রাজধানীজুড়ে ঈদ কেনাকাটার ধুম
- সুমনা শারমিন
- ১২ জুন ২০১৮, ০০:০০
কেউ বন্ধুদের সাথে, কেউবা পরিবার-পরিজন নিয়ে হাজির হন রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমলে। ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠছে ঈদের বাজার। নিজের ও প্রিয়জনের জন্য পছন্দের পোশাক কিনতে রাজধানীর মার্কেট এবং শপিংমলগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষণীয়। বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, তাদের বিক্রি বাড়ছে। এখন আর দম ফেলার ফুরসত মিলছে না। যদিও যানজট ঝামেলা এড়াতে অনেকেই মার্কেটে না গিয়ে এখন অনলাইনে শপিং করছেন। রাজধানীর ঈদ বাজার নিয়ে লিখেছেন সুমনা শারমিন
রাজধানীর গাউছিয়া মার্কেটের সামনে কথা হচ্ছিল আজিমপুরের বাসিন্দা রোমেনা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ‘আগামী শুক্রবারই হয়তো শেষ রোজা। এরপর ঈদ। তার আগেই পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাব। তাই সবার জন্য কেনাকাটা করতে হবে। রমজান মাসের তৃতীয় শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীবাসীর কেনাকাটার ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। যেমন ছিল ভিড়, তেমনি ছিল বিক্রি। ফুটপাথ থেকে অভিজাত বিপণিবিতান, পাড়া-মহল্লার বুটিক হাউজ থেকে নামীদামি ব্র্যান্ডের আউটলেটÑ সর্বত্রই ছিল রমরমা কেনাকাটা।
রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোড, ইস্টার্ন প্লাজা, মালিবাগের মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিংমল, আনারকলি মার্কেট, কনকর্ড টুইন টাওয়ার, ইস্টার্ন প্লাস, নাভানা বেইলি স্টার, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, পলওয়েল, গাজী ভবন, পীর ইয়েমেনী, মগবাজারের বিশাল সেন্টার, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্ক, গুলশান পিংক সিটি, নাভানা টাওয়ার, কনকর্ড পুলিশ প্লাজা, বঙ্গবাজার, রাজধানী সুপারমার্কেট ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেল দারুণ জমে গেছে ঈদের কেনাকাটা। ক্রেতার ভিড়ের এ দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল, পুরো রাজধানীই যেন এক বিপণিবিতান!
নিউমার্কেট ও এর আশপাশের এলাকার বিপণীবিতানগুলোতে গতকাল ছিল ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। এসব বিপণিবিতানের শাড়ি, রেডিমেড সালোয়ার-কামিজ এবং শিশুদের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। এখানে দরদাম করে সাধ্যের মধ্যে সাধের পোশাক কিনতে দেখা যায় ক্রেতাদের।
নিউমার্কেটের বিক্রয়কর্মীরা বলেন, গত শুক্রবার সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল। তবে আজ (গতকাল) অন্যান্য দিনের চেয়ে চাপ সবচেয়ে বেশি। প্রচুর ভিড় যেমন হয়েছে, তেমনি বিক্রিও হয়েছে দারুণ।
নিউমার্কেটের অনেক দোকানের সামনেই ‘একদর’ সাইন বোর্ড নজরে এসেছে। তবে সেখানেও দরদাম করে কিছুটা ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানীর অন্যতম জনপ্রিয় মার্কেট চাঁদনী চক ও গাউছিয়ায় তরুণীর ভিড় ছিল। হাল ফ্যাশনের পোশাক থেকে শুরু করে অলঙ্কার ও প্রসাধনী, নারীদের সবকিছুই রয়েছে এ দুই বিপণিবিতানে।
নিউমার্কেট এলাকার বিপণিবিতানগুলোর সামনের খোলা জায়গা ও রাস্তার পাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা ছিল বেশি। গাউছিয়া ও নিউমার্কেটের ফুটপাথ ঘিরে রয়েছে নারীদের পোশাক ও স্যান্ডেলের বিশাল বাজার। ঢাকার সব বয়েসী নারীর কাছে এ স্যান্ডেলের বাজার খুবই জনপ্রিয়। দাম ১০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। নারীদের সালোয়ার-কামিজের দোকান বসে গাউছিয়া ও নিউমার্কেটের সামনের ফুটপাথে।
গতকাল বসুন্ধরা সিটির প্রবেশপথগুলোতে ছিল ক্রেতার সারি। ভেতরে চলন্ত সিঁড়িতে উঠতে লাইন ধরে খানিকটা সময় দাঁড়াতে হয়েছে। বিপণিবিতানটির আড়ং, স্মার্টটেক্স, জেন্টেল পার্ক, ইয়োলো, দর্জিবাড়ির মতো নামী ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতেই ছিল বেশির ভাগ ক্রেতার আনাগোনা।
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী মৌচাক মার্কেট মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রেতাদের, বিশেষ করে নারীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এখানে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও নন-স্টিচ সালোয়ার-কামিজের রয়েছে বিশাল আয়োজন। গতকাল বিপণিবিতানটি ছিল ক্রেতায় ঠাঁসা। মৌচাক মার্কেটের বিক্রেতারা জানালেন, এখানে বেচা-বিক্রি ভালো। তবে মালিবাগের হোসাফ মার্কেটে ক্রেতা উপস্থিতি খুব একটা দেখা যায়নি। শান্তিনগরের কনকর্ড টুইন টাওয়ার ও কাকরাইলের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিতে পাকিস্তানি ও ভারতীয় সালোয়ার-কামিজে কাজের বৈচিত্র্য মন কেড়েছে ক্রেতাদের।
নিউ বেইলি রোডের বিভিন্নি শপিং সেন্টারের আউটলেটে গতকাল ছিল ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন বিক্রয়কর্মীরা। ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার ও নাভানা বেইলি স্টারেও গতকাল ছিল ক্রেতার ভিড়। এ দুই বিপণিবিতানে নামীদামি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি রয়েছে দেশী বুটিক শপও।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার যমুনা ফিউচার পার্কে সকাল থেকেই ক্রেতার ভিড় দেখা যায়। বেশি ভিড় দেখা যায় জুতা, স্যান্ডেল, পাঞ্জাবি ও অলঙ্কারের দোকানগুলোতে। রামপুরা থেকে পরিবার নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে ফিউচার পার্কে এসেছেন রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানে সব ব্র্যান্ডের পণ্য একই ছাদের নিচে মিলছে। তাই চেষ্টা করছেন পুরো পরিবারের কেনাকাটা এখানেই শেষ করতে। ঈদের দিনে পছন্দের পোশাকের সাথে মিলিয়ে চাই প্রসাধনীও। তাই অলঙ্কার আর কসমেটিকসের দোকানেও ছিল সব বয়েসী নারীর ভিড়। ঈদের পোশাকের সাথে মিলিয়ে গয়না কিনতে দেখা গেছে অনেককেই। যমুনা ফিউচার পার্কের মতোই গুলশান ও বনানীর বিপণিবিতানগুলোতে গতকাল ছিল ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়।
উত্তরা এলাকার ট্রপিক্যাল আলাউদ্দীন টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্স, হিমালয় সেন্টার, বেলী কমপ্লেক্স, কুশল সেন্টার, রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স, রাজউক কর্মচারী কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, রাজউক রাজীব কসমো শপিং কমপ্লেক্স ও মাস্কট প্লাজায় দিনে ক্রেতার ভিড় না থাকলেও বিকেলের পর জমে উঠে কেনাকাটা। তবে তা আশানুরূপ নয় বলেই জানালেন বিক্রেতারা। তবে জলাবদ্ধতার মধ্যেও উপচে পড়া ভিড় ছিল উত্তরার জসীমউদ্দীন রোডের আড়ংয়ে।