০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ৭ শাবান ১৪৪৬
`

শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলা

-

সুস্থ জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষা আর খেলাধুলার ভূমিকা অনস্বীকার্র্য। তাই আমাদের শিশুদের বিকাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া প্রয়োজন। দীর্ঘস্থায়ী সুখী জীবনের মূল চাবিকাটি শারীরিক শিক্ষা আর খেলাধুলা। এই শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেণীর সাথে সমান অবস্থানে থাকা উচিত। এটি মূলত জীবনের শিক্ষা। শারীরিক শিক্ষা ছাড়া পূর্ণতা আসে না। এটি নিজেকে রক্ষা করতে শেখায়, সঠিক সঙ্গী নির্বাচন করতে, খেলাধুলার পারদর্শিতার মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশসহ পুষ্টি, স্বাস্থ্য, প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর জ্ঞানদান করে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ সবল যুবসমাজ জরুরি। যেসব গুণ থাকলে দেশের প্রতিটি নাগরিক সুবুদ্ধিসম্পন্ন হয় ও নিছক ভাবাবেগ পরিহার করতে পারে এবং সুস্থ সবল ও দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন নাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে; শারীরিক শিক্ষা মানুষকে এসব গুণ অর্জনে সহায়তা করে।
সময়ের চাহিদানুযায়ী আমাদেরও দাবি শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলাকে পূর্ণাঙ্গ বিষয় হিসেবে চালু করে এ বিষয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করা। এতে শিক্ষকেরা যেমন সম্মানিত হবেন, তেমনি জাতিও শারীরিক, মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে। শিক্ষা মানুষকে জ্ঞান দান করে। আর শারীরিক শিক্ষা মানুষকে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও জাতীয়ভাবে স্বাবলম্বী করে। এ দুই শিক্ষা উভয় মিলে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেয়। আজকের এবং আগামীর প্রয়োজন পূরণের অনুধাবন, অনুমান, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত বর্তমান সময়েই করতে হয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলা বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য প্রয়োজন অনিবার্য। শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলা ছাড়া একটি শিশু পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে উঠতে পারে না। অপূর্ণাঙ্গ মানুষ নিজের এবং দেশের পূর্ণাঙ্গ সেবা করতে ব্যর্থ। শারীরিক শিক্ষা ছাড়া শিক্ষার পূর্ণতা আসে না। এটি শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। শরীর থেকে মনকে যেমন আলাদা করা যায় না, তেমনি শারীরিক শিক্ষাকেও সাধারণ শিক্ষা থেকে আলাদা করা যায় না। শারীরিক ও মানসিকভাবে একটি সুস্থ জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলার বিকল্প নেই। শিক্ষার পূর্ণতায় এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থে শারীরিক শিক্ষাকে মূল পাঠ্যক্রম ও বোর্ড সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে পাবলিক পরীক্ষায়ও অন্তর্ভুক্তির বিকল্প কিছু নেই।
শিশুর বেড়ে ওঠা এবং মানসিক মেধা বিকাশে অনন্য ভূমিকা রাখে শারীরিক শিক্ষা আর খেলাধুলা। চীনে কোনো শিশু সাঁতার না জানলে তাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় না। উন্নত-অনুন্নত বিশ্বের এরকম আরো অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে যারা জাতীয় জীবন এবং উন্নতিতে শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলার ভূমিকাকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। এর চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা কিছুতেই পূরণীয় নয়।
জার্মানিরা বলেন, আমরা হাসপাতাল চাই না, আমরা খেলার মাঠ চাই, আমরা ব্যায়ামাগার চাই। শারীরিক শিক্ষায় যাদের গুরুত্ব যত বেশি উন্নয়ন এবং উন্নতিতেও তারা তত বেশি এগিয়ে। মানুষের শরীর একটি দুর্গ বিশেষ যা শরীরচর্চা ও খেলাধুলা ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে গঠন সম্ভব নয়। শারীরিক শিক্ষাকে বলা হয় দেহ ও মনের অতন্দ্র প্রহরী। শারীরিক শিক্ষা দেহ ও মনের সামঞ্জস্য উন্নয়ন সাধন করে। শারীরিক শিক্ষা তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জীবনের সমন্বয় সাধন করে শিশুর জীবন করে তোলে অর্থবহ।
শারীরিক শিক্ষা সম্পর্কে দার্শনিক বুচার বলেন, ‘সামগ্রিক শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে শারীরিক শিক্ষা এমন এক প্রচেষ্টা, যার লক্ষ্য হলো সুনির্বাচিত শারীরিক ক্রিয়াকর্মের মাধ্যমে ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক,আবেগীয় ও সামাজিক দিকের উন্নতি ঘটিয়ে তাকে ভবিষ্যতের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।’
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা দৈহিক ও মানসিক বিকাশের ওপর সমান গুরুত্ব আরোপ করা হয়। দেশের মানবসম্পদ সঠিকভাবে বিকশিত করা এবং আজকের শিশুকে আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথম কাজ হলো শিশু-শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বিকাশ সাধন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক দিক অন্তর্ভুক্ত। আর দ্বিতীয়টি হলো শিক্ষর্থীর জৈবিক সত্তাকে সামাজিক সত্তায় রূপান্তরিত করা। এর মধ্যে শিশুর চারিত্রিক ও মূল্যবোধের উন্নতি এবং সামাজিক বিকাশ অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশে শিক্ষাব্যবস্থায় শারীরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন হয়। হ
লেখক : শিক্ষক, হাইমচর, চাঁদপুর।


আরো সংবাদ



premium cement