২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ঈদের ট্রেনে এবার শুধু ‘ইমার্জেন্সি কোটা’

ঈদের ট্রেনে এবার শুধু ‘ইমার্জেন্সি কোটা’ - সংগৃহীত

এবার ঈদ যাত্রায় ট্রেনে সব ধরনের কোটার টিকিট (ভিআইপি) বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ‘ইমার্জেন্সি কোটায়’ কিছু টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো: মিয়াজাহান তার দফতরে নয়া দিগন্তকে ইমার্জেন্সি কোটা থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘বিগত ২৬ বছর ধরে ভিআইপিদের নামে প্রতি ঈদে, উৎসবে আমরা টিকিট ব্লক করার কাজ করতাম। কিন্তু এবার সেই জঞ্জাল থেকে মুক্তি পেয়েছি।’ 

রেলপথ মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় ঈদে ভিআইপিদের ৫ ভাগ ও রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫ ভাগ কোটার টিকিটের সবই এবার বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে তো একটা নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমি টিকিট কেনার জন্য কমলাপুর স্টেশনের কাউন্টারের মধ্যে ৫ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিন্তু টিকিট পেলাম না। আর আপনি একটি চিঠি দিলেন, সাথে সাথে টিকিট পেয়ে গেলেন। কাউন্টারে না দাঁড়িয়েই আপনাদের (ভিআইপি) টিকিট নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। আমার তো মনে হয় কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তটা ভালোই হলো। আগামীকে আমরা শতভাগ টিকিট কাউন্টার অনলাইন করে দেবো। 

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত বছর মন্ত্রী তালিকা তৈরি করে আমাদের দিয়েছেন। কিন্তু এবার আমাদের মন্ত্রী বলে দিয়েছেন, নো তালিকা। আমরাও কোনো তালিকা করছি না। কিন্তু এবার নিয়ম কি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হচ্ছেÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না না, সবার ক্ষেত্রে তো আর এটি হবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে সেগুলো তো দেখতে হবেই। এরপর তিনি বলেন, আমি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে কিছু আবেদন নিয়ে গিয়েছিলাম। একজন এমপি ৬৭টি টিকিট চেয়েছেন, আরেকজন এমপি ৫৪টি টিকিট চেয়ে আবেদন করেছেন। আরেকজন এমপি আবেদন করেছেন তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা যাবেন। এখন আমি স্যার কী করব? তখন তিনি (মন্ত্রী) আমাকে বললেন, ৫৪, ৬৭টি বাদ। এমপির রাজনৈতিক সহকর্মীরটাও বাদ দিতে বলেছেন। তিনি শুধু বলেছেন, মন্ত্রী, এমপি, সচিব, বিচারপতি ও তাদের পরিবারের যদি কোনো টিকিট লাগে তাহলে সেগুলো আমি একমোডেশন করব। এর বাইরে যদি কেউ এসে বলে তাহলে সেগুলো বাদ। তাদেরকে তিনি অ্যাপসে, নেটে অথবা সাধারণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার অনুরোধ করেন। মন্ত্রী-এমপি যারাই টিকিট কাটবেন তাদের প্রত্যেকের ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে নিতে হবে। গতকাল (বুধবার) আমাদের রেলপথ মন্ত্রী মহোদয়ও লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের ভোটার আইডি দিয়ে প্রথম টিকিট কেটেছেন। 

কোটাসংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়াজাহান নয়া দিগন্তকে বলেন, ঈদের টিকিট বিক্রিতে ভিআইপিদের রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫% + ৫% যে কোটা ছিল সেটি এবার নেই। কিন্তু এমনি একটা ইমার্জেন্সি কোটা করে দেয়া আছে। এটি হলো অল্প কয়েকটি টিকিট। ইন্ডিয়ান রেলে বাড়তি দামে ‘তৎকাল কোটায়’ যেভাবে টিকিট বিক্রি করে, আমাদের এখানেও এটা তেমনি তৎকালের মতো। তবে আমরা বাড়তি দাম রাখিনি। এটা একটা সিঙ্গেল কেবিন করে। একজন বিচারপতি যাবেন। তার জন্য সিঙ্গেল কেবিন রাখা আছে। একজন এমপির জন্য সিঙ্গেল কেবিন রাখা আছে। প্রতিবন্ধীর জন্য আছে ১০টি শোভন চেয়ার। আর ঈদের জন্য আছে ১০টি এসি চেয়ার। আর মুক্তিযোদ্ধা হলো, যুদ্ধাহত পঙ্গু যারা তাদের জন্য। ওদের একটা স্পেশাল টাইপের কার্ড আছে। ভিআইপিদের টিকিট দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঈদের আগের ঈদ প্রোগ্রামের আওতায় যদি এক্সাটা ক্যারেজ লাগে সেখানে সাধারণ নাগরিকদের সাথে তারাও যেতে পারবেন। আর রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকিট দেয়ার জন্য আলাদা টিকিটের কাউন্টার করে দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া তাদের জন্য তো আমরা স্পেশাল ট্রেন চালাই। তিনি বলেন, রেলের টিকিটের দায়িত্বও আমার। তাই এবার আমি তো ওপরের নির্দেশে সব টিকিট কাউন্টারে দিয়ে রাখলাম। 

এ দিকে গতকাল ঢাকার রেলওয়ে স্টেশনসহ (কমলাপুর) ৫ জায়গার কাউন্টারে সকাল ৯টা থেকে ১ জুনের টিকিট বিক্রি হয়েছে। এ দিন ২২ মে এর তুলনায় যাত্রীর চাপ একটু ছিল বেশি। আজ শুক্রবার দেয়া হবে ২ জুনের টিকিট। গতকাল ২৫ হাজার ৫৭১টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। 

স্টেশনে আসা টিকিটপ্রত্যাশীরা ট্রেনের আগাম টিকিট অনলাইনে ও অ্যাপসে কাটতে না পারার অভিযোগ করেছেন গতকালও। অনলাইনে বা মোবাইল অ্যাপস থেকে টিকিট কিনতে না পেরে অনেকে কাউন্টারে চলে এসেছেন বলে জানান। 

রাজশাহীগামী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কিনতে ভোর ৫টায় কমলাপুর স্টেশনে আসেন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী নাহিদ হাসান। সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম রাজশাহীর ১ জুনের টিকিটের জন্য বাসার কাছে একটি কম্পিউটারের দোকানে গিয়েছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, অনেক বার চেষ্টা করেও অনলাইনে টিকিট কিনতে পারিনি। এ জন্য কমলাপুর চলে এলাম। পরে বেলা দেড়টার দিকে কাক্সিক্ষত টিকিট পেয়েছি। একই অভিযোগ করেছেন স্টেশনে আসা আরো অনেকেই। গত বছরের মতো এবারো টিকিটপ্রত্যাশীরা সাধারণ টিকিট পেলেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকিট সকালেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে কাক্সিক্ষত টিকিটও পাচ্ছেন না অনেকে। ঢাকা থেকে ৩৩টি আন্তঃনগর এবং ৪টি বিশেষ ট্রেনসহ ৩৭টি ট্রেনের ২৮ হাজার ২২৪টি টিকিট বিক্রি হবে। অ্যাপসে টিকিট না পাওয়ার ভোগান্তি প্রসঙ্গে সিএনথএসবিডির প্রকল্প ব্যবস্থাপক কবিরুল আলম বেলা সাড়ে ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিদিন ১১ হাজার টিকিট থাকে অনলাইনে বিক্রির জন্য। টিকিট বিক্রির প্রথম দিন মোট টিকিটের ৭১ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। এত অভিযোগের পর এতগুলো টিকিট কিভাবে বিক্রি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু স্টেশন দেখভাল করি। বিক্রির তথ্য দিয়েছে সিএনথএসের মূল কার্যালয়ের টেকনিক্যাল বিভাগ। তারা এর ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবে।’ 

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়াজাহান নয়া দিগন্তকে বলেন, আসলে সিএনএসবিডি.কমের টিকিট বিক্রির চিত্রের একটি তালিকা আমরা গুগল থেকে বের করেছি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ৩০ তারিখ থেকে ৩১ মে তারিখে হিট ছিল ১৪০ গুণ বেশি। এ দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত ৫ লাখ ১৮টি হিট হয়েছিল। এর মধ্যে অ্যাকটিভ ইউজার ১৮৬৬ জন সিস্টেমে ঢুকতে পেরেছে। আর ইন্টারনেটে হিট কম হয়েছে। ১ লাখ ৬৪ হাজার। তবে টিকিট নিতে পেরেছে ৩ হাজার ৩৬৮ জন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অ্যাপস সচল রাখতে যে পরিমাণ গতি (স্ট্রেন্থ) থাকার কথা সেটি সিএনএসবিডি.কমের। এই সার্ভারটি হলো ২০১২ সালের সার্ভার।


আরো সংবাদ



premium cement