২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মহাজোটে যোগ দেয়ার নেপথ্যে

মহাজোটে যোগ দেয়ার নেপথ্যে - ছবি : সংগৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোট-মহাজোট সম্প্রসারণে বেশ আগে থেকেই তৎপর রয়েছে আওয়ামী লীগ। জোটের পরিসর বাড়াতে এক দিকে আওয়ামী লীগ বেশ কিছু দলের সাথে যেমন যোগাযোগ রক্ষা করেছে, তেমনি সরকারি জোটে ভিড়তে অনেকেই দীর্ঘ দিন ধরে দেনদরবারও করে আসছে। সমীকরণ না মেলায় এখনো ঝুলে আছে জোট-মহাজোট সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া। তবে জোট বা মহাজোটে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা দলগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই ভুঁইফোড়, অনিবন্ধিত ও এক নেতাসর্বস্ব বলে রাজনীতির মাঠে ব্যাপক আলোচনা আছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ইসিতে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার পাঠানো চিঠিতে ১৬টি দলের নাম পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে নিবন্ধিত দল আটটি। অনিবন্ধিত আট দলের মধ্যে রয়েছে গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাসদ, কৃষক শ্রমিক পার্টি ও তৃণমূল বিএনপি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে ইউনাইটেড ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (ইউএনএ) গঠিত হয়। ওই জোটে আছে ৫৮টি দল। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিএনএ জোটে আছে ৩১টি দল। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে আছে ৮টি দল এবং ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ও তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপির নেতৃত্বাধীন জোটে আছে ১৮টি দল। ফলে এসব দল যুক্ত হলে আওয়ামী লীগ জোট-মহাজোট মিলে দলের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১২৯টি। এর বাইরে আরো অন্তত এক ২০ দল সরকারি জোটের সাথে যুক্ত হতে যোগাযোগ রক্ষা করছে। সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট এবং মোস্তফা আমীন ফয়সালের নেতৃত্বাধীন জাকের পার্টি মহাজোটে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে শুধু জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি ও বিকল্পধারার নিবন্ধন আছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইসিতে পাঠানো চিঠিতে ১৬টি দলের মধ্যে মাত্র ৮টি দলের নিবন্ধন আছে। 

জানা গেছে, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বিএনএ জোট গেল ১৮ জুলাই ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাথে বৈঠক করে ক্ষমতাসীন জোটে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। এ সময় বিএনএ জোটের শরিক তৃণমূল বিএনপি, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স, সম্মিলিত ইসলামিক জোট, কৃষক শ্রমিক পার্টি, একমত আন্দোলন, জাগো দল, ইসলামিক ফ্রন্ট ও গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জোটে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে প্রগতিশীল জোট। যেখানে অন্তত নাম সর্বস্ব ১০টি দল রয়েছে। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে বৈঠক করে জোটে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বিকল্পধারার মহাসচিব ও যুগ্ম মহাসচিব। বৈঠক শেষে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নিজেদের দাবি আদায়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এখন পর্যন্ত আশাবাদী বলেই মহাজোট গঠনের বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা রয়েছে।

জোটের শীর্ষ একাধিক নেতা মনে করেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট একটি আদর্শিক জোট। আগামী নির্বাচনের জন্য এই জোটে নতুন করে কোনো দল যুক্ত হচ্ছে না, এটি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে মহাজোট সম্প্রসারণ করার ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই। মহাজোটে অন্তর্ভুক্ত আছে জাতীয় পার্টি। জোটপ্রধান চাইলেই আগামী নির্বাচনে মহাজোট সম্প্রসারণ হতে পারে। এরই মধ্যে অনেকের সাথে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। দেখা যাক, মহাজোটে শেষ পর্যন্ত কোন কোন দল যুক্ত হয়। জোটের রাজনীতির সমীকরণ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। 

ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিএনএ আওয়ামী লীগ জোটে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে জোটের শীর্ষ এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা হলেন ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তারা জিয়াউর রহমানের সাথে রাজনীতি করেছেন। এখন দু’জনই আদর্শচ্যুত। বিশেষ করে বি. চৌধুরী ও তার দল বিকল্পধারা আসন ভাগাভাগিতে বনিবনা না হওয়ায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেননি। কিন্তু তারা অভিযোগ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী দল জামায়াত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঐক্যফ্রন্টের সাথে যুক্ত আছে। এ জন্য তাদের সাথে রাজনীতি করা সমীচীন নয়।

এ অভিযোগে যদি তারা ঐক্যফ্রন্টে না যায়, তাহলে যখন বি. চৌধুরী বিএনপিতে থেকে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন তখন তো তারা জামায়াত নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি। তারা তো বলেননি, জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী দল। ওই নেতার মতে, যুক্তফ্রন্ট বা বি. চৌধুরীরা মূলত সরকারি জোটের সুবিধা নিতে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনে তারা চিঠি দিয়েছে। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃতদের সরকারি জোটে যুক্ত হওয়া নিয়ে জোট-মহাজোটে বিভিন্ন প্রশ্নও তৈরি হয়েছে। যাদের নীতিগতভাবে অবস্থান দুর্বল সাধারণত তারা এমন করে থাকে বলে মনে করেন নেতারা। ফলে তাদের মহাজোটে যুক্ত হওয়া নিয়েও নানা সংশয় রয়েছে। এখানে দেন-দরবারের বিষয়-আশয় আছে। বনিবনা হলেই কেবল মহাজোটে যুক্ত হতে পারে। এটি শুধু যুক্তফ্রন্ট, বিকল্পধারা বা বিএনএর ক্ষেত্রে এমন নয়- এটি সব দলের ক্ষেত্রে একই নীতি থাকছে। 

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম শরিক ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকারি জোটে অনেক দলই আসতে চায়। কিন্তু ১৪ দলীয় জোটে আপাতত আর কোনো দল যুক্ত হচ্ছে না; যা যুক্ত হবে মহাজোটে। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছু দল যোগাযোগও করেছে। সেটি আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে, এখনো চূড়ান্ত রূপ পায়নি। জোট প্রধান চাইলে ওই সব দলের মহাজোটে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন দলের সাথে আলোচনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, অনেক দল আগ্রহ প্রকাশ করছে। যদি এটি কোনো মেরুকরণের দিকে আগায়, কৌশলগত জোট হয় সেটি তো আর গোপন থাকবে না। 

আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন এলেই ছোট দলগুলোর একটু কদর বাড়ে। এটি ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। তিনি বলেন, ছোট দল নিয়ে জোট গঠন করলে লাভ-ক্ষতি দুটোই আছে। যদি ওই সব দলের গ্রহণযোগ্যতা থাকে তাহলে ভোটারদের মধ্যে এর প্রভাব পড়ে। 
ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ছোট ছোট দলকে নিয়ে জোটের রাজনীতি শুরু হয় ভারত বিভাগের পর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে।

ওই সময় যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ব্যাপকভাবে জয়লাভ করে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির সাথে আওয়ামী লীগ জোট গঠন করে। নব্বই-পরবর্তী রাজনীতিতে ১৯৯১ সালে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। পরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও জাসদের সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট গঠন করে বিএনপি সরকার গঠন করে। এর পরই ২০০৬ সালে মহাজোট গঠন করে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বিএনপি ছোট ছোট দলকে একত্রিত করে চারদলীয় জোটকে এখন ২০ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন জোটে ১৪টি দলের বাইরে আছে জাতীয় পার্টি। এ দলটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক।


আরো সংবাদ



premium cement
বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যুদ্ধবিরতির মার্কিন চেষ্টার মধ্যে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চিকিৎসাকর্মী নিহত অস্বস্তিতে ক্রেতারা : কমিয়ে দিতে হচ্ছে কেনাকাটা গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪৪ হাজার ছাড়াল আমরা মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে সম্মান করি

সকল