প্রবাসীদের কল্যাণ সরকারের দায়িত্ব : প্রধানমন্ত্রী
- বাসস
- ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে বিশেষ অবদানের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা তার সরকারের দায়িত্ব। তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিশেষ অবদান রয়েছে। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অবদান অনেক বেশি। এ জন্য তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি দেখা আমাদের দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীরা তাদের অবস্থানকারী দেশগুলোর অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছেন। তিনি গতকাল সকালে ব্রুনাইয়ের রাজধানীর জালান কেবাংসান কূটনৈতিক জোনে চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে ভাষণকালে এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) মাহমুদ হোসেইন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা বেশি এমন সব দেশে নিজস্ব মিশন নির্মাণের ওপর অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। তবে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি দেশে বাংলাদেশের নিজস্ব মিশন ভবন নির্মিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীদের সংখ্যা বেশি এমন দেশগুলোতে তাদের ছেলেমেয়েদের যথাযথ শিক্ষার জন্য অন্তত একটি করে বাংলাদেশী স্কুল প্রতিষ্ঠার নির্দেশ ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে বাংলাদেশ মিশনের জন্য কিছু ভবন কিনেছিলেন। কিন্তু তার হত্যাকাণ্ডের পর এ ব্যাপারে আর কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশে নিজস্ব মিশন তৈরির উদ্যোগ নেয়। আমরাও বিভিন্ন দেশে নিজস্ব মিশন ভবন তৈরির জন্য জমি কিনি।
ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের চ্যান্সেরি ভবনের স্থাপত্য নকশার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় আবহাওয়া, পরিবেশ ও অবকাঠামোর সাথে সঙ্গতি রেখে ভবনটি নির্মাণে গুরুত্ব আরোপ করেন। মিশন ভবনের সুন্দর নকশা তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রী এর স্থপতি রোজাইন মেরি জান্তি ও তার টিমকে ধন্যবাদ জানান। রোজাইন মেরি একজন আইন প্রণেতা এবং তিনি কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই চ্যান্সেরি ভবনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীরা অনেক সেবা পাবেন এবং যা তাদের এ দেশে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরায় সহায়তা করবে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১৮ মাসে নির্মীয়মাণ এই ভবনটি উদ্বোধনে তিনি আবারো ব্রুনাই সফর করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার একটার পর একটা বাংলাদেশ মিশন নির্মাণ করছে। ইতালিতে বাংলাদেশ চ্যান্সেরি ভবনের নির্মাণকাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবনটি উদ্বোধনের জন্য তিনি ইতালি সফর করবেন।
ব্রুনাইকে একটি সুন্দর দেশ হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রুনাইয়ের মতো এখনো আরো অনেক সুন্দর স্থান রয়েছে, যার খোঁজ এখনো বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা পায়নি। এই স্থানগুলো আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন গন্তব্য হতে পারে। পরে তিনি রয়েল রেজালিয়া মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন।
দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রুনাই দারুস সালামে তিন দিনের সরকারি সফর শেষে রাজধানী বন্দর সেরি বেগাবান থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহর আমন্ত্রণে তিনি এই সফর করেন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমানটি স্থানীয় সময় ৫টা ১৫ মিনিটে বন্দর সেরি বেগাবানের ব্রুনাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
ব্রুনাইয়ের প্রাথমিক সম্পদ এবং পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী দাতো সেরি সেথিয়া আওয়াঙ্গ হাজি আলি বিন হাজি আপং এবং ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) মাহমুদ হুসেইন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী গত ২১ এপ্রিল তিন দিনের সরকারি সফরে ব্রুনাইয়ের রাজধানী বন্দর সেরি বেগাবানে পৌঁছেন। সফরকালে তিনি ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়ার সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনাসহ সুলতান এবং রাজ পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশ-ব্রুনাই বিজনেস ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ বেশ কিছু কর্মসূচিতে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী সফরের দ্বিতীয় দিনে গত সোমবার জামে আসর মসজিদ পরিদর্শন এবং সেখানে আসরের নামাজ আদায় করেন। পরে তিনি তার সম্মানে ইস্তানা নুরুল ইমানে ব্রুনাইয়ের সুলতানের দেয়া এক ভোজসভায় অংশ নেন। সোমবার তিনি ব্রুনাইতে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির সংবর্ধনায় যোগ দেন। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রুনাইয়ের রাজধানীতে কূটনৈতিক এলাকা জালান কেবানজাসানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে তিনি রয়েল রিগালিয়া মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন।
গতকাল ব্রুনাইয়ের সুলতানের সরকারি বাসভবন নুরুল ইমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং এলএনজি সরবরাহ সংক্রান্ত সাতটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সাতটি চুক্তির মধ্যেÑ ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং একটি বিনিময় নোট।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য পাঁচটি দেশের সমন্বয়ে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এর পাশাপাশি সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ-ব্রুনাই বিজনেস ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
অপর চুক্তিটি হচ্ছেÑ ব্রুনাইয়ের ঘানিম ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এবং বাংলাদেশের নিজাম গ্রুপ অব কোম্পানির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা