১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

একটি বিবৃতি ও একটি সংগঠন

-

আলেমদের জ্ঞান ও কর্তব্যের সাথে সম্পর্কিত কিছু বিষয়ে ১৬ এপ্রিল, ২০১৯ নয়া দিগন্তে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ওই দিনের প্রথম পৃষ্ঠায় রয়েছে ‘শাবানের চাঁদ দেখা নিয়ে রিট’। বিবাদের কারণটা হলো ‘কোন দিন শবেবরাত পালিত হবে!’ ‘শবেবরাত’ এই উপমহাদেশ ছাড়া মুসলিম জাহানের আর কোথায় কোথায় পালিত হয় তা কি আমাদের ইসলামিক ফাউন্ডেশন সন্ধান নিয়েছে?
‘শব’ ফার্সি ভাষার শব্দ, আর তা এই উপমহাদেশে যখন ফার্সি রাষ্ট্রভাষা ছিল কয়েক শতাব্দীব্যাপী, তখন চালু হয়েছিল। এর আরবি প্রতিশব্দ ‘লায়ল্’, আর ‘লায়লাতুল বারায়াত’ আরব জাহানের কোথাও নাকি পালিত হয় না।
যা হোক, পত্রিকার চতুর্থ পৃষ্ঠায় রয়েছে ‘আল্লাহ্র বিধান অমান্য করার কারণেই খুন ধর্ষণ বেড়েছে’, দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম এক যুক্ত বিবৃতিতে তা বলেছেন। শ্রদ্ধেয় আলেমদের বিবৃতিতে দুটো কথা : ‘অশ্লীলতা’ আর ‘বিশৃঙ্খলা মানুষের হাতের কামাই’ রয়েছেই। তারা এ জন্য ‘ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশার সুযোগ’, ‘সন্তানদের মনিটরিং না করা’, ‘তাদের জন্য নৈতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না রাখা’ ইত্যাদিকে দায়ী করেছেন। এসব নিশ্চয়ই কাক্সিক্ষত নসিহত। কিন্তু আসল কারণটা হয়তো বাদ পড়ে গেছে। যৌন-উচ্ছৃঙ্খলতার আসল কারণটা হলো রাত-দিন চোখের সামনে নগ্নতার বিস্ফোরণ! পত্রিকার বিজ্ঞাপনে, ম্যাগাজিনের পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায় আর চলচ্চিত্রে ক্রমবর্ধমান উলঙ্গপনা, নারী দেহের প্রদর্শনী কিছু মানুষকে যে পশু বা অমানুষে পরিণত করছে, তা হয়তো অনেকের নজরে পড়ে না।
এড়িয়ে চললে তো সমস্যার সমাধান হবে না। কেউ কি কখনো ভেবেছেন ‘আমরা দল বেঁধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাই। গিয়ে তাকে বলিÑ আপনি একজন ধার্মিক মুসলমান, আল্লাহ্কে খুশি করার জন্য এমন নীতিমালা প্রণয়ন করুন যাতে সর্বত্র অশ্লীল ছবি প্রদর্শন বন্ধ হয়, যৌন নিপীড়নের উসকানি তিরোহিত হয়, সমাজে বিশৃঙ্খলার নিরসন হয়’?
যে ‘শীর্ষ উলামায়ে কেরাম’ উল্লিখিত আলেম সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রথম যে প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখ রয়েছে তা হচ্ছে ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’। প্রতিষ্ঠানটির জন্মবৃত্তান্তটা কতজনই বা জানেন? এই জমিয়তের প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছিলাম ১৯৪৬ সালে। তখন আমি সিলেট গভর্নমেন্ট হাই মাদরাসার ছাত্র। সে এক ঐতিহাসিক কাহিনী।
অবিভক্ত ভারতে আলেমদের একটাই সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান ছিলÑ ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ’। দেওবন্দকেন্দ্রিক সেই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন বিখ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব মৌলানা হোসেন আহমদ মাদানি। তিনি প্রত্যেক বছর রমজানে সিলেটে আসতেন। তার অনেক মুরিদ ছিলেন সিলেটে। (বাল্যকালে সিলেটে দরগাহে শাহজালাল সংলগ্ন মসজিদে তার কাছে আল কুরআনের সবক নিয়েছিলাম)। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ছিল অবিভক্ত ভারতের প্রবক্তা। ১৯৪৬ সালে যখন সিলেটে ‘পাকিস্তান আন্দোলন’ তুঙ্গে, আর অনেক আলেম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী, তখন তারা উপলব্ধি করলেন যে, তাদের একটা আলাদা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। শুরু হলো কাজ। যত দূর মনে পড়ে, ভারতের একজন বিখ্যাত আলেম ছিলেন মৌলানা হসরত মোহানী, যিনি পাকিস্তানসমর্থক। তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো আলেমদের একটা সম্মেলনে সভাপতিত্ব করতে। হসরত মোহানী ছিলেন একজন বিখ্যাত মর্দে মোমিন। সম্ভবত তিনিই এই বিখ্যাত উক্তি করেছিলেন ‘মোসলমানান দর গোর, মোসলমানী দর কিতাব’। ফার্সি কথাটার মানে হলো ‘মুসলমানেরা তো সবাই কবরবাসী হয়ে গেছে, আর ইসলাম ঠাঁই নিয়েছে কিতাবের পাতায়’। আলেমদের ওই সম্মেলনটা হয়েছিল সিলেট শহর থেকে আট মাইল দূরে রনকেলী গ্রামের মাহমুদ চৌধুরী একাডেমি মাঠে। এর প্রধান উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন দরগাহ শাহজালালের মোতাওয়াল্লি ‘সরেকউম’ আবু যাফর আবদুল্লাহ, মৌলানা সাখাওয়াতুল আম্বিয়া প্রমুখ। আমরা ছিলাম সেই সম্মেলনের ভলান্টিয়ার। আমি তখন মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কর্মী। আমাদের কয়েকজনকে সম্মেলনের দাওয়াত দিতে পাঠানো হয়েছিল পার্শ্ববর্তী জেলা কাছাড়ে (বর্তমানে ভারতের আসাম প্রদেশে)। আমি ও অন্য একজন গেলাম সেখানকার শিলচর শহর থেকে চৌদ্দ মাইল দূরে অবস্থিত লক্ষ্মীপুর গ্রামে। সেই গ্রামের মুসলমানেরা ছিলেন মনিপুরী। আমরা দু’জন ছিলাম তাজউদ্দীন নামক একজন মনিপুরী মুসলমানের বাড়িতে। সেই গ্রামের একটি মাদরাসায় সমবেত লোকজনকে আমাদের আসার উদ্দেশ্য জানানো হলো।
‘পাকিস্তানপন্থী’ আলেমদের বিরাটাকার সে সম্মেলন খুবই ফলপ্রসূ হয়েছিল। আন্দোলন জোরদার হয়ে গেল আর কিছু দিন পর, ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে যখন সিলেটে গণভোট হলো ‘সিলেটবাসী পাকিস্তানে যেতে চায় নাকি ভারতে থাকবে’ তা জানতে, তখন সিলেটের মুসলিম জনগণ পাইকারি হারে পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়ে সিলেটের পাকিস্তানভুক্তি নিশ্চিত করেছিল। তা না হলে এখনকার সিলেট বিভাগটা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেত। হ


আরো সংবাদ



premium cement