শিশু আহনাফের মৃত্যু : মামলা তুলে নিতে হুমকির অভিযোগ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৭:১৮
রাজধানীর মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিক্যাল চেকআপ সেন্টারে খতনা করানোর সময় মারা যায় রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ তামহিদ আয়হাম (১০)। তার মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলা তুলে নিতে শিশুটির বাবা-মাকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি-ধামকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (৬ মার্চ) আয়হামের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে তার সহপাঠী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ মানববন্ধনে আয়হামের বাবা ফখরুল আলম ও মা খায়রুন্নাহার এসব অভিযোগ করেন।
পরিবারের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোনের মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে বলা হচ্ছে। অভিযুক্তরা বিভিন্ন উপায়ে মামলা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করছে।
তারা বলেন, যারা আমার এক সন্তানকে মেরে ফেলেছে, তারাই আবার আমার অন্য সন্তান নিয়ে আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। আমার অন্য সন্তান কোন স্কুলে পড়ে, বয়স কত, এসব বিষয়ে জানার জন্য বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন দিচ্ছে।
বাবা ফখরুল আলম বলেন, আমার চাওয়া একটাই বিচার যেন সুষ্ঠু হয়। যারা ভুয়া ডাক্তার তাদের বিরুদ্ধে যেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদক্ষেপ নেন।
তিনি বলেন, ওপর মহল থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যেন পরিবর্তন করা হয় আর আসামিদের জামিন দেয়া হয়। ফোন দিয়ে বলা হচ্ছে, আমরা বিচার পাব না। এখন অনিরাপত্তায় ভুগছি।
কারা এসব হুমকি দিচ্ছে তাদের নাম জানতে চাইলে আয়হামের বাবা বলেন, তাদের পরিচয় আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। আপনাদের কাছে পরে বলব। আমরা চাই এই মামলাটি ডিবি অথবা পিবিআইতে হস্তান্তর করা হোক।
আয়হামের মা খায়রুন্নাহার বলেন, ওরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের না জানিয়ে ওটির (অপারেশন থিয়েটর) মধ্যে তিন ঘণ্টা আয়হামকে আটকে রেখেছে। হাসপাতালে একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার পর্যন্ত নেই। এমনকি আমাদের অন্য হাসপাতালেও নিতে দেয়নি। এজন্যই এটাকে আমরা হত্যাকাণ্ড বলছি। এটা অবহেলাজনিত কোনো মৃত্যু নয়। মারা যাওয়ার পর আমাদেরকে জানায়নি তারা। আমাদের পারিবারিক চিকিৎসক এসে বের করেছে আয়হাম মারা গেছে।
তিনি বলেন, ঘটনার পর মামলায় জামিন দিতে ওপর মহল থেকে চাপ দিচ্ছে বলে আমাদের আইনজীবী জানিয়েছেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। তিনি যদি আমাদের দিকে না তাকান, তাহলে আমরা কখনোই ন্যায়বিচার পাব না।
মানববন্ধনে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এরআগে, মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় আহনাফকে সুন্নতে খতনা করাতে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। এর ঘণ্টাখানেক পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া দেয়ার কথা থাকলেও তারা ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়েছে। যে কারণে আহনাফের আর জ্ঞান ফেরেনি।
জানা গেছে, মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিক্যাল চেকআপ সেন্টারে অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন ডা. এস এম মুক্তাদিরের তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবার রাতে সন্তানকে সুন্নতে খতনা করাতে নেন আহনাফের বাবা ফখরুল আলম ও মা খায়কুন নাহার চুমকি। রাত ৮টার দিকে খতনা করানোর জন্য অ্যানেস্থেসিয়া দেয়ার পর আর ঘুম ভাঙে না আহনাফের। এর ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতালটির পক্ষ থেকে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জেনারেল এনেস্থেশিয়া দেয়া হয়নি জানিয়ে দাবি করে, আগে থেকেই শারীরিক সমস্যা ছিল তাহমিদের। সে ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে সঠিক তথ্য না দেয়াতেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতাল পরিচালক ডা. এস এম মুক্তাদির দাবি করেন, ছেলেটির ওজন বেশি ছিল। বয়সও ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। ফুসফুসে সমস্যা ছিল। কিন্তু সব তথ্য পরিবার জানায়নি।