শুধু একতরফা দিয়ে যাওয়াই কি বন্ধুত্ব : রিজভীর প্রশ্ন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:২৫, আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ১৪:৩২
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারত সফরের তৃতীয় দিনে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তিগুলোর খবর জেনে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। এর মাধ্যমে মূলত: স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমুদ্র বন্দর, ফেনী নদীর পানি এবং জ্বালানী সঙ্কটময় বাংলাদেশের গ্যাস ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এটা সংবিধান পরিপন্থী। এছাড়াও নিজেদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে উপকূলীয় নজরদারির জন্য বাংলাদেশে রাডার স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের জনগণ বিনিময়ে কিছুই পায়নি। রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের এই সরকারের নাকি পর্বতের শৃঙ্গের মতো সম্পর্ক। কিন্তু বারবার আমরা হতাশ হই। আমাদের সীমান্তে হত্যার সমস্যার সমাধান হয় না, আমাদের তিস্তার পানির সমস্যার সমাধান হয় না, বর্ষায় ফারাক্কার বাঁধ খুলে দিলে প্রবল বন্যার সৃষ্টি করা হয়, এখনো ভাসছে উত্তরাঞ্চল- এই সমস্যার সমাধান হয় না, বাণিজ্যের মধ্যে বিশাল ভারসাম্যহীনতা -সেটার সমাধান হয় না। এর আগে গত বছরের মে মাসে ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা ভারতকে যা যা দিয়েছি তারা তা সারাজীবন মনে রাখবে।’
তিনি বলেন, গত ১২ বছরে যা যা দিলেন তারপর আর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের কিছু অবশিষ্ট থাকল? আসলে এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে জনগণ ও দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করতো। ভারতে গিয়ে সবকিছু দিয়ে আসার প্রেক্ষিতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার চরণ যেন মিলে যাচ্ছে- ‘যত চাও তত লও তরণী-পরে। আর আছে? আর নাই, দিয়েছি ভরে॥ এতকাল নদীকূলে যাহা লয়ে ছিনু ভুলে সকলি দিলাম তুলে থরে বিথরে এখন আমারে লহো করুণা ক'রে।’
রিজভী বলেন, বন্ধুত্ব হয় সমতার ভিত্তিতে লেনদেনের ওপর। কিছুই না পেয়ে শুধু একতরফা দিয়ে যাওয়াকে কি বন্ধুত্ব বলে? এটাতো একমুখি একতরফা প্রেম। নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে চুক্তি করার চেয়ে কোনো চুক্তি না থাকাও যে ভালো, সেটাও আজ আমরা পুরোপুরি ভুলে বসে আছি। সম্প্রতি হঠাৎ করেই ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে দেশের পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তুলেছে। মানুষের নাভিশ্বাস দশা হয়েছে।
সরকারেরে নেতা-মন্ত্রীরা বারবার বলছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নাকি এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। অপ্রিয় সত্য হলো, সম্পর্ক আসলে এতটাই তথাকথিত উচ্চপর্যায়ে রয়েছে, নিচে যে দেশের ১৭ কোটি মানুষ রয়েছে, সেটা শাসকদের চোখে পড়ছে না। তিস্তার পানি কোনদিকে গড়াচ্ছে সেটিও তাদের চোখে পড়ছে না। এই জন্যই বলছি, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক থাকবে সমমর্যাদার ভিত্তিতে এবং অভিন্ন বিষয়গুলিতে ন্যায্য হিস্যা সমুন্নত রেখে।
রিজভী বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণ ভারতের কাছে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা বুঝে পেতে চায়। কিন্তু আপনারা দেখলেন, ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার করতে পারবে ভারত। ভারত এই পানি তারা ত্রিপুরা সাবরুম শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পে ব্যবহার করবে। ভারতকে দেয়া হয়েছে, চট্টগ্রাম আর মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ। এইসব চুক্তির বিস্তারিত কি জনগণের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে? জনগণকে কি জানতে দেয়া হয়েছে? ভারতের সঙ্গে এইসব চুক্তির বিনিময়ে কি পেলো বাংলাদেশ?
তিনি বলেন, ভারত ভারতের স্বার্থ বুঝে নিচ্ছে। আর বাংলাদেশের স্বার্থ বিসর্জন যাচ্ছে। এটা কেমন বন্ধুত্ব? আমাদের স্পষ্ট কথা, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকলে কখনোই বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হবে না। তাই বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা আর দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
রিজভী বলেন, ভারতের সাথে সরকার কি কি চুক্তি করছে তা জানার অধিকার বাংলাদেশের জনগণের অবশ্যই রয়েছে। এই অধিকার দেশের জনগণকে দেশের সংবিধানই দিয়েছে। আমরা ফেনী নদীর পানিসহ সকল দেশবিরোধী চুক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে চুক্তি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।