২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কর্মক্ষেত্রে মাসিকের ছুটি : কতটা প্রয়োজন, কতটা বাস্তব

- ছবি : সংগৃহীত

স্পেনে পিরিয়ডের সময় মেয়েদের চাকরি থেকে ছুটি দেয়ার একটি প্রস্তাব মঙ্গলবার মন্ত্রিসভায় উঠতে যাচ্ছে। এটি পাস হলে ইউরোপের মধ্যে স্পেনেই প্রথম এমন আইন হবে।

আইনের খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা হলে মাসে সর্বোচ্চ তিনদিন ছুটি দেয়া যেতে পারে। এই ছুটি পেতে চিকিৎসকের সার্টিফিকেট জমা দিতে হতে পারে।

স্পেনে প্রতি দুই নারীর একজন পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা অনুভব করেন বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

পিরিয়ডের সময় অনেক বেশি রক্তপাত, তীব্র ব্যথা ও ক্লান্তি, বমি ও ডায়রিয়ার লক্ষণকে ডিসমেনোরিয়া বলা হয়। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানস বলেছে, ডিসমেনোরিয়ার কারণে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ নারীর নিত্যদিনের কাজ করতে সমস্যা হতে পারে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজনন বয়সের সর্বোচ্চ ৯১ শতাংশ নারী ডিসমেনোরিয়ায় ভোগেন।

স্পেনের আইনগত এ প্রস্তাবের অনুরূপ একটি প্রস্তাব ২০১৭ সালে ইতালিতে দেয়া হয়েছিল। তখন এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। এই আইন হলে নারীরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে পারেন বলে অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন। অবশেষে আইনটি পাস হয়নি।

তবে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া ও জাম্বিয়াতে মাসিকের সময় মেয়েদের বেতনসহ ছুটি দেয়া হয়।

জাপানে ১৯৪৭ সাল থেকে এই আইন রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ শতাংশেরও কম সংখ্যক নারী এই ছুটি নিয়ে থাকেন।

তবে জরিপে অংশ নেয়া ৪৮ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তারা কখনো কখনো এই ছুটি নেয়ার কথা ভেবেছেন, কিন্তু নেননি। এর কারণ হিসেবে কেউ বলেছেন তারা পুরুষ বসের কাছে এই ছুটির আবেদন করতে চাননি, আবার কেউ জানিয়েছেন তারা আশেপাশের খুব অল্প সংখ্যক নারীকে এই ছুটি নিতে দেখেছেন।

নেদারল্যান্ডসের মতো দেশেও ছুটি নেয়ার কারণ হিসেবে মাসিকের কথা উল্লেখ করা থেকে নারীদের বিরত থাকতে দেখা গেছে। ২০১৯ সালে প্রায় ৩০ হাজার ডাচ নারীর ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১৪ শতাংশ নারী মাসিকের সময় ছুটি নিলেও ছুটির কারণ হিসেবে আসল কারণটি উল্লেখ করেছেন তাদের মাত্র ২০ শতাংশ।

ইন্দোনেশিয়ার কিরোয়ান পার্টনার্স নামের এক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ভেভে হিতিপেউ এক সময় কর্মী হিসেবে মাসিকের ছুটি নিয়েছেন। এখন কোম্পানির প্রধান হিসেবে অন্যদের এমন ছুটি মঞ্জুর করে থাকেন। তিনি বলেন, ‘মাসিকের ছুটির সঙ্গে এক ধরনের লজ্জা কিংবা বৈষম্য জড়িয়ে আছে। কারণ অনেকে মনে করেন নারীরা অলস। তারা কাজ করতে চান না।’

ভারতের উদাহরণ

ভারতের ফুড ডেলিভারি কোম্পানি জমেটোতে ২০২০ সালের আগস্ট থেকে মেয়ে কর্মীরা বার্ষিক ছুটি ছাড়াও বছরে ১০দিন মাসিকের ছুটি নিতে পারেন।
কোম্পানির মুখপাত্র বৈদিকা পরাশার জানান, এমন ছুটি নেয়ার জন্য বেশি কিছু করতে হয় না। শুধু টিম চ্যাটের স্ট্যাটাসে ক্যালেন্ডারের ভেতর তিনটি লাল ফোঁটা থাকার ইমোটিকন দিলেই বাকিরা তার অর্থ বুঝে যান। ফলে মেয়েদের অস্বস্তিতে পড়তে হয় না। ছুটি দেয়ার এই নীতির কারণ হিসাবে কর্মক্ষমতা বাড়ার কথা জানান ওই কোম্পানির মুখপাত্র।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement