্য অনেক কঠিন ও কষ্টকর। কিন্তু যারা মাঝে মধ্যে রেস্টুরেন্টে খাবার খান, তাদের কথা আলাদা। এসব রেস্তোরাঁয় মাত্রাতিরিক্ত মূল্য নিয়ে খদ্দেরের পকেট কাটা কোনো অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না। এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে প্রশাসনের দেখা দরকার।
শুধু রেস্তোরাঁর কথা কেন? হাট-বাজারের কথাও চিন্তা করতে হবে। মুদি থেকে ওষুধের দোকান পর্যন্ত কেউই ন্যায্য দামে ব্যবসা করছেন না। একই চাল পাশাপাশি দু’টি দোকানে আলাদা আলাদা দামে বিক্রি হয়। এক দোকানে একই চালের বস্তা এক হাজার ৮০০ টাকা হলে পাশের দোকানে তা দুই হাজার টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। মূল্যহীন প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্য ছাড়া অন্যান্য খাদ্যপণ্য এভাবে ইচ্ছেমতো দাম দিয়ে বিক্রি করতে অনেক হাট-বাজার-দোকানে-মার্কেটে দেখা যায়। এদিকে সারা দেশে এখন পেঁয়াজের মহামারী চলছে। পত্রিকার সংবাদে প্রকাশ, প্রতিদিন দেশে টনে টনে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু পেঁয়াজ গ্রাহকের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। লেখাটি যখন লিখছিলাম তখন পেঁয়াজের খুচরা বাজারে মূল্য ছিল কেজি ১৬০ টাকা। প্রশ্ন জাগে, আসলে কোন জায়গায় পেঁয়াজের সঙ্কট; সেটা ভোক্তারা বুঝে নিতে পারছেন না। পেঁয়াজসহ খাদ্যদ্রব্যের বাজার আসলে কারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাও খুঁজে পাচ্ছেন না ভোক্তারা। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement