১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

অস্ত্রবিরতির জন্য হ্যারিসের আহ্বান, সমালোচনায় ইসরাইলি কট্টরপন্থিরা

- ছবি : ভয়েস অব আমেরিকা

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস বৃহস্পতিবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠকের সময়ে যে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানান এবং গাজায় মানুষের দূর্ভোগ সম্পর্কে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, শুক্রবার অতি ডানপন্থি ইসরাইলি বিধায়করা তার কড়া সমালোচনা করেছেন।

বৃহস্পতিবার সংবাদদাতাদের কাছে দেয়া মন্তব্যে, হ্যারিস ইসরাইলের প্রতি তার অবিচল প্রতিশ্রুতির কথা প্রকাশ করে বলেন তিনি এটা সব সময়ে নিশ্চিত করবেন যে ইসরাইল নিজের প্রতিরক্ষা করতে পারে।

এ সপ্তাহের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডেমক্র্যাটিক পার্টির শীর্ষ প্রার্থী হ্যারিস আরো বলেন, ‘নিজের প্রতিরক্ষার অধিকার রয়েছে ইসরাইলের তবে কিভাবে তা করে সেটাই হচ্ছে ব্যাপার।’

তিনি আরো বলেন, তিনি গাজায় বহু নিরোপরাধ অসামরিক লোকজনের মৃত্যু এবং যে পরিমাণে মানুষের দূর্ভোগ হচ্ছে সে ব্যাপারে তিনি নেতানিয়াহুর কাছে তার গুরুতর উদ্বেগের কথা বলেন। তিনি বলেন, এই দূর্ভোগের সময়ে আমরা চুপ থাকতে পারি না আর আমি চুপ থাকবো না।’ হ্যারিস যুদ্ধ সমাপ্তির লক্ষ্যে মধ্যস্ততাকারীদের অস্ত্রবিরতি চুক্তি সম্পাদন করাতে বলেন।

ইসরাইলের অতি-ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী এবজালেল স্মোতরিচ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ হ্যারিসের এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন গাজায় তার অস্ত্রবিরতির এই আহ্বান ইসরাইলকে আত্মসমর্পণ করতে বলার নামান্তর মাত্র।

তিনি লেখেন, ‘আমি যা কয়েক সপ্তাহ ধরে বলছি, এই চুক্তির পেছনে কী আছে, সে কথাটাই কামালা হ্যারিস প্রকাশ করলেন।’

সিনওয়ার (হামাস সামরিক নেতা)-এর কাছে আত্মসমর্পণ করার অর্থ হচ্ছে এমনভাবে যুদ্ধ শেষ করা যা হামাসকে পূনর্বাসনের সুযোগ করে দেবে এবং হামাসের কাছে যে অপহৃতরা রয়েছে তাদের বেশিরভাগকেই মুক্তি দিবে। এই ফাঁদে পা দেবেন না!’

তার অল্প পরেই আরেকজন ইসরাইলি কট্টরপন্থি, জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরও তার এক্স অ্যাকাউন্টে একই বিষয়ে লেখেন, ‘ম্যাডাম প্রার্থী, কোন সন্ধি হবে না।’

তাদের মন্তব্য এমন সময়ে এলো যখন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডের নেতারা অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন।

শুক্রবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টফার লুক্সোন’ গাজায় জরুরি অস্ত্রবিরতির’ আহ্বান জানান।

তারা লেখেন, ‘গাজার পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। মানুষের এই দূর্ভোগ গ্রহণ করা যায় না। এটি অব্যাহত থাকতে পারে না।’

তাদের বিবৃতিতে এই তিন নেতা বলেন, ৭ অক্টোবরের আক্রমণ এবং তাদের অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তারা ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে’ স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা হামাসের নিন্দা করছেন।

এই তিনজন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে সামগ্রিক অস্ত্রবিরতি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন এবং যা জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন পেয়েছে, তারা এটিকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেন।

তারা বলেন, ‘আমরা এই সঙ্ঘাতের সকল পক্ষকে এই চুক্তিতে রাজি হবার আহ্বান জানাই। যেকোনো বিলম্বে আরো জীবনের ক্ষতি হবে।’

পশ্চিমি কর্মকর্তা একটি ফিলিস্তিনি এবং দু’টি মিশরীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গাজা চুক্তি ও হামাসের কাছে পণবন্দী মুক্ত করা বিষয়ক চুক্তিটি ইসরাইল বদলাতে চায়। আর তাতে ৯ মাসব্যাপী এই যুদ্ধ শেষ করার চুক্তিতে আরো জট পাকাবে।

ইসরাইল বলছে, অস্ত্রবিরতির পর স্থানচ্যূত ফিলিস্তিনিরা গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরে এলে তাদের যেন ভালোভাবে তল্লাশি করা হয়। এই চারটি সূত্রই রয়টার্সকে বলছে, এটি হচ্ছে দক্ষিণে পালিয়ে যাওয়া অসামরিক নাগরিকদের অবাধে তাদের ঘর বাড়িতে ফেরার ব্যাপারে চুক্তির বড় রকমের ব্যত্যয়।

মিশর, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্ততাকারীদের সাথে দোহায় বৃহস্পতিবার আলোচনা আবার শুরু হবার কথা ছিল কিন্তু ইসরাইলের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের মধ্যস্ততাকারীরা ‘দেরি করেছেন’ এবং এখন আলোচনা আবার শুরু হবে আগামী সপ্তাহে। এই বিলম্বের কোনো কারণ ইসরাইল জানায়নি।

শুক্রবারই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রিয়েসাস বলেন, তার দফতর ১০ লাখ ডোজেরও বেশি পোলিও নিরামক টিকা গাজায় পাঠাচ্ছে যাতে আগামী সপ্তাহগুলোতে এই টিকা দেয়া যায়। তিনি দ্য গার্ডিয়ান সংবাদপত্রের অভিমত পাতায় এ খবর জানান।

গাজায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, পোলিওতে আক্রান্ত হবার কারণগুলো পাওয়া গেছে এবং তারপরই টিকা সরবরাহ শুরু হয়।

সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement