২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মাঠে পুলিশের ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন : মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেন মা-ছেলে

- ছবি - সংগৃহীত

ঢাকার কলাবাগানে একটি খেলার মাঠে পুলিশের থানা-ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে এলাকাভিত্তিক আন্দোলনের একজন সংগঠক সৈয়দা রত্না এবং তার ছেলেকে পুলিশ আটক করার পর রোববার দিবাগত রাতে তাদের ছেড়ে দেয়।

কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিতোষ চন্দ্র বিবিসিকে বলেন, সৈয়দা রত্না মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।

মুচলেকায় কী লেখা ছিল জানতে চাইলে চন্দ্র বলেন, ‘তিনি তার (সৈয়দা রত্না) ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং এমন কাজ তিনি আর করবেন না- এটা লিখিতভাবে জানিয়েছেন।’

এরপর মধ্যরাতে সৈয়দা রত্না এবং ছেলেকে ছেড়ে দেয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এর আগে রোববার সকাল পৌনে ১১টায় তাকে আটক করে কলাবাগান থানায় নিয়ে যাওয়ার পর থেকে থানার পুলিশ সদস্যরা সৈয়দা রত্নার পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সাথে যোগাযোগ করার জন্য।

কিন্তু পরিবার বলছে থানার ওসি দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত থানায় আসেননি এবং তারা তার সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেননি।

কী হয়েছিল?
রোববার সকালে পুলিশের একটি দল তেঁতুলতলা মাঠ নামে পরিচিত একটি মাঠে নির্মাণ কাজ শুরু করে। বছর-খানেক যাবত এই মাঠটিতে থানা-ভবন না তোলার জন্য এলাকাভিত্তিক একটি আন্দোলন চলছিল। এই আন্দোলনের একজন সংগঠন সৈয়দা রত্না।

পুলিশ নির্মাণ কাজ শুরু করলে সৈয়দা রত্না সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি লাইভ করছিলেন।

এক মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ওই লাইভটি চলার এক মিনিট দুই সেকেন্ডের সময় ডোরাকাটা গেঞ্জি পরা একজন ব্যক্তি সৈয়দা রত্নাকে ধমকাতে শুরু করেন।

লাইভ বন্ধ করতে বলে শুরু হওয়া ধমকের সাথে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যোগ দেন আরো কয়েকজন।

শেষ কয়েক সেকেন্ডে কারো মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না, তখনো ধমকের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এক পর্যায়ে ফোনটি কেড়ে নেয়ার এবং লাইভটি বন্ধের শব্দ পাওয়া যায়।

সৈয়দা রত্নার মেয়ে শেউতি সাগুফতা বিবিসিকে বলেছেন, সকালে পৌনে ১১টার সময় ওই লাইভ চলার সময়ই তার মাকে কয়েকজন মহিলা পুলিশ টেনে-হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়।

এর কয়েক মিনিট পর তার কলেজ পড়ুয়া ভাইকেও পুলিশ তুলে থানায় নিয়ে যায়।

পরিবারের অভিযোগ, তেঁতুলতলা মাঠ নামে পরিচিত কলাবাগানের ওই মাঠটিতে থানার ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় তাদের আটক করা হয়েছে।

কী বলছে পরিবার?
সৈয়দা রত্নার মেয়ে শেউতি সাগুফতা বিবিসিকে বলেছেন, প্রায় নয় ঘণ্টা যাবত তার মা এবং ভাই থানায় আটক থাকলেও তারা এখনো পুলিশের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি।

তিনি বলছেন, ‘সারাদিন ধরে আমার মা এবং ভাইকে থানায় আটকে রেখেছে, কিন্তু আমাদের বলা হচ্ছে না কেন তাদের আটকে রাখা হয়েছে। কোনো তথ্যই দিচ্ছেন না উনারা। ডিউটি অফিসার বলছে ওসি সাহেবের সাথে কথা বলতে। কিন্তু উনাকে রিচ করার সব রকম চেষ্টাই করা হয়েছে, পাচ্ছি না আমরা।’

‘ফোন করা হচ্ছে, উনি ধরছেন না। থানায়ও আসেননি। প্রথমে বলেছে ২টায় আসবেন, এরপর বলেছে ৪টায়, এরপর বলেছে ইফতারের আগে, তারপর বলেছে ইফতারের পরে। কিন্তু এখন রাত ৮টা বাজে এখনো উনি আসেননি,’ বলেন তিনি।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, কোনো কর্মকর্তা তার সঙ্গে কথাও বলেননি। কিন্তু তাকে বসিয়ে রেখেছে। কখন বা কেউ তার সঙ্গে কথা বলবেন কিনা, বা কেন তাকে আর আমার ভাইকে তুলে নিয়ে গেছে তাও আমাদের জানানো হবে কি-না, আমরা জানি না।’

তিনি অভিযোগ করেছেন, তার ভাইকে বিনা কারণে তুলে নেয়া হয়েছে। ‘আমার ভাইয়ের বয়স ১৭, ও তো নাবালক। আমার ভাই আমার মাকে খুঁজতে বেরিয়েছিল, এটা কি কোনো অপরাধ?’

আটক সৈয়দা রত্না কে?
সৈয়দা রত্না একজন সংস্কৃতিকর্মী, ফেসবুকেও তার ছয় হাজারের বেশি অনুসারী রয়েছেন। তিনি কয়েকটি পরিবেশবাদী, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক সংগঠনের কর্মী।

সোমবার তার মুক্তি চেয়ে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে উদীচী, বেলা, বাপা, নিজেরা করি এবং গ্রিন ভয়েজসহ কয়েকটি সংগঠন।

তার আটকের খবরে অনেক সংস্কৃতিকর্মী প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে তার মুক্তি চেয়ে পোষ্ট দিচ্ছেন।

পুলিশ কী বলছে?
পুলিশ বলছে, কলাবাগানের ওই জমিটিতে সরকারি ভবন তোলার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নেয়া হয়েছে। নির্মাণকাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে সৈয়দা রত্না এবং তার ছেলেকে আটক করা হয়েছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শরিফ মোঃ ফারুকুজ্জামান বলেছেন, এখন তারা কলাবাগান থানায় আছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, অপরাধের প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেছেন, সৈয়দা রত্না নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করেছেন এবং সামাজিক মাধ্যমে 'হেট-স্পিচ' বা ঘৃণা ছড়াচ্ছিলেন।

খেলার মাঠে স্থাপনা
ঢাকায় গত কয়েক দশকে খেলার মাঠ দখল করে একের পর এক স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। কোথাও সরকারি ভবন, কোথাও বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করে খেলার মাঠ এবং খোলা জায়গা ক্রমশ: কমে এসেছে।

তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা বলছিলেন, থানা ভবন তোলার বিরোধী নন তারা। কিন্তু তেঁতুলতলার মাঠটিতে তাদের সন্তানেরা খেলাধুলা করেন এবং বয়স্ক মানুষেরা সকাল-বিকাল হাঁটেন। ফলে তারা চান এ মাঠটি যাতে মাঠ হিসেবেই থাকে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
সিলেটে ট্রাক ও বাসচাপায় নিহত ২ মানিকগঞ্জে প্রলোভন দেখিয়ে শাহাবাগে লোক নেয়ার মূলহোতা দবিরসহ আটক ৫ মধ্যাহ্নভোজের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩ উইকেট তুলে নিলো বাংলাদেশ সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলবে কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর নিহত জামায়াতের সাথে ইইউ অন্তর্ভূক্ত ৮টি দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক মনিরামপুরে শ্রমিক দলের সভাপতির উপর হামলা ‘যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বিএনপি’ দেশব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত রোগে ভুগছে ৬৫ লাখ মানুষ গ্রেড-১ এ পদোন্নতি পেলেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ডিজি ডা. রেয়াজুল হক ‘বড় কোনো পরিকল্পনা না থাকলে এক দিনে এতগুলো ঘটনা ঘটতো না’

সকল