০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ৭ শাবান ১৪৪৬
`

বেসরকারি কলেজে পদোন্নতি

-

দেশে শিক্ষার তিনটি স্তর রয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা। মাধ্যমিক স্তর তিন ভাগে বিভক্ত। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী নি¤œমাধ্যমিক, নবম ও দশম শ্রেণী মাধ্যমিক এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়। দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিস্তৃত শিক্ষা উচ্চবিদ্যালয়। এর প্রধানের পদবি প্রধান শিক্ষক। উচ্চবিদ্যালয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী সংযুক্ত করলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদবি হয় অধ্যক্ষ, বেতন গ্রেড পঞ্চম। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড সপ্তম। উচ্চবিদ্যালয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী যুক্ত হলে তখন দুই ধারার শিক্ষক শিক্ষা কার্যক্রমে বিভক্ত হয়ে পড়েন। দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িতদের শিক্ষাবিষয়ক পেশাগত ডিগ্রি থাকা সাপেক্ষে তাদের বেতন গ্রেড নবম পর্যন্ত হয়; যা ১০-১২ বছরের চাকরির পর। সহকারী প্রধানদের বেতন গ্রেড অষ্টম। উচ্চবিদ্যালয়কে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী সংযুক্ত করে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রূপান্তর করলে প্রধানত প্রতিষ্ঠান প্রধানের মর্যাদা বাড়ে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সবসময় আগ্রহ থাকে রূপান্তর প্রক্রিয়ায়। কিন্তু সাধারণ শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়ে না। রূপান্তরিত অংশে আলাদাভাবে শিক্ষক নিয়োগ করতে হয়। আগে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও বর্তমানে এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয়। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রবেশপদবি হয় প্রভাষক। প্রারম্ভিক বেতন গ্রেড নবম। কিন্তু দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরা বহু বছর চাকরির পর প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে বেতন গ্রেড নবম প্রাপ্ত হন। অন্য দিকে, প্রধান শিক্ষক অধ্যক্ষে উন্নীত হয়ে বেতন গ্রেড সপ্তম থেকে পঞ্চম গ্রেড প্রাপ্ত হন। বেতন বাড়াতে আর্থিক সুবিধা ও পদোন্নতির ফলে সামাজিক মর্যাদা প্রাপ্ত হন। উভয় দিক থেকে তিনি হন লাভবান। কিন্তু উচ্চ শ্রেণী রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সাধারণ শিক্ষকদের মর্যাদাহানী ঘটে। প্রভাষকদের যখন পদোন্নতি হয়, তখন তারা আরো হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আনুপাতিক প্রক্রিয়ায় এসব প্রভাষকের কেউ কেউ বেতন গ্রেড ষষ্ঠ প্রাপ্ত হন। তাই স্কুলশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের মর্যাদা রক্ষায় দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চতর শ্রেণী অর্থাৎ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী সংযুক্ত না করাই শ্রেয় বলে আমরা মনে করি।
কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠদান করানো হয়। এগুলো কলেজ। কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে ষষ্ঠ-দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়। কোনোটিতে আবার প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিজেদের সামাজিক মর্যাদা বাড়াতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী সংযুক্ত করে প্রাথমিকভাবে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে পাঠদান প্রক্রিয়া চালু রাখেন। পরে শিক্ষক নিয়োগ করেন। নিয়োগ করা শিক্ষকদের চাকরিতে প্রবেশ পদবি প্রভাষক। তারা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর আট বছর হলে ৫:২ প্রথার মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক হন। এমপিওভুক্তিতে যে প্রভাষক জ্যেষ্ঠ তিনি বা তারাই সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। অনুপাত প্রথা অনুযায়ী, প্রতি সাতজন প্রভাষকের মধ্যে জ্যেষ্ঠ দুইজন সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। যদি এমপিওভুক্তি একই দিন হয়, তাহলে চাকরিতে যোগদান এবং বয়োজ্যেষ্ঠতাই সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে বিবেচিত হয়। নতুন এমপিওভুক্ত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠদান করা প্রতিষ্ঠানের প্রভাষকেরা সৌভাগ্যবান, তারা চাকরিতে যোগদানের আট বছর পরই সহকারী অধ্যাপকের জন্য বিবেচিত হন। পুরনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ পাওয়ারা অনুপাত প্রথায় কেউ ২০-২৫ বছর পর প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। কেউ পদোন্নতি না পেয়ে প্রভাষক বেতন কোড সপ্তম থেকে অবসরে যান।
আমাদের দেশে শিক্ষার তিনটি ধারার মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদার এবং বেশি যোগ্যতার ধারাটি হলো উচ্চ শিক্ষা পর্যায়। মাধ্যমিক স্তরের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় শেষের পর যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা মেধা অনুসারে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন ক্যাটাগরি, যেমনÑ চিকিৎসা শিক্ষা, প্রকৌশল শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা, সাধারণ শিক্ষার উচ্চ পর্যায় স্নাতক (পাস/অনার্স) স্নাতকোত্তর প্রভৃতি ধারায় অধ্যয়ন করেন। সরকারি-বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষকেরা স্নাতক (পাস/অনার্স) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান করান। এখানে পদোন্নতি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পদোন্নতির মতো অর্থাৎ আট বছর প্রবেশ পদবিতে চাকরি করার পর ৫:২ প্রথা অনুযায়ী সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। স্কুলগুলোতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠদানের অনুমতি পাওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক অংশটি এমপিওভুক্ত হলে নিয়োগকৃত কোনো শিক্ষক আট বছরে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান অনুপাত প্রথা অনুযায়ী। অন্য দিকে, স্নাতক (পাস/অনার্স) ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পাঠদানে নিয়োগকৃত প্রভাষকদের ২০-২৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়। যত সহজে স্কুলগুলোতে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তত সহজে উচ্চ শিক্ষা স্তরে প্রতিষ্ঠান করা যায় না। ফলে আগে প্রতিষ্ঠিত কোনো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়ার পর তাকে অনুপাত প্রথার কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। নতুবা তাকে সিলেকশন গ্রেড সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বেতন গ্রেড সপ্তম থেকে অবসর নিতে হয়। অথচ একসাথে নিয়োগ পাওয়া একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে আরো কম সময়ে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান অনেকে।
মাধ্যমিক স্তরে পাঠদান করিয়ে সর্বোচ্চ যে পদ পর্যন্ত কোনো শিক্ষক অবস্থান করেন, উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে পাঠদান করিয়ে কোনো শিক্ষক একই পদে অবস্থান করেন। পদ ও পদোন্নতির এই পদ্ধতি যৌক্তিক হতে পারে না। তাই স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর কলেজগুলোতে যথাযথ গবেষণা থাকা সাপেক্ষে উচ্চ শিক্ষায় পাঠদানরতদের সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি জরুরি। অধ্যক্ষ পদের বেতন গ্রেড বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কলেজগুলোতে গ্রেড চার। উপাধ্যক্ষ পদে গ্রেড পাঁচ। উচ্চ শিক্ষার শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষায় এ স্তরে অধ্যক্ষ পদের বেতন গ্রেড তিন এবং উপাধ্যক্ষ পদের বেতন গ্রেড চার করা সময়ে দাবি। বেতন গ্রেড চার পদের প্রতি প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ অধ্যাপক পদ সৃষ্টি এবং বেতন গ্রেড পাঁচ, সহযোগী অধ্যাপকের জন্য ১৫ শতাংশ পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এ দুই পদের পদোন্নতির জন্য ২০ বছর ও ২২ বছর উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিজ্ঞতা ও গবেষণা তথা অপরিহার্য বিধান চালু করা দরকার। উল্লিখিত কোনো যোগ্যতা না থাকলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদ খালি থাকবে। পরে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া গেলে তখন এসব পদে পদায়ন করা যেতে পারে। এভাবে পদোন্নতির পদ্ধতি চালু করলে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়বে বলে আশা করা যায়। হ
লেখক : প্রেসিডিয়াম মেম্বার, কলেজ শিক্ষক সমিতি
ই-মেইল : [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement