ফুলে-ফলে সবুজের মুগ্ধতা
- সুমনা শারমিন
- ২৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা। এবার মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে সারা দেশে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গত বুধবার বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে বাণিজ্যমেলার মাঠে চলছে বৃক্ষমেলা। মাসব্যাপী এ মেলা চলবে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত। গতকাল মেলা ঘুরে এসে লিখেছেন সুমনা শারমিন
সকাল থেকেই শ্রাবণের আকাশে তপ্ত ছিল রোদ। নীল আকাশে উজ্জ্বল ঝলমলে সোনালি কারুকাজ। ঝিরিঝিরি বাতাসের স্নিগ্ধতায় মোড়ানো পড়ন্ত বিকেল। আকাশে মেঘের গর্জন। হঠাৎ একপশলা বৃষ্টিতেই জৌলুস ফিরে পেয়েছে সবুজ গাছগুলো। চারপাশে বিচিত্র ধরনের মনোমুগ্ধকর ক্যাকটাস, হরেক রকমের ছায়াতরু, লতা, গুল্ম, ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক নানা প্রজাতির উদ্ভিদ। শত শত দুর্লভ বাহারি গাছে সাজানো স্টলগুলো দেখে মনে হয় এ যেন সবুজের সমাহার।
মেলায় প্রবেশ করলেই মনে হয় প্রকৃতির এক ভিন্ন জগৎ। কারণ মেলাজুড়েই সব ব্যতিক্রমী গাছের প্রদর্শনী। একগাছে ১৩ প্রজাতির আম মেলায় এবার নতুনত্ব এনেছে। খাটো গাছগুলোর শাখা-প্রশাখায় ঝাঁপিয়ে এসেছে টসটসে রসালো আম, লেবু, জাম্বুরা, চায়না কমলা, আমড়া, আমলকী, লটকন, লাল করমচা, থোকায় থোকায় জামরুল, কামরাঙ্গা, পেঁপে ও পেয়ারাসহ বাহারি ফল। বৃক্ষপ্রেমীদের দৃষ্টি কেড়েছে ফলে ভরা এ বামন গাছগুলো। সবুজের আড়ালেই দর্শনার্থীদের চোখ কেড়ে নিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফল ও ফুল।
ড্রাগন নামটা শুনলেই যেন কেমন ভয় ভয় লাগে। তবে বৃক্ষমেলায় যে ড্রাগন আছে তা কিন্তু ভিন্ন ধরনের। এর গায়ের রঙ এত সুন্দর যে, চোখ আটকে যায়। সরু কাণ্ডে গাঢ় সবুজ মনোমুগ্ধকর পাতা, বর্ষায় যেন ফিরে পেয়েছে তার জৌলুশ। শাখা-প্রশাখায় থোকায় থোকায় লাল টকটকে ফলে নুয়ে পড়েছে লতানো ডালগুলো। কাণ্ডের চেয়েও ফলের আকার বেশ বড়। বাংলাদেশে এ জাতটি এসেছে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে। ড্রাগন ফল নিয়ে দর্শনার্থীদের জটলা দেখা গেছে রশীদ নার্সারির স্টলে।
ছুটির দিনে রামপুরা থেকে পুরো পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছিলেন রবিউল ইসলাম। ঘরের শোভাবর্ধনকারী গাছ কিনেছেন তিনি। সাথে আসা সহধর্মিণী আর মেয়েরা মেলায় ঘুরে ঘুরে গাছ, ফুল ও ফল ছুঁয়ে দেখেছে। ফুল ও ফলের গাছ দেখেই মা-বাবার কাছে বায়না ধরেছে গাছ কেনার। তাদের আবদারে একটি করমচা গাছ কিনেছেন রবিউল। রাজধানীর ব্যস্ত জীবনে একটু প্রকৃতির সান্নিধ্য পেয়ে ফুল আর ফলের সাথে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিল বাচ্চারা।
বৃক্ষমেলায় রয়েছে দেীশ-বিদেশী অর্কিডের বিশাল ভাণ্ডার। আছে হাড়জোড়া, আমলকী, আপেল, লটকন, নলিনী, আইচাই বেরি, সালাক ফল, ডুরিয়া, ড্রাগন, নাশপাতি, আঙুর ও আলুবোখারা। এ ছাড়া বৃক্ষমেলায় ফলদ ও ফুলের গাছ বিক্রি হচ্ছে। ঝুমকোলতা, ক্যামেলিয়া, জুঁই, চামেলি, কামিনী বেশি বিকোচ্ছে। মধু, ওষুধ, বাঁশ-বেতের তৈরী আসবাব ও প্লাস্টিক ও মাটির তৈজস বিক্রি হচ্ছে টুকটাক। ইটপাথরের এ শহরে বাড়ির আঙিনা, ছাদ বা ব্যালকনিতে একটুখানি সবুজের আবাস গড়তে মেলায় আসছেন অনেক বৃক্ষপ্রেমী। কিনছেন পছন্দের গাছ।
গৃহশোভার জন্য বৃক্ষকে বামন করে রাখার নামই হচ্ছে বনসাই। বৃক্ষমেলায় দর্শনার্থীদের আগ্রহ লক্ষ করা গেছে বনসাইয়ের দিকে। এবারের মেলায় বিভিন্ন আকার, আকৃতি ও রঙবেরঙের বনসাই দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। এক শ’ থেকে তিন লাখ টাকা মূল্যের বনসাই বিক্রি হচ্ছে।
মেলায় সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে শতাধিক স্টল আছে। এসব স্টলে প্রায় এক হাজার জাতের দেশী-বিদেশী ফলজ, বনজ, ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী গাছ, বাগান পরিচর্চার সরঞ্জাম, জৈবসার, বীজ, কীটনাশক, ফুলের টব, গাছের ভিটামিন ইত্যাদি আছে।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, মিরপুর ১,০৫০ প্রজাতির গাছের সংগ্রহ নিয়ে এসেছে এ মেলায়। বন কর্মকর্তা ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, তাদের স্টলে প্রায় ৩০০ জাতের গোলাপ, ২১ জাতের অর্কিড, ৪০ জাতের ক্যাকটাস, শতাধিক প্রজাতির ঔষধি গাছ আছে।
মেলায় পল্লী নার্সারিতে আছে বারোমাসি পেঁপে। বাসার ছাদ বা ব্যালকনিতে ছোট বালতি বা ড্রামে দেড় থেকে দুই ফুট উচ্চতার পেঁপে গাছে সারা বছরই ফলন দেবে। একটি গাছ থেকে প্রতি তিন মাসে ৪০ কেজি পেঁপে পাওয়া যাবে। ফল ধরা একটি গাছ আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করছেন।
সৌদি খেজুর নার্সারি স্টলে ৫০০ থেকে ১২ হাজার টাকায় মরুভূমির ফল খেজুরগাছ বিক্রি করছে। এ স্টলের স্বত্বাধিকারী বলেন, আমাদের গাছ চার বছরের মধ্যেই ফলন দেবে। একটি গাছের গড় আয়ুষ্কাল ১০০ বছর। একটি গাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা লাভ করা সম্ভব।
মেলায় গাছ বিক্রির পাশাপাশি প্রদর্শনীও চলছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত থাকছে সবার জন্য।
ছবি : নূর হোসেন পিপুল