২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মুসলমানদের পূর্বপুরুষ নিয়ে রামদেবের উদ্ভট দাবি

ভারত
রামদেব - ছবি: সংগৃহীত

অযোধ্যায় রাম মন্দির হবে। এটা দেশের গর্বের সাথে জড়িত। এখানেই না থেমে হিন্দুদের ভগবান রামের মহত্ব বোঝাতে যোগগুরু রামদেব বলেছেন, ‘শুধু হিন্দুদেরই নয়, মুসলমানদেরও পূর্বপুরুষ ছিলেন রামচন্দ্র।’ খবর ওয়ান ইন্ডিয়ার।

রাম মন্দির ইস্যু নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রামদেব বলেছেন, ‘ভোট রাজনীতির সাথে এই মন্দির তৈরির বিষয় যুক্ত নয়।’

রামদেবের কথায়- ‘আমি বিশ্বাস করি অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি হবে। না হলে কোথায় তা তৈরি করবেন? এটা অবশ্যই মক্কা বা মদিনা বা ভ্যাটিকান সিটিতে তৈরি হবে না।’

ভারতের এ যোগগুরুর বক্তব্য, ‘এটা অবিতর্কিত সত্য যে অযোধ্যাই রামের জন্মভূমি। শুধু হিন্দুরাই নন, মুসলমানরাও রামের উত্তরপুরুষ।’

এই বক্তব্য সামনে আসার পর অবশ্য কংগ্রেস ছেড়ে কথা বলেনি। গুজরাট কংগ্রেসের মুখপাত্র মনীশ দোশী বলেছেন, ‘বাবা রামদেবের মতো লোকেরা বিজেপির থেকে সাহায্য পেয়ে চলেছেন। ফলে তাদের জেতাতে এসব কথা বলছেন। লোকসভা ভোটের আগে সাহায্য করছেন। যাতে আরও পাঁচবছর অনেক বেশি সুবিধা ভোগ করতে পারেন।’

কে এই রামদেব?
কলকাতার এবেলা পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, তিল থেকে তাল নয়, তিনি রীতিমতো তৃণ থেকে মহীরূহ হয়েছেন। তার অনেক জীবনী প্রকাশিত হয়েছে। এ বার বাবার জীবনের অন্য দিক নিয়েও প্রশ্ন তুলল নতুন বই।

বইয়ের নাম— ‘গডম্যান টু টাইকুন, দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ বাবা রামদেব’। জুগারনাট প্রকাশনার সদ্য প্রকাশিত বইটির লেখিকা প্রিয়ঙ্কা পাঠক নারিন। শুধুই বাবা রামদেবের প্রশস্তি নয়, এই বইতে পতঞ্জলীর কর্তাকে নিয়ে নানা প্রশ্নও তুলেছেন প্রিয়াঙ্কা।

বছরের পর বছর ধরে নানা যোগাভ্যাসের প্রদর্শন করে বাবা রামদেব এখন বিশ্বখ্যাত। তবে এখন তার আরো বড় পরিচয় পতঞ্জলী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। যিনি নানা অসুখের নিরাময়ের কথা বলেন সেই বাবা রামদেব ছেলেবেলায় কেমন অসুখে ভুগেছেন, কী ভাবে লড়াই চালিয়েছেন, রামদেবের জীবনের সেই সব অধ্যায়ের কথাও বলেছেন লেখিকা প্রিয়াঙ্কা পাঠক নারিন।

সেই সাথে তুলে এনেছেন অনেক কঠিন প্রশ্ন। আর তার মধ্যে লেখিকা সব থেকে বড় প্রশ্ন তুলেছেন রামদেবের গুরু শঙ্করদেবের উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে।

লেখিকা জানিয়েছেন, বাবা রামদেবের গুরু ৭৭ বছরের শঙ্করদেব ২০০৭ সালে আচমকাই উধাও হয়ে যান। আজও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। জানা যায়, একদিন প্রাতর্ভ্রমণে বেড়িয়ে উধাও হয়ে যান তিনি। সেই সময়ে ব্রিটেনের পথে বাবা রামদেব। কিন্তু খবর পেয়ে তিনি ফিরে আসেননি। হরিদ্বারে এখন বাবা রামদেবের যে দিব্য যোগ মন্দির ট্রাস্ট, সেটি এবং তার বহুমূল্য জমি গুরু শঙ্করদেবই দান করেছিলেন।

এমন গুরু উধাও হয়ে যাওয়ার খবর পেয়েও বিদেশ সফর মাঝপথে বাতিল করেননি রামদেব। দু’মাস বাদে রামদেব ফেরেন। পুলিশ তদন্ত চালায় কিন্তু কোনো সমাধানে পৌঁছতে পারেনি। পরে ২০১২ সালে এই তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই নেয় এবং এখনও সেই মামলা চলছে। আজও খোঁজ নেই শঙ্করদেবের।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক তথ্যে প্রকাশ, পতঞ্জলি ব্র্যান্ড, পতঞ্জলি যোগপীঠ এবং দিব্যা যোগী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা বাবা রামদেবের সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা।

রামদেবের পতঞ্জলি নিয়ে এক প্রতিবেদনে বিবিসি বাংলা লিখেছে, মেইড ইন ভারত- বা ভারতের তৈরি। তার কোম্পানির পণ্যগুলোর গায়ে এটা লেখা। হিন্দিতে। বাবা রামদেব মনে করেন তার ব্যবসার সাফল্য এটাই।

ভারতীয় উপাদান দিয়েই এসব তৈরি করা হয়। চুল পড়া বন্ধ করার তেল থেকে শুরু করে টুথপেস্ট - প্রায় সবই আছে তার পণ্যের তালিকায়।

আর সবচে বেশি বিক্রি হয় ঘি, যা গরুর দুধ থেকে তৈরি করা হয়।

মুসলির মতো বিদেশি খাবারও তৈরি করে পতঞ্জলি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হাজার হাজার অনুসারী, টিভিতে ইয়োগা অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ এবং এসবের সাথে আধ্যাত্মিকতার সংমিশ্রণে ফুলে ফেঁপে ওঠেছে বাবা রামদেবের এই ব্যবসা।

এর পেছনে খুব বড়ো একটা কারণ তার ভক্তরা। যারা তার ব্যবসা দেখাশোনা করেন, এই কাজের জন্যে তারা কোনো বেতন নেন না তাদের গুরুর কাছ থেকে। ফলে উৎপাদন খরচও কমে যায়। বাবা রামদেব বলেছেন তার কোম্পানির বিজ্ঞাপন খরচও অন্যদের তুলনায় অনেক কম।

তবে এই কোম্পানির বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। অভিযোগ- কর ফাঁকি, ভূমি দখল ইত্যাদি।


আরো সংবাদ



premium cement