ক্রিকেটারদের ধর্মঘট
- মোহাম্মদ আবু নোমান
- ২৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
আলোচনার টেবিলে যেকোনো সমস্যার সমাধান হওয়াই সবচেয়ে সম্মানের। আন্দোলন, আলটিমেটাম বা বিদ্রোহ করেও দাবি আদায় করা যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট ক্রিকেটাররা। অবশেষে তারা এক হয়ে তুলে ধরেন ১১ দফা। দাবি না মানা পর্যন্ত দেশ-বিদেশের সব ক্রিকেটীয় কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার কর্মসূচি দেন। এ ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয় ক্রিকেট বিশ্বে। অনিশ্চয়তায় পড়ে বাংলাদেশের ভারত সফর ও চলমান জাতীয় লিগ।
বিসিবির বিভিন্ন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে ইতঃপূর্বে ক্রিকেটারেরা কথা বলেছেন, এতে নানা পর্যায়ে তাদের শাস্তিও হয়েছে। সাকিব এর আগেও অনেক অনিয়ম নিয়ে, তামিম পিচ নিয়ে, মুশফিক টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। তারা কিন্তু ভুল বলেননি, তবুও অধিনায়কত্ব হারানোসহ তাদের শাস্তি পেতে হয়েছে। বিসিবি যদি মনে করে, ক্রিকেটারদের কথা শোনার বা ভাবার সময় তাদের নেই। তাহলে কুম্ভকর্ণ বিসিবির ঘুম ভাঙাতে সাকিবদের এ রকম একটি ঝাঁকুনি দেয়া ছাড়া আর কী করার ছিল? ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান বিসিবি সভাপতি। সমস্যা সমাধানের সুযোগ না দিয়ে ধর্মঘটকে ‘ষড়যন্ত্রের অংশ’ অ্যাখ্যা দেন নাজমুল হাসান পাপন। এটি অস্বীকারের উপায় নেই, ক্রিকেট দিয়ে বিশ্বব্যাপী দেশের যেমন অর্জন রয়েছে, তেমনি সুনামও রয়েছে। তাই বিসিবিকে এ নীতি ছাড়তে হবেÑ ‘দেয়ার বেলায় ঠন ঠন, নেয়ার বেলায় টন টন!’ এর বাইরে ক্রিকেটারদেরও বুঝতে হবেÑ বর্তমানে তারা যতটুকু আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করছেন, বিপরীতে তাদের পারফরম্যান্সের গতি কতটুকু? বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট অনুসারে দাবিগুলো উপস্থাপনের ব্যাপারে ক্রিকেটারদের আরো দায়িত্বশীল ও দেশাত্মবোধ দেখানো উচিত।
দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে ১৫-২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করে আজো সরকারি কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। এসব শিক্ষক ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এর বাইরে এদেরও অসুখ-বিসুখ হয়, আছে আত্মীয়স্বজনও। ভাবা যায়, তারা কেমন আছেন? কিভাবে চলছেন? তারা আমাদের ‘সম্মানিত শিক্ষক’, যারা নন-এমপিও। ক্রিকেট খেলোয়াড়রা কি দেখেন না, এসব নন-এমপিও শিক্ষক, এমনকি নারীরা দুধের শিশু নিয়েও বেতনের দাবিতে রোদ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে, খোলা আকাশের নিচে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন। শিক্ষাদানের মতো মহৎ পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা এখনো এমন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সেখানে সাকিব-তামিমদের বঞ্চনা কতটুকু? ক্রিকেটারদের দাবিগুলো যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য। তাদের সুবিধা বাড়ুক, ক্রিকেটেরও উন্নতি হোক। কিন্তু ক্রিকেটীয় কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার কর্মসূচি না দিয়ে দাবিগুলো বোর্ডের কাছে আগে পেশ করলেই বোধহয় ভালো হতো।
বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটপাগল। শুধু খেলার বদৌলতে বিসিবির আর্থিক সচ্ছলতা বা খেলোয়াড়দের বিশ্বব্যাপী পরিচিতি হলে, খেলার যেকোনো ফরমেটের র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ দুই-চারে থাকার কথা। ক্রিকেটপাগল নাগরিকের কল্যাণে ‘ধনী’ বিসিবি, বিশ্বব্যাপী পরিচিতি খেলোয়াড়দের। এখন বছরে কোটি টাকার কম আয় কোনো ক্রিকেটারের আছে বলে মনে হয় না। জাতীয় দলে খেলার বদৌলতে কোনো কোনো খেলোয়াড় তো বছরে বিভিন্নপর্যায় থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করেন। দেশের প্রধানমন্ত্রীও অনেকের সাথে কথা বলেন। অথচ তারা আফগানিস্তানের কাছেও হেরে থাকেন। পারফরম্যান্স নিম্নগামী, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ধারাবাহিক ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী, কিন্তু আয়ের বাসনা ও লিপ্সা যদি হয় ঊর্ধ্বগামী! অর্থাৎ খেলোয়াড়দের ক্ষুধা টাকার প্রতি যতটা, খেলার প্রতি ততটা দৃশ্যমান কী? এ জন্য ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে (ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক, যে পর্যায়েই হোক) ভালো মানের বোনাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সম্মানের অভাব দেখছেন ক্রিকেটাররা। জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের ক্রিকেটারদের চেয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সম্মান-মর্যাদা কম দেয়া হয় কি?
এ কথা ঠিক, ক্রিকেটারদের এ ক্ষোভ এক দিনে তৈরি হয়নি। এমন একটা বিস্ফোরণ যে ঘটতে পারে তা বিসিবির বোঝা উচিত ছিল। দল নির্বাচনে যেন বোর্ডের কোনো রাজনীতি বা স্বেচ্ছাচারিতা না হয়; বর্তমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘ষড়যন্ত্র’ খুঁজে বা তদন্তের নামে দুই-একজনের ওপর খড়গ যেন নেমে না আসে।
ধনঁহড়সধহ১৯৭২@মসধরষ.পড়স
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা