রাজধানীর হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী
- ফয়েজ হিমেল
- ২৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
কয়েক বছর ধরে বর্ষা মওসুমে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একট বেশিই লক্ষ করা যাচ্ছে। এ সময় মশার উপদ্রব বেশি হওয়ায় এমনটি হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, জুলাই মাসে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ১৯ জুলাই পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি এলাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ৩৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী। গত দুই মাসে এ রোগে অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব কম হলেও রাজধানীর ১৯টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তারে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ভারী বর্ষণের ফলে এডিস মশাবাহিত রোগ আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে জনগণকে সতর্ক করেছে সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ঢাকায় প্রতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। এ সময়কে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরের মওসুম ধরা হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে আগাম বৃষ্টি হওয়ায় মশার উপদ্রব আগে থেকেই বেড়ে গেছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে এডিস মশার লার্ভা খুঁজে পেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা। সম্প্রতি এক অভিযানে ১৮টি বাড়ির মধ্যে ১১টি বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন তারা। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মিলছে লার্ভা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা পরিচালিত একটি জরিপের ফল গত মে মাসে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয় চিহ্নিত ১৯টি এলাকায় চিকুনগুনিয়া বাহক মশার ঘনত্ব বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতর ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার জন্য দুই সিটির যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে, সেগুলোর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) আছে বনানী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, গাবতলী, মগবাজার, মালিবাগের একাংশ, মিরপুর-১, মহাখালী ডিওএইচএস, নাখালপাড়া, পূর্ব শেওড়াপাড়া, টোলারবাগ ও উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টর। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ধানমন্ডি ১, এলিফ্যান্ট রোড, গুলবাগ, কলাবাগান, মেরাদিয়া, মিন্টো রোড, বেইলি রোড ও শান্তিনগর।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে চিকুনগুনিয়ার রোগী নেই। তবে ডেঙ্গু রোগী আছে। সংখ্যায় পাঁচ-ছয় জনের বেশি না। প্রতি বছরের চেয়ে এবার রোগীর সংখ্যা কম।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা কোনো ডেঙ্গুর রোগী পায়নি। গত বছর এ সময়ে ২১ জন রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছি। এ বছরে আমরা এখনো চিকুনগুনিয়ার কোনো রোগী এখনো পায়নি। আমরা ডেঙ্গুর জন্য কেবিন ব্লকে আমরা চারটি বেড আলাদা করে প্রস্তুত রেখেছি।’
বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা: এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘সাধারণত মশা বাড়লে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে একবার আক্রান্ত হলে এ রোগ সাধারণত দ্বিতীয়বার হয় না। এ রোগ প্রতিরোধে মশা নিধন করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। নিজের ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা, ঘরের আনাচে-কানাচে, আঙিনা বা বারান্দায় ফুলের টব থাকলে এগুলোয় যেন পানি জমে না থাকে, সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। সব সময় মনে রাখবেন নিজের প্রটেকশন নিজেকেই নিতে হবে। এ জন্য শোয়ার সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন মশা না কামড়ায়। শিশুরা যারা হাফপ্যান্ট পরে ঘুরে, তারা ফুলপ্যান্ট পরবে। মোটকথা, মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য যা যা করা দরকার, তা করতে হবে। কর্তৃপক্ষকে ঘরের বাইরের মশা মারার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।