ইউক্রেনে উৎকণ্ঠায় হাজার দেড়েক বাংলাদেশী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২৩:০৯, আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:১৩
ইউক্রেনে বর্তমানে আনুমানিক এক থেকে দেড় হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন। রাশিয়ার সাথে ইউক্রেন ও পশ্চিমাদেশগুলোর সংঘাতের শঙ্কায় তারা উৎকণ্ঠিত রয়েছেন।
মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম বিবিসির বাংলা বিভাগকে এই তথ্য জানান ইউক্রেনের প্রতিবেশী পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা হোসেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তারা পুরো ইউক্রেনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পূর্ব ইউক্রেনের যেসব এলাকায় সমস্যা রয়েছে, সেখানেও অনেক বাংলাদেশী আছেন, শিক্ষার্থী আছেন।’
তিনি বলেন, যদিও শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন কারণে ইউক্রেন ছাড়ার ব্যবহারিক নানা অসুবিধা আছে, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে ইউক্রেন ছাড়ার কথা ভাবছেন এবং ছাড়ছেনও।
লায়লা হোসেন জানান, ইউক্রেনে বসবাসরত প্রায় ৫০০ বাংলাদেশী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তারা চলে যেতে চাইলে তাদের কী ধরনের সহায়তা দেয়া যাবে, তা নিয়ে তারা ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছেন।
তিনি জানান, পোল্যান্ড ইউক্রেনের সাথে তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পোল্যান্ড সরকার এক ব্রিফিংয়ে আমাদের জানিয়েছে, ইউক্রেনে থাকা তৃতীয় দেশের নাগরিকরা সেদেশ ছাড়তে চাইলে, পোল্যান্ড ১৫ দিনের জন্য তাদের ট্রানজিটে থাকার অনুমতি দেবে।’
ইউক্রেন ঘিরে চলমান সংকটে পূর্ব ইউক্রেনে সরকারি বাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাকামী বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর সোমবার দেশটির পূর্বে বিদ্রোহীদের প্রতিষ্ঠিত দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় রুশ সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এরপর থেকেই ইউক্রেন ঘিরে চলমান উত্তেজনা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
২০১৪ সালে ইউক্রেনে রুশপন্থী সরকারের পতনের পর রাশিয়া দেশটিতে আগ্রাসন চালিয়ে ক্রিমিয়া অঞ্চলটি দখল করে নেয়। পাশাপাশি মস্কোর পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ব ইউক্রেনে বিপুল অঞ্চল দখল করে নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই সংঘর্ষ বন্ধে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্থতায় ২০১৪ সালে বেলারুশের মিনস্কে ইউক্রেন ও রাশিয়া এক চুক্তি করে।
মিনস্ক চুক্তি অনুযায়ী এই অঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় ও দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সরে যাওয়ার বিষয় যুক্ত ছিলো। দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা সরে গেলে ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গণভোটের ব্যবস্থা করবে।
কিন্তু পরস্পরের প্রতি সহিংসতার অভিযোগের জেরে এই চুক্তি আর বাস্তবায়িত হয়নি।
এরই মধ্যে ২০২০ সালে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের ন্যাটো সামরিক জোটের 'ইনহ্যান্সড অপারচুনিটি পার্টনার’ পদ পেলে রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়। নিজ দেশের সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণের শঙ্কায় রাশিয়া ইউক্রেনের যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক জোটে যোগ দেয়ার বিরোধিতা করছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের পর উত্তেজনা নতুন করে বাড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক লাখ সৈন্য ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন করেছে মস্কো।
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, ইউক্রেনে হামলার জন্যই রাশিয়া ওই সৈন্য সমাবেশ করেছে। কিন্তু রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, সামরিক বাহিনীর মহড়ার অংশ হিসেবে ওই সৈন্য সমাবেশ করা হয়েছে।
পরে কিছু সৈন্য সরিয়ে নেয়ারও ঘোষণা দেয় রাশিয়া।
কিন্তু তাতেও ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো আশ্বস্ত না হয়ে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সব সৈন্য সরিয়ে নেয়ার আহ্বান অব্যাহত রাখে।
সৈন্য সমাবেশের জেরে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্তেজনা প্রশমনে বিভিন্ন পন্থায় কূটনেতিক সমাধানের চেষ্টা চলছিলো।
কিন্তু নতুন করে বিদ্রোহীদের বিষয়ে রাশিয়ার পদক্ষেপ দুইপক্ষের মধ্যে যুদ্ধকে প্রায় অনিবার্য করে তুলেছে।
সূত্র : বিবিসি