পরিবহন অর্থনীতি : সম্ভাবনা ও বাস্তবতা
- সেফাতুল করিম প্রান্ত
- ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি স্বাভাবিকভাবে পরিচালনার জন্য পরিবহন খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবহনব্যবস্থা আধুনিক ও সুশৃঙ্খল না হলে সে দেশের অর্থনীতির গতি ব্যাহত হয়। পরিবহন খাতের বেহাল দশা বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির অন্যতম অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। দেশের পরিবহনে সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশ পথ রয়েছে। তবে পরিবহনব্যবস্থা মূলত সড়কনির্ভর। সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। অন্য দিকে রেলপথ রয়েছে দুই হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার। বর্ষা মওসুমে নাব্য নদীপথ রয়েছে ছয় হাজার কিলোমিটার। ফলে স্বাভাবিকভাবে সড়কপথের নির্ভরশীলতাই বেশি।
দেশের মূল বাণিজ্য রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় ঢাকার সাথে অন্য সব জেলার যাতায়াতের সহজবোধ্যতাই পরিবহন উন্নতির মাপকাঠি ধরা হয়। এ সমস্যা সমাধানে রাজধানী নির্ভরতা কমিয়ে বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া ছিল সময়ের দাবি। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থানের আশায় রাজধানীমুখী হচ্ছে। ফলে ঢাকার পরিবহনব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। তাই রাজধানীসহ সারা দেশের পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন করতে চাইলে শুধু অবকাঠামো আর ব্যয়বহুল প্রকল্প হাতে নিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে আমাদের দেশে। অথচ উন্নত দেশগুলোর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ব্যয়ে নির্মাণ করা হলেও এসব সড়ক তেমন টেকসই নয়। আবার যানজট বা ব্যবহারযোগ্য সড়কের সমস্যা না দূর করে ফের সড়ক-ফ্লাইওভার ইত্যাদি বানানোর প্রবণতা লক্ষণীয়। অথচ যানজট দূর হচ্ছে না। শুধু ঢাকাতেই যানজটের কারণে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান শুধু ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করলে দূর করা সম্ভব নয়। ব্যবসায়-বাণিজ্য ঢাকা থেকে বিকেন্দ্রীকরণ, ব্যক্তিগত গাড়ি নিরুৎসাহিত করে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো, রেলের ক্যাপাসিটি বাড়ানো ও আশপাশের জেলা থেকে দ্রুতগতির শাটল ট্রেন চালু, লেন পদ্ধিতি নির্দিষ্টকরণসহ সামগ্রিক পরিবহন খাতের দিকে নজর দিলেই তবে এর সমাধান আসতে পারে।
অন্য দিকে রেলপথে যাতায়াতের চাহিদা ক্রমাগত বাড়লেও নতুন রেলপথ তৈরির তেমন কোনো প্রকল্প নেই। বাংলাদেশে প্রায় সব রেলপথই ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি। ফলে অনেক স্থানের রেলপথের মেয়াদ শেষ হয়ে তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তারপরও সেসব রেলপথে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। রেল সেবার আধুনিকায়ন, যাত্রী সেবার মান বাড়ানো, সময়সূচি মেনে চলাসহ টিকিট কালোবাজারি রোধে বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু নানা অব্যবস্থাপনায় সেগুলো স্থায়ী সমাধান নিয়ে আসতে পারছে না। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, রেলের এত চাহিদার পরও বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্রমাগত একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান।
পণ্য আমদানি-রফতানি ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম নৌপথ। পণ্য পরিবহনে আধুনিক জাহাজ ব্যবহার করা হয় বটে। তবে বন্দরগুলোতে পণ্য খালাসে ধীর গতি ও অব্যবস্থাপনার নানা অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। বন্দরে পণ্যজট কমাতে সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি দেশের স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে।
পরিবহনের সবচেয়ে বড় ‘সোশ্যাল কস্ট’ দুর্ঘটনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৫ সালের হিসাবে প্রতি বছর ২১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। আহত হয় লক্ষাধিক। কোটি কোটি টাকার পরিবহন সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ দুর্ঘটনা রোধে চালকদের প্রশিক্ষণ, গাড়ির ফিটনেস-লাইসেন্স যথাযথভাবে প্রদান, শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ গঠন, মালিকদের অতি মুনাফা নীতি বন্ধ করা, দায়ীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা, ট্রাফিক পুলিশের জনবল বাড়ানো, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালক ও সহকারীকে শাস্তির আওতায় আনাসহ যাত্রী ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা