২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রিজার্ভ চুরি : বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আরসিবিসির মানহানি মামলা

রিজার্ভ চুরি
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছে আরসিবিসি - ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি)। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আরসিবিসিকে দায়ী করায় ‘অশুভ আক্রমণের’ অভিযোগ এনে মানহানির এ মামলা করে ব্যাংকটি।

আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্রে এ কথা জানা গেছে।

কোম্পানির সুনাম ও ভাবমূর্তির ওপর আক্রমণ চালানোয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ কোটি পেসো (১৯ লাখ ডলার) দাবি করে মামলা করেছে আরসিবিসি।

এর আগে রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় গত ১ ফেব্রুয়ারি আরসিবিসির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ওই চুরির ঘটনায় আরসিবিসির নাম জড়ানোয় ফিলিপাইনের ওই ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

২০১৬ সালের ৪ ফেবরুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুইফট সিস্টেমে ৭০টি ভুয়া পরিশোধ অর্ডার পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে মোট ১৯২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার অবৈধভাবে নেয়ায় চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে একটি পরিশোধ অর্ডারে শ্রীলঙ্কায় দুই কোটি ডলার ও চারটি অর্ডারে আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের একটি শাখার ভুয়া গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হয়ে জুয়ার বাজারে চলে যায়।

শ্রীলঙ্কা থেকে ইতোমধ্যেই চুরি হওয়া সব অর্থ ফেরত এসেছে। আর ফিলিপাইনে যাওয়া অর্থের মধ্যে এক কোটি ৫০ ডলার দেশটির কোর্টের আদেশে ফেরত আনা হয়েছে। বাকি ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার অনাদায়ী রয়েছে, যা আরসিবিসির কাছ থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় উদ্ধারের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে গত জানুয়ারিতে আরসিবিসির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মাইয়া দেগুইতো অর্থ পাচারের বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তবে আরসিবিসির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, চুরি যাওয়া ওই অর্থ এখন তাদের দখলে নেই।

আরো পড়ুন :
রিজার্ভ চুরির মামলা করল বাংলাদেশ ব্যাংক
আশরাফুল ইসলাম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
অবশেষে মার্কিন আদালতে রিজার্ভ চুরির মামলা করল বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনতে ও এর সাথে জাড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আজ ভোর ৪টায় (গতকাল নিউ ইয়র্ক টাইম বিকেল ৪টা) বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ মামলা দায়ের করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা দায়েরের বিষয়টি নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান।

এর আগে বুধবার মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরও সাংবাদিকদের মামলা করার কথা জানিয়েছিলেন। ফজলে কবির বলেন, ‘রিজার্ভ চুরির ঘটনা থেকে যারা লাভবান হয়েছে এবং যারা এর সাথে জড়িত ছিল তাদের এ মামলায় আসামি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মামলার সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমাদের একটি প্রতিনিধি দল এখন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছে। মামলায় ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনসহ (আরসিবিসি) জড়িতদের দায়ী করে মামলা সাজানো হচ্ছে।’ তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা এই মামলার উদ্দেশ্য।

এ মামলায় সম্ভাব্য আসামি হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তারা হলেন- আরসিবিসি ও তাদের কয়েকজন কর্মকর্তা, অর্থ স্থানান্তরকারী কোম্পানি ফিলরেম ও তার কর্মকর্তা, ক্যাসিনো মালিক ও সুবিধাভোগী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এ মামলায় পূর্ণ সহায়তা দেবে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক (ফেড)। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে ফেডের একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি ছাড়াও চার সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের পরামর্শক দেবপ্রসাদ দেবনাথ, একই ইউনিটের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রব এবং অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (নিউ ইয়র্ক ফেড) থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফটে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে এই অর্থ ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার দু’টি ব্যাংকে সরানো হয়েছিল। এই অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া দুই কোটি ডলার আটকানো গেলেও ফিলিপাইনে চলে যায় আট কোটি ১০ লাখ ডলার। এর মধ্যে এখনো ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত আসেনি। এই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করা হয়েছে। এ জন্য দেশটিতে দু’টি ল’ ফার্মকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের ফি নিয়ে একটি চুক্তিও করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, চুরি যাওয়া ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার উদ্ধার করে দিতে পারলে ল’ ফার্ম দু’টিকে সেই অর্থের ১০ শতাংশ দেয়া হবে।

জানা গেছে, হ্যাকাররা চুরির অর্থ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার চারটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে। সেখান থেকে ওই অর্থ ফিলিপাইনের মুদ্রা পেসোতে রূপান্তরের পর দু’টি ক্যাসিনোতে পাঠানো হয়। রিজার্ভ চুরির এই ঘটনায় দোষী প্রমাণ হওয়ায় গত ১০ জানুয়ারি আরসিবিসির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতোকে সাজা দেন ফিলিপাইনের আদালত।


আরো সংবাদ



premium cement