২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ঢাবিতে রমজানের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনায় ছাত্রলীগের হামলা

ঢাবিতে রমজানের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনায় ছাত্রলীগের হামলা - ছবি : নয়া দিগন্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের রমজানের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত সাতজন শিক্ষার্থী আহত হন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ হামলায় অভিযোগের তীর শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম সুজনের দিকে তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।

বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আবাসিক ভবন বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন আইন বিভাগের সাফওয়ান, রেজওয়ান আহমেদ রিফাত, শাহীন, সাকিব তূর্য, মাহাদী ও কুতুবউদ্দিনসহ আরেকজন। এছাড়া আরো অনেককেই এলোপাতাড়ি চড়-কিল-ঘুষি দিয়ে আঘাত করা হয়।

এদের মধ্যে শাহীন, রেজওয়ান ও সাকিব গুরুতর আহত হন। শাহীনকে মেরে মুখ থেতলে দেয়া হয় এবং তাদের হাত ও মুখে ক্ষত দেখা যায়। রেজওয়ানের ঠোঁট কেটে যায়, কোমড়ে ও পায়ের চামড়া ছিঁড়ে যায়। সাকিবকেও রাস্তায় ফেলে মারা হয়, তারও মুখ ফেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম দেখা যায়। তারা সবাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

জানা গেছে, হামলায় নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রলীগ নেতা সুজন ২১ নম্বর ওয়ার্ড ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডুর অনুসারী এবং স্থানীয়ভাবে ‘টোকাই নেতা' বলে পরিচিত।

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়,‘প্রোডাক্টিভ রামাদান' শীর্ষক পবিত্র মাহে রমজানকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন, অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি, ইসলামী জ্ঞানার্জন এবং সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তাবলীগের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা। কর্মচারীদের আবাসিক ভবন বঙ্গবন্ধু টাওয়ার মসজিদে জোহরের নামাজের পর এটা শুরু হলে আলোচনা চলাকালে তাওহীদুল ইসলাম সুজনের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়।

ঘটনার বর্ণনায় ভুক্তভোগী আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম শহীদী বলেন,‘আমরা তাবলীগের বন্ধু ও বড় ভাইয়েরা রোজার আমল ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করতে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে আসি। আমরা আগেই এটা প্রচার করেছি যে, আমরা রোজার ফজিলত, মাসায়ালা-মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করবো। কিন্তু, হঠাৎ অপরিচিত কয়েকজন মসজিদে এসে আমাদের বের হতে বলে। তাছাড়া, টাওয়ারের কর্মচারীরাও আমাদের চলে যেতে বললে আমরা বের হই। এ সময় আমরা গেটের কাছাকাছি আসতেই ৩০ থেকে ৪০ জন আমাদের ওপর হামলা চালায়।’

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আইন বিভাগের ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী নামাজ পড়তে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে আসেন। এ সময় তারা নামাজ শেষেই রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করতে চাইলে বাধা দেন বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কল্যাণ সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক। তিনি বলেন, এখানে কোনোরকম প্রোগ্রাম আয়োজন করা ভিসি ও প্রক্টর থেকে নিষেধ করা আছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা সেন্ট্রাল মসজিদের দিকে যেতে চাইলে গেটের মুখেই ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন। এ সময় তাদেরকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি দিতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গেটের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি গেট বন্ধ করে দিলে তারা বিভিন্ন দিকে দৌড়ে পালাতে থাকেন। পরে কয়েকজন কোনোভাবে গেট দিয়ে ঢুকে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরে আশ্রয় নিয়ে নিজেদেরকে রক্ষা করেন।

বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের গেটম্যান বলেন,‘শিক্ষার্থীরা বাইরে বের হতে না হতেই আগে থেকে অপেক্ষা করা কিছু ছেলে তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় কয়েকজনকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। কয়েকজন শিক্ষার্থী বাইরে পালিয়ে যায়। আর কয়েকজন বিল্ডিংয়েই আশ্রয় নেয়।

ভুক্তভোগী আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন,‘আমাদের আইন বিভাগের মসজিদে জামাতে নামাজের তেমন ব্যবস্থা না থাকায় আমরা বঙ্গবন্ধু টাঈয়ারের মসজিদে নামাজ পড়ি। তারপর আমাদের মাস্টার্সের এক ভাই রমজানে কিভাবে ইবাদত পালন করলে ভালো হয়, তা নিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলেন। এরপর কর্মচারী সমিতির সভাপতি আমাদের সেন্ট্রাল মসজিদে যেতে বলেন। এ সময় আমরা বের হয়ে গেটে আসার সাথে সাথেই শহীদ মিনারের দিক থেকে ৩০ থেকে ৪০ জন পোলাপান এসে আমাদের ওপর হঠাৎ হামলা চালায়। আমাদের অনেকেই আহত হয়েছে। তারা দুই তিনজনকে রাস্তায় ফেলে লাথি, কিল, ঘুষি মারতে থাকে। বঙ্গবন্ধু হল ও জসীমউদ্দিন হল ছাত্রলীগের দু’জনকে আমি চিনতে পেরেছি, তবে তাদের নাম জানি না।

তিনি বলেন, এ সময় সবাই যে যেভাবে পেরেছি পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছি। আমার বন্ধু এই ভবনেই সাবলেট থাকে, আমি তার এখানে আশ্রয় নিয়েছি। প্রথম বর্ষে পড়ি, এত খারাপ পরিস্থিতিতে পড়বো বুঝতে পারিনি। নামাজ পড়তে এসে যদি আমাদের ওপর হামলা করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কোথায়?

এদিকে, আহত শিক্ষার্থী রেজওয়ানকে দেখা যায় ঘটনার প্রায় ৪০ মিনিট পর বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের ওপর থেকে নামছেন৷

তিনি বলেন, আমরা নামাজের শেষে বের হতে না হতেই আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমিসহ আরো কয়েকজনকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়েছে। পরে কোনো উপায় না দেখে বন্ধুর সাথে বঙ্গবন্ধু টাউয়ারের একজনের বাসায় আশ্রয় নেই। আমাদের বন্ধু শাহীন আরো গুরুতর আহত। তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত তাওহীদুল ইসলাম সুজনকে বারবার কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

মন্তব্য জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু বলেন, আমার মনে হয়, ঘটনা সত্য নয়। এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ থাকলে, তা আমাকে দিলে সে অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো: মাকসুদুর রহমানকে একাধিকবার কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement