মগবাজার বিস্ফোরণ : প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনহারাদের মর্মাান্তিক অভিজ্ঞতা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৮ জুন ২০২১, ১৮:৫৩, আপডেট: ২৮ জুন ২০২১, ১৯:০১
মগবাজারে বিস্ফোরণের পর থেকেই স্ত্রীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন একটি ফার্মেসির কর্মচারী মো: সুজন। কারণ তিনি জানতেন, সেখানকার শর্মা হাউসে ৯ মাসের মেয়ে আর ১৩ বছরের ভাইকে নিয়ে শর্মা খেতে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী জান্নাত বেগম।
বিস্ফোরণের পরপর তিনি মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মেয়ে সুবহানার লাশ পান।
এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে পান স্ত্রীর লাশ। তার শ্যালক আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রোববার রাতে মো: সুজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল, আর কিছুই রইল না। আমার বেঁচে থেকে আর কি হবে?’
মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে ঢাকার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল আহাজারিতে ভরে ওঠে। কেউ কেউ তাদের স্বজনদের খোঁজ করছিলেন, আবার কেউ আহত বা নিহত স্বজনদের পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন।
সুজনের স্বজনেরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, একটি ফার্মেসিতে কাজ করেন সুজন। কিছুদিন আগে তাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন তার ১৩ বছর বয়সী শ্যালক রাব্বী। রোববার তার কাছ থেকেই টাকা নিয়ে ওই রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন তারা।
শুধু মো: সুজন নয়, রোববার মগবাজারের আউটার সার্কুলার রোডের ভবনটিতে বিস্ফোরণের পর আরো অনেককে তাদের স্বজনদের জন্য ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় ছয়জন নিহত আর অন্তত ৬৬ জন আহত হয়েছেন।
কিন্তু হাসপাতালগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। রোববার বিকেল থেকে কমিউনিটি হাসপাতাল, আদ-দ্বীন হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিল রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড়।
আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরে আর কিছু মনে নেই
ময়মনসিংহের স্কুলশিক্ষক মো: কামাল হোসেন একটি কাজে ঢাকায় এসেছিলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হেঁটে হেঁটে মগবাজার থেকে মৌচাকের দিকে একটি চশমার দোকানে যাচ্ছিলেন তিনি। এই সময় বিস্ফোরণের ধাক্কায় তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। কারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে, তা তার জানা নেই।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের বিছানায় শুয়ে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে একটা আগুনের গোল্লা এসে আমাকে ঘুরানো দিয়ে ফুটপাতের উঁচু জায়গা থেকে মেইন রাস্তায় ফেলে দিল। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।’
তার জ্ঞান ফেরে হাসপাতালের বিছানায়। তার শরীরের অনেকটা অংশ পুড়ে গেছে। ডান হাতের কবজি ভেঙ্গে গেছে।
এই সময় তার সাথে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা, মোবাইল, জমির কিছু কাগজপত্রসহ একটি ব্যাগ ছিল। সেগুলো আর পাওয়া যায়নি।
বিস্ফোরণের সময় গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে ছিলেন আবুল কাশেম
প্রায় ২৫ বছর ধরে বাসের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করার পর দেড় বছর আগে ঋণ করে একটি বাস কেনেন ৪৫ বছর বয়সী আবুল কাশেম মোল্লা।
মগবাজারের বিস্ফোরণের সময় তার সেই বাসটি ছিল ঠিক ভবনের সামনে। বিস্ফোরণে বাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। গাড়ির স্টিয়ারিং ধরা অবস্থাতেই মারা যান আবুল কাশেম ।
আবুল কাশেমের ভাই মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঋণ করে ১১ লাখ টাকা দিয়ে আমার ভাই বাসটি কিনেছিল। সেই টাকাও শোধ হয়নি, বাসটাও পুইড়া গেল।’
গাজীপুরে এক মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। দুর্ঘটনার ঠিক আগে আগে তিনি স্ত্রীর সাথে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন।
পরে পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে এসে তার লাশ শনাক্ত করেন। স্টিয়ারিং হাতেই আবুল কাশেমের মৃত্যু হয়েছে বলে তারা শুনতে পেয়েছেন।
সেই গাড়িটি এখনো পড়ে রয়েছে বিধ্বস্ত ভবনটির সামনে।
মোস্তাফিজুর মারা গেলেন ডাক্তার দেখাতে এসে
ইউটিউবের একটি ইসলামিক চ্যানেলের উপস্থাপক ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের বাংলা তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্র ঢাকার শনির আখড়ায় বসবাস করতেন।
তার খালাতো ভাই এস এম মনিরুজ্জামান মাহফুজ সাংবাদিকদের জানান, শনির আখড়া থেকে রোববার বিকেলে মালিবাগে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় ভবনটি থেকে শাটার এসে তার মাথায় আর শরীরে লাগে।
প্রথমে তাকে আদ-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
একজন উদ্ধারকর্মীর বর্ণনা
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বিস্ফোরণের সময় সময় অমল চন্দ্র শীল সাগর তার নিজের সেলুনে কাজ করছিলেন।
এই সময় বিকট একটি শব্দ শুনতে পেয়ে চমকে যান। বাইরে বেরিয়ে প্রধান সড়কে গিয়ে দেখতে পান, মেইন রোডের পাশে রাস্তার কাটা অংশে একজন মানুষ পড়ে রয়েছে, যার একটি কবজি নেই।
আশেপাশে আরো বেশ কয়েকজন পড়ে রয়েছেন।
তখন তিনি ওই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে রাশমনো হাসপাতালে নিয়ে যান।
এরপর ওই হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় তাকে নিয়ে আবার কমিউনিটি হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এরপর আবার তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। এসে তখন দেখতে পান, একজন ভ্যানচালক আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাকে নিয়ে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
তৃতীয়বার ঘটনাস্থলে এসে অবশ্য আর কাউকে পাননি।
তিনি বলছিলেন, ‘মুহূর্তের মধ্যে যে কীভাবে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেল, ভাবতেও পারিনি।’
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা