২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পুলিশের কিছু সদস্যের অপরাধপ্রবণতা

-

গাজীপুরে তিন বন্ধুকে অপহরণ করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল্লাহ আল মামুন এবং টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার এএসআই মুসফিকুর রহমানকে। এ ধরনের অপহরণ, নির্যাতন, নিপীড়নের ঘটনায় শান্তিপ্রিয় মানুষের মনে দাগ কাটে, ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে! সাধারণ মানুষ হতাশ আর ক্ষুব্ধ হন। বিষয়টি অধিকতর তদন্তের স্বার্থে ইতোমধ্যে থানা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে।

দীর্ঘ দিন দেশের অনেক নাগরিকের অভিযোগ, পুলিশ ও ডিবি পরিচয়ে অপহরণ ও মুক্তিপণের ঘটনা ঘটছে। টাকা না দিলে ক্রসফায়ার, সন্ত্রাসী বা জঙ্গি হিসেবে চালিয়ে দেয়ার হুমকির অভিযোগও পাওয়া গেছে। এসব অপহরণের সাথে কিছু বিপথগামী পুলিশ সদস্যও জড়িত বলে এখন প্রমাণিত হচ্ছে। সর্বশেষ তিন বন্ধুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করার ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যের সাথে ওই তরুণদের আরো দুই বন্ধু, যারা আগে থেকেই পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন, তারাও জড়িত ছিলেন বলে গাজীপুর বিচারিক হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। অপহৃত তিন বন্ধুর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে ওই দুই পুলিশ সদস্যের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন তরুণদের অপর দুই বন্ধু মো: তরিবুল্লাহ, মনির হোসেন ও মজনু মিয়া।

ইতঃপূর্বে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পাওয়া ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সুভাষ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী রীণার ব্যাংকে স্থায়ী আমানত বা এফডিআর হিসাবে প্রায় ৯ কোটি টাকার হদিস মিলেছিল। কক্সবাজারের টেকনাফে এক ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগে মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাতজনকে আটক করা হয়েছিল।

স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশের মানুষ হয়েও নানা ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকাই যেন এখানকার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে চলতে নিরাপত্তা নেই, নদীতে নিরাপত্তা নেই, বাসাবাড়িতে নিরাপত্তা নেই, কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে চৌদ্দবার নিরাপত্তার কথা ভাবতে হয়, কিছু খাওয়ার, পান করার আগে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়। মা-বাবাকে স্কুলপড়–য়া ছেলেমেয়েদের অপহরণজনিত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়, তাহলে জনগণের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা আছে কী?

গাজীপুরের পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামুন ও মুসফিকুর রহমান একসময় গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) একসাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় থেকে তাদের মধ্যে সখ্য। ডিবিতে দায়িত্ব পালনের সময় তারা নিরীহ মানুষদের ধরে নিয়ে টাকা আদায় করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশে থাকার সময় আসামি ধরতে গিয়ে আসামির বাড়ি থেকে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বলেছেন ‘সাধারণ মানুষকে যেন হয়রানি না করা হয়’। আইজিপি বলেছেন ‘মানুষ যেন শান্তিতে ঘুমাতে পারে’।

মুক্তিপণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নিখোঁজ নাগরিকের সন্ধান দিতে না পারা ও পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু কোনো স্বাধীন, সভ্য দেশে অগ্রহণযোগ্য। মানবাধিকার সুরক্ষায় সাংবিধানিকভাবে সরকার দায়বদ্ধ। নাগরিক নিখোঁজ থাকবে আর তার পরিবার-পরিজন দ্বারে দ্বারে কান্নাকাটি করবে, বিচার চাইবে, এটি সভ্যসমাজের লক্ষণ নয়। গবেষণা সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আইন লঙ্ঘনের দায়ে পুলিশকে শাস্তি দেয়ার ঘটনা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম।

পুলিশ বাহিনীর ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে এএসআই মামুন এবং মুসফিকুরের মতো এমন দুই-চারজন পুলিশই যথেষ্ট। শুধু ‘প্রত্যাহার’ করলে হবে না। এসব পুলিশ সদস্যকে বিচারের মুখোমুখী করা জরুরি। কিছু বিপথগামী পুলিশ সদস্যের অপকর্মের দায় গোটা বাহিনীর ওপর চাপিয়ে দেয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর ওপর অবিচারের নামান্তর। তাই অতি দ্রুত এসব অপরাধপ্রবণ পুলিশ সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে পুলিশ বাহিনীর ভাবমর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে।
abunoman1972@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement