২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দু সপ্তাহে ৭টি হাতির মৃত্যু, বিলুপ্তির আশঙ্কা

দু সপ্তাহে ৭টি হাতির মৃত্যু, বিলুপ্তির আশঙ্কা - ফাইল ছবি

গত দু সপ্তাহে সাতটি হাতির মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুত বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে মহা-বিপন্ন এই প্রাণীটি।

সর্বশেষ শুক্রবার উত্তরে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের নালিতাবাড়ি থেকে ৪-৫ বছর বয়সী এক হাতির শাবকের লাশ উদ্ধার করে বন বিভাগ। এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে শেরপুর ও চট্টগ্রামে সাতটি হাতির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল।

সম্প্রতি শেরপুর ও চট্টগ্রামে হাতির বিচরণক্ষেত্রগুলো ঘুরে এসে বন্য প্রাণী গবেষক আদনান আজাদ জানিয়েছেন, পাহাড়ি এই বনগুলোর গভীরে প্রবেশ করলেই দেখা যায় বন কেটে সাফ করে হাতির বিচরণক্ষেত্র দখল করে সবজি চাষ করছে স্থানীয়রা।

হাতিরা যেন সবজির ক্ষেত নষ্ট করতে না পারে সেজন্য তারা ক্ষেতের চারপাশে জিআই তারের বেড়া দিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এবং তারগুলো এতোটাই সূক্ষ্ম যে কারো পক্ষে এক হাত দূর থেকে দেখাও সম্ভব না বলে জানাচ্ছেন আদনান আজাদ।

সেই বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়েই মারা গেছে পাঁচটি হাতি। বাকি দুটির মধ্যে একটি মাথায় গুলি লেগে প্রাণ হারিয়েছে এবং সর্বশেষ হাতিটির মৃত্যুর কারণ এখনো জানা যায়নি।

গুলি লাগার ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের চকরিয়ায় মঙ্গলবার ভোররাতে।

হাতিদের ওপর কেন এতো ক্ষিপ্ত স্থানীয়রা?
সন্ধ্যা নামতেই, বিশেষ করে ফসল তোলা, পাকা ধান ও ফলের মৌসুমে এই হাতিদের উৎপাত বেড়ে যায়।

তাদের তাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে টর্চ লাইট সরবরাহ করা হলেও হাতি এখন আর লাইট, আগুন বা মশালে ভয় পায় না বলে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন।

এমন অবস্থায় স্থানীয়রা নিজেদের জানমাল রক্ষায় এমন কঠিন অবস্থানে যেতে বাধ্য হচ্ছে বলে দাবি শেরপুরের নলিতাবড়ির বাসিন্দা কেয়া নকরেকের।

তিনি জানান, হাতিরা মানুষের ফসল নষ্ট করছে। এজন্য আমরা পাহাড়ে যারা থাকি সেখানে খাবারের সঙ্কট হয়। কৃষকরা ঋণগ্রস্ত হয়ে যান। হাতিরা অনেক কাঁচা ঘর গুঁড়িয়ে দেয়। অনেক মানুষ হাতির আক্রমণে মারা গেছে।

মানুষের জীবনের ওপর হুমকি আসার কারণেই মানুষ ক্ষেপে যাচ্ছে। মানুষের জীবন আগে নাকি হাতির জীবন আগে? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এমন নানা কারণে গত দুই বছরে প্রায় ৩৮টি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

এমনটা চলতে থাকলে মহা-বিপন্ন এই প্রাণীটি বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তাফা ফিরোজ।

তিনি জানান, এ ধরনের বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীর নতুন পপুলেশন গ্রোথ কম, মানে একটা মা হাতি কয়েক বছর পর পর বাচ্চা জন্ম দেয়। সে হিসেবে শেরপুরের হাতির গ্রোথ ভালো হলেও যেভাবে হাতি মারা হচ্ছে, তাতে এই প্রজাতির টিকে থাকা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।

বন্যপ্রাণী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন এর হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের এশীয় প্রজাতির পূর্ণাঙ্গ বয়সী হাতির সংখ্যা ২৫০টির কম। এজন্যে এই প্রাণীটিকে বাংলাদেশে মহা-বিপন্ন বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

বর্তমান আইনে হাতি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি দুই থেকে ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং এক থেকে ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

সেইসাথে হাতির হামলায় কেউ মারা গেলে তিন লাখ টাকা, আহত হলে এক লাখ টাকা এবং ফসলের ক্ষতি হলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের বিধানও রয়েছে।

এ নিয়ে বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এ এস এম জহির উদ্দিন আকনের দাবি, স্থানীয়দের আইন ভাঙার প্রবণতা এবং জনবল সঙ্কটের কারণে তাদের পক্ষে এতো বিশাল এলাকা নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না।

একজন ফরেস্ট গার্ডকে দুই হাজার হেক্টর জায়গা দেখাশোনা করতে হয়। আর ঘটনাগুলো তো নির্দিষ্ট স্থানে ঘটছে না। সব বনাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে হচ্ছে। রাতের আঁধারে কেউ যদি বিদ্যুতের তার পাতে সেটা বের করা অসম্ভব ব্যাপার। আমরা মানা করি, মানুষ শোনে না। চেষ্টা করছি মানুষকে সচেতন করে তুলতে, বলেন আকন।

হাতির জন্য আরেকটি বড় বিপদ হিসেবে দেখা হচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প।

রেলপথটি ২৭ কিলোমিটার জুড়ে হাতির তিনটি বিচরণক্ষেত্রের ভেতর দিয়ে গেছে।

মহা-বিপন্ন এই প্রাণীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে দেশব্যাপী হাতির এই বিচরণক্ষেত্রগুলো দখলমুক্ত করার পাশাপাশি হাতির নিরাপত্তার স্থানীয় মানুষদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
কুলাউড়ায় শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি অহিংস গণঅভ্যুত্থানের আহ্বায়কসহ ১৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দায় ন্যাশনাল হাসপাতালের ওপর চাপানো ভিত্তিহীন : কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল বন্ধ ঘোষণা স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে পিরোজপুরে একজনের যাবজ্জীবন নড়াইলে ২ ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নোবিপ্রবিতে মানবিকতার আড়ালে হচ্ছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ পুনর্বাসন ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে ‘ডি চক’ যাত্রা, উত্তাল পাকিস্তান জিম্বাবুয়েকে ১৪৫ রানে গুটিয়ে দিলো পাকিস্তান কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বেড়ে ৭ রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ

সকল