দুই মাসে ৩৪ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:৩৭
গত দুই মাসে ৩৪ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মঙ্গলবার আদালতে গত ১ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ‘মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল ভেজাল ওষুধ বিক্রয়ে গৃহীত কার্যক্রম’ শীর্ষক ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১২ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়ে ১৩ হাজার ৫শত ৯৩টি ফার্মেসী পরিদর্শন করে ভ্রাম্যমান আদালতে ৫শত ৭২টি মামলা করা হয়। এতে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল, ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে ২টি ফার্মেসী সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়াও একইসময়ে ৩৪ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ১শত ৪৩ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধংস করা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি। আর বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির পক্ষে ছিলেন শাহ মঞ্জুরুল হক।
এ বিষয়ে শাহ মঞ্জুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, অভিযানের সঙ্গে আমরা একমত। নকল ওষুধ যেন বাজারে না থাকে এটা আমরাও চাই। একটা আবেদন ছিলো ওষুধের গায়ে যেন বাংলায় লেখা থাকে। আমরা প্যাকেট খুলে দেখিয়েছি বাংলায় লেখা আছে। মেয়াদোত্তীর্ণর তারিখ ইংরেজিতে লেখা। ওনারা স্ট্রিপে (পাতায়) চেয়েছেন বাংলায়। স্ট্রিপে ইংরেজিতে লেখা আছে। খুব একটা ভিজিবল হয় না। ফরমেটের কারণে। আমরা বলেছি ফ্যাক্টরি মালিকদের সঙ্গে বসবো। বসে যতটুকু সম্ভব, অলরেডি অনেকগুলো বাংলায় হয়ে গেছে। তবে শতভাগ যেন হয়। আমাদের বিদেশেও ওষুধ পাঠাতে হয়। তাই সবকিছু ঠিক করে একটি প্রতিবেদন দিবো।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে যাদের জেল জরিমানা করা হয়েছে, তারা আবার পুনরায় যদি একই ধরণের অপরাধে অভিযুক্ত হন, তখন তাদের বিরুদ্ধে স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্টে মামলা দায়েরের জন্য ওনারা (আদালত) আজকে মৌখিকভাবে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। যার সাজা যাবজ্জীবন এমনিক মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। ফলে যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবেন তাদের আমরা হুশিয়ার করে দিতে চাই। যেন আপনারা এ ধরণের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ করবেন না। বিক্রিও করবেন না এবং ভেজাল ওষুধ বিক্রির চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে সরকার আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আইনগত দায়িত্বপালন করবে।
তিনি বলেন, আদালত বলেছেন অনেক সময় বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানী তাদের রিপ্রেজেন্টেটিভ দিয়ে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন সেটা বন্ধ করার জন্য ওষুধ শিল্প মালিকদের আইনজীবীদের বলেছেন। এ ধরণের কোনো অনিয়ম বা অন্যায় না হয়। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পরবর্তীতে আদেশে নিয়ে আসতে পারেন।
১২ ডিসেম্বররের মধ্যে ভোক্তা অধিকার প্রতিবেদন দিবে ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধের কার্যক্রম নিয়ে। আদালত ওষুধ প্রশাসনসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে বলেছেন। যেন বাংলাদেশের বাজারে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি না হয়। ওষুধ শিল্প সমিতিকে বলেছেন ইংরেজির পাশাপাশি যেন বাংলায় মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ও মূল্য লেখা থাকে সেটা বিবেচনা করতে- যোগ করেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এক রিট আবেদনের শুনানিতে দেয়া হাইকোর্টের এক আদেশে সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি বন্ধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর আদালতে প্রতিবেদন দেয়।
এর আগে গত ১০ মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়। এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ১৭ জুন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে রিট করেন নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান মিলন।