২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

২৫ হাজার বেওয়ারিশ লাশ দাফন-সৎকার করে পদ্মশ্রী পাচ্ছেন ৮২ বছরের শরিফ চাচা

মোহাহম্মদ শরিফ - ছবি : সংগৃহীত

২৫ বছরের বেশি সময় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের লাশ সৎকার করেছেন তিনি। অন্তত ২৫ হাজার মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে তার হাতে। নিরলস এই সেবার জন্যেই এবার ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব পদ্মশ্রী পুরস্কার পেতে চলেছেন ৮২ বছর বয়সী মোহাম্মদ শরিফ।

উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদের পরিচিত মুখ শরিফ। সকলেরই তিনি শরিফ চাচা। পেশায় সাইকেল মেকানিক। কিন্তু নেশা সৎকারের। ১৯৯২ সালে ২৫ বছরের তরতাজা ছেলে মারা যাওয়া পরে এই কাজ শুরু করেন মোহাম্মদ শরিফ। এখন সেই কাজ চলছে।

এক সর্বভারতীয় গণমাধ্যমকে শরিফ বলেন, ‘‘২৭ বছর আগে আমার ছেলে মোহাম্মদ রইস খান নিখোঁজ হয়। ও সুলতানপুরে গিয়েছিল কেমিস্টের চাকরি নিয়ে। এক মাস পরে ওর পচাগলা লাশ উদ্ধার হয়। খুন করা হয়েছিল ওকে। ওর লাশটা দেখে স্থির করি, কোনো মানুষকে মৃত্যুর পরে এ ভাবে এই অসম্মানিত হতে দেব না।

হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ নেই মোহাম্মদ শরিফের মনে। তিনি নিজেই বলছেন, ‘‘নিজে হাতে অন্তত ৩০০০ হিন্দুকে দাহ করেছি নিয়ম মেনে।’’ পুলিশ স্টেশন হাসপাতাল সর্বত্র অবাধ যাতায়াত শরিফের। মৃত্যুর ৭২ ঘণ্টা পরে সেই লাশ দাবি করতে কেউ না এলেই ডাক পড়ে শরিফের। তিনি এসে লাশগুলো নিয়ে যান যথাস্থানে।

একটি লাশ কবর দেয়ার খরচ ৫০০০ রুপি। দাহ করতেও লাগে অন্তত ৩৫০০ রুপ। সেই টাকা জোগাড় হয় কী ভাবে? শরিফ জানাচ্ছেন, কবরস্থানে হোক বা শ্মশানে , অজস্র বন্ধু রয়েছে তার। কেউ তার থেকে টাকা তো চাননি না উপরন্তু সাহায্য করেন নানাভাবে।

শুধু মৃত মানুষের অন্ত্যেষ্টি নয়, জীবন বাঁচানোর রেকর্ডও রয়েছে শরিফের। ফৈজাবাদ-লখনউয়ে একটি জিপ উল্টে একই পরিবারের কয়েকজন মারা যায় দিন কয়েক আগে। একমাত্র জীবিত সদস্যকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন শরিফ। এই অনন্য মানবিকতারই পুরস্কার পাচ্ছেন শরিফ। খুশি তার আত্মীয় বন্ধুরা। মৃত ছেলের মুখ মনে করে শরিফের চোখে পানি।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement