২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

করোনায় আমিরাত : খাদ্য সঙ্কটে লকডাউনে থাকা বাংলাদেশীরা

করোনায় আমিরাত : খাদ্য সঙ্কটে লকডাউনে থাকা বাংলাদেশীরা - নয়া দিগন্ত

সংযুক্ত আরব আমিরাতে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে জনসাধারণকে মুক্ত রাখতে লকডাউন সিস্টেম যত দীর্ঘতর হচ্ছে, তত বেশি মানুষের কাছে খাবারের অভাব বেড়ে চলেছে। মানুষের স্থির জীবন যাত্রায় নেমে এসেছে যেমন একঘেয়েমিতা, তেমনি খাদ্য সঙ্কটে কর্মহীন মানুষের হাহাকার ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

দুবাইয়ের যেসব এলাকায় আবাসিক ভবনে সম্পূর্ণভাবে লকডাউন করা হয়েছে সেসব এলাকায় আমিরাত সরকার সরকারিভাবে খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছে। অনান্য এলাকার অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশী খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশী খাবার সঙ্কটে পড়েছে তাদেরকে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলা হলেও অনেকের অভিযোগ, কনস্যুলেটের দেয়া নাম্বারে ফোন করলে ঠিকমতো ফোন রিসিভ করা হচ্ছে না ।

কোনো কোনো প্রবাসীর অভিযোগ, কমিউনিটি নেতাদের পক্ষ থেকে অনুরোধের দীর্ঘ তালিকা থাকার কারণে ওই তালিকা অনুযায়ী কনস্যুলেট অগ্রাধিকার দিয়ে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করে চলেছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের এক কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি সত্যি নয়, আমরা যাদেরকে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করছি তাদের ব্যাপারে সঠিক ভাবে জাস্টিফাই করে খাদ্যদ্রব্য দিচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কনস্যুলেটে পাঁচটি টেলিফোন নাম্বার ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা হয়েছে। প্রকৃত অর্থে খাদ্যদ্রব্যের সঙ্কটে পড়া মানুষগুলোকে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কেননা অসহায় মানুষের হক একজন সাবলম্বী মানুষকে দিয়ে অন্যের হক নষ্ট করা যায় না। তবে দেখা গেছে যাদের বাসায় খাদ্যদ্রব্য মজুদ রয়েছে এবং যাদের খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে, তারাও খাদ্যের জন্য টাই স্যুট পরে লাইনে দাঁড়াতে ।

বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, মানুষের চাহিদার তুলনায় আমাদের কাছে খাদ্যের মওজুদ অপ্রতুল।

তিনি বলেন, দুবাইতে এ মুহূর্তে আড়াই হাজার ব্যক্তি খাদ্যের জন্য আবেদন করেছে। শারজাহতে রয়েছে আড়াই থেকে তিন হাজার ব্যক্তির খাদ্যের চাহিদা। তবে সবচেয়ে খাদ্যের চাহিদা বেশি রয়েছে আজমানে। এ অঞ্চলে ৫,০০০ ব্যক্তি খাদ্যের জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ কন্সুলেট দুবাইতে ।

পাশাপাশি উম্মুল কোয়েনে ১৫০০ ব্যক্তি খাবারের জন্য আবেদন করেছে। রাস-আল-খাইমায় খাদ্যের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২,০০০ ব্যক্তির। সবচেয়ে কমসংখ্যক চাহিদা রয়েছে ফুজাইরায়। এখানে খাদ্য সঙ্কটে পড়া প্রবাসীর আবেদনের সংখ্যা ৪০০ মতো হবে বলে ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কর্মকর্তা জানান যাচাই-বাছাইয়ে দেখা গেছে অধিকাংশ লোকজন খাদ্য সঙ্কটে না পড়লেও পরিস্থিতি বুঝে তারা খাদ্য মজুদ করে রাখতে চাই।

তিনি বলেন, অনেকে আবার তাদের স্পন্সর থাকা সত্ত্বেও কন্সুলেটে খাদ্যের জন্য ধর্না দিচ্ছেন। তিনি বলেন আমরা এই অবস্থা বিবেচনায় রেখে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি ।

তিনি বলেন, যেসব ব্যক্তি প্রকৃত অর্থে নিঃস্ব এবং যাদের কোনো স্পন্সর নেই, তাদেরকে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর যারা সামর্থ্যবান তাদেরকে অনুরোধ করব, তারা যেন এগিয়ে আসেন এই সঙ্কট মোকাবেলায়।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় কোভিট-১৯ প্রাদুর্ভাবে লকডাউনের কারণে খাদ্য সঙ্কটে পড়া বাংলাদেশীদের খাদ্য সঙ্কট এড়াতে বাংলাদেশ সরকার আমিরাতের জন্য ২০ লাখ টাকার খাদ্যদ্রব্যের বরাদ্দ দিয়েছেন। তবে এখনো পর্যন্ত এই অর্থ পুরোপুরি আমিরাতের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে এসে পৌঁছেনি। সচেতন প্রবাসীদের বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য এ বরাদ্দ অত্যন্ত অপ্রতুল। তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে চিন্তা করতে হবে। কেননা এই অঞ্চলে সিংহভাগ প্রবাসী হচ্ছে শ্রমিক।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সৌদি আরবের পর আমিরাত হচ্ছে শ্রমিক সংখ্যায় দ্বিতীয়। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের হিসেবেও এ সংখ্যা অনুরূপ। আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা ১০ লাখের উপর হলেও শ্রমিকের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় সাত লাখের উপরে। এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিকদের জন্য আপদকালীন সময়ে খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় কোনো বরাদ্দ থাকলে তা পর্যাপ্ত পরিমাণ হওয়া উচিত ছিল বলে সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশীরা মনে করেন।

অভিজ্ঞ প্রবাসীরা আরো জানান, কোভিট-১৯-এর প্রাদুর্ভাব আর কত দিন চলবে তা কিন্তু অনিশ্চিত। এর প্রাদুর্ভাব অব্যাহত থাকলে এ অঞ্চলের লকডাউন সিস্টেমও দীর্ঘ হতে পারে। এমতাবস্থায় প্রবাসে অবস্থানরত সামর্থ্যবান প্রবাসীদের সামর্থ্য ও ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হতে পারে। তাই মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় বিশেষ নজর রাখতে হবে।

এদিকে কোভিট ১৯ প্রাদুর্ভাবে সঙ্কটে পড়া প্রবাসীদের সহায়তায় আমিরাতে যেসব সংগঠন এবং ব্যক্তিবিশেষ এগিয়ে এসেছেন তাদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক সংগঠন বাংলাদেশ কনস্যুলেটের মাধ্যমে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল দুবাই এবং বাংলাদেশ বিজনেস এসোসিয়েশন আবীর কোভিট-১৯ প্রাদুর্ভাবে খাদ্য সঙ্কটে পড়া প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ কন্সুলেটের মাধ্যমে বড় বাজেটে সহায়তা করেছেন।

কনস্যুলেটে ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে সহয়তা করেছেন খাদ্য সঙ্কটে পড়া প্রবাসীদের জন্য। তাছাড়া বাংলাদেশ সমিতি আবুধাবি, বাংলাদেশ সমিতি দুবাই, বাংলাদেশ সমিতি সারজা, বাংলাদেশ সমিতি ফুজাইরা, বাংলাদেশ সমিতি উম্মুল কোয়েন, বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম আজমান, ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফোরাম, ইয়াকুব সুনিক ফাউন্ডেশন, বাবকো গ্রুপ সাংগঠনিক ও কোম্পানির তরফ থেকে খাদ্য সঙ্কটে পড়া প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

রাজনৈতিকভাবেও অনেক সংগঠন এগিয়ে এসেছেন খাদ্য সঙ্কটে পড়া কর্মহীন প্রবাসীদের পাশে। বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইউএই কেন্দ্রিয় কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আল আইন কমিটি, বৃহত্তর চট্টগ্রাম জাতীয়তাবাদী ফোরাম দুবাই, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন রাস-আল-খাইমা, বঙ্গবন্ধু পরিষদ দুবাই, বঙ্গবন্ধু পরিষদ আল আইন,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ইউ এ ই কেন্দ্রীয় কমিটি।


আরো সংবাদ



premium cement
৭ উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরেছে বাংলাদেশ লাখ টাকার প্রলোভনে শাহবাগে এত লোক কিভাবে এলো? কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদির মৃত্যু হিজবুল্লাহ কমান্ড সেন্টারে ইসরাইলি হামলা রাজশাহীতে প্রথম আলো পত্রিকায় আগুন ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে : পররাষ্ট্র সচিব আড়াইহাজারে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ১৬ শ্রম সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রগতিতে মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রশংসা আইপিএলে রেকর্ড গড়লেন ১৩ বছর বয়সী বৈভব সিলেটে ট্রাক ও বাসচাপায় নিহত ২ মানিকগঞ্জে প্রলোভন দেখিয়ে শাহাবাগে লোক নেয়ার মূলহোতা দবিরসহ আটক ৫

সকল