০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

সমাজের কালো মুখ

-

সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুষ-দুর্নীতির ঘুণপোকা বাসা বেঁধেছে। শীর্ষ থেকে তৃণমূলÑ সর্বত্র সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার। এ কালো থাবা এখন সর্বগ্রাসী। ভয়াবহ এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের কী উপায়? এভাবে কি অনাচার, নৈরাজ্য, চলতে থাকবে? এ ব্যাধি কি নিরাময়-অযোগ্য?
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও দুর্নীতি কমেনি। দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থাটির ‘জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার : নীতি ও চর্চা’ শিরোনামে এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এ কথা। দেশের সর্বস্তরে সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল দুদক। বছর দুয়েক আগে হটলাইন (১০৬) সার্ভিস চালু করা হয়। দুই বছরে এ হটলাইনে ফোনকল এসেছে ৩১ লাখ। অবিশ্বাস্য ব্যাপার বৈকি! প্রতিদিন গড়ে ফোনকল আসে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। সরকারি-বেসরকারিপর্যায়ে দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীরা নিরুপায় হয়ে ধরনা দেন দুদকে। দুদক সূত্রে জানা যায়, তাদের এনফোর্সমেন্ট টিম ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই থেকে ফোনকলে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ৬২৬টি অভিযান পরিচালনা করে। গত সাত মাসে অভিযান চালানো হয় ৪৭০টি। এনফোর্সমেন্ট টিমের সুপারিশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শাস্তিমূলক বদলি করেছে। বরখাস্ত করেছে চাকরি থেকে। কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে অনেককে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে রাস্তা বানানো হচ্ছে, এমন প্রায় ২৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ বন্ধ করা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে ২১৯টি। ২৬টি টেন্ডারপ্রক্রিয়ার অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা হয়েছে।
পুলিশের একজন ডিআইজি কর্তৃক দুদকের এক কর্মকর্তাকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ প্রদানের ঘটনাটি ছিল চাঞ্চল্যকর। দু’জনই এখন জেলে। মামলার তদন্ত চলছে। সাধারণ মানুষ সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঘুষ-দুর্নীতির চাপে দিশেহারা। টিআইবির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সেবা খাতে ২০১৭ সালে মোট ঘুষের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৬৮৮.৯ কোটি টাকা। এটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং জিডিপির শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৫ সালের তুলনায় এটি বেড়েছে ২১ দশমিক ২ শতাংশ।
কেন ঘুষ দেন সাধারণ মানুষ? এ প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, গবেষণায় দেখা গেছে, যে ৬৯ শতাংশ মানুষ কোনো-না-কোনোভাবে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন, তাদের ৮৯ শতাংশ বলেছেন যে তারা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন। ঘুষ না দিলে সরকারি সেবা পাওয়া যায় না। ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের পরেই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশ। দুর্নীতি কমিয়ে যদি মধ্যমপর্যায়ে আনা সম্ভব হয়, তাহলে প্রবৃদ্ধি আরো ৩ শতাংশ বেশি হওয়া সম্ভব। হালে দেখা যাচ্ছে, দুর্নীতির অভিযোগ বাড়লেও দুদকের মামলা করার হার কমছে। যেসব মামলায় অভিযোগপত্র দিয়ে আদালতে বিচারের নিমিত্ত পাঠানো হয়, তাতে শাস্তি প্রদানের হার শতকরা ৬৩ ভাগ। দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি সহজে হয় না। আর প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে অনেক দুর্নীতিবাজকে শাস্তির আওতায় আনা যায় না (সূত্র : ডয়েচে ভেলে)।
ভূত আসলে কোথায়? সর্ষের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে জানানো হয়েছিল, ২০০৪ সালে দুদক প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ বছরে প্রতিষ্ঠানটির ৫৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কী ধরনের অভিযোগ ছিল আর কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছেÑ এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওগুলো ছিল মূলত দুর্নীতি ও ঘুষের অভিযোগ। বিভাগীয় ব্যবস্থা যা নেয়া হয়েছে, তা নিতান্তই মামুলি। আদালতে বিচারের মুখোমুখি কাউকেই হতে হয়নি। টিআইবি নির্বাহী প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচারিক প্রক্রিয়ার এ ধরনের প্রতিষ্ঠান যখন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে, তখন মানুষের বঞ্চনা বাড়ে এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা হুমকিতে পড়ে। দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান মনে করেন, দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে মানুষ উচ্চমানের নৈতিকতা প্রত্যাশা করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক যদি নিজের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়, তাহলে সংস্থাটি প্রশ্নের মুখে পড়বে। শুধু কি দুদক আর পুলিশ? শুধু কি সরকারি সেবা সংস্থাগুলো? না। খোদ আদালত ও নির্বাচন কমিশনের মতো সম্মানজনক প্রতিষ্ঠানেও দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। ইতঃপূর্বে কখনো এমন স্খলনের কথা শোনা যায়নি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), কমিশনারদের মতো সাংবিধানিক পদেও পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা না দিয়ে অর্থ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ মিছিলে শরিক আছেন ইসির সাবেক সচিবসহ পদস্থ কর্মকর্তারা। উচ্চ আদালতের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিচার কাজ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সাম্প্র্রতিক সময়ে জামালপুরের ডিসি আহমেদ কবীরের নারী কেলেঙ্কারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাকে করা হয়েছে বরখাস্ত। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকেরা নৈতিক স্খলনের দোষে দুষ্ট। স্কুল, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র। যৌন হয়রানির ঘটনা এখন ডাল-ভাত।
নষ্ট-ভ্রষ্ট এ সমাজ নিয়ে বিশ্বদরবারে কী করে আমরা মুখ দেখাব? নতুন প্রজন্মের কাছে কী রেখে যাচ্ছি আমরা? ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সফল কার্যকর সমন্বিত ও ধারাবাহিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে কোনো আশা-ভরসা নেই। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাখাইন স্টেট : ঘুমধুমে স্থলবন্দর করার চিন্তা করছে সরকার ফ্যাসিবাদ উৎখাত করেছে ছাত্ররা আর তাদের সাহস জুগিয়েছেন শিক্ষকরা মশিউর রহমানের নতুন বই ‘টেকসই সমৃদ্ধিতে আল-কুরআনের দর্শন’ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এপ্রিলে ঢাকা সফর করতে পারেন : তৌহিদ আ’লীগের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার আগুন প্রবীণ সাংবাদিকদের জন্য মাসিক ভাতা আগামী বছর থেকে : মুহাম্মদ আবদুল্লাহ শেখ হাসিনার ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে অনুসন্ধান করবে দুদক ছাত্রদের যৌক্তিক অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বনাম ইরানের অগ্রযাত্রা ধানমন্ডির ঘটনা নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম যা বলছে ট্রাম্পনীতির প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে

সকল