রাশিয়া-চীনের আগ্রাসনের মুখে আর্কটিক প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করল কানাডা

কানাডা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে দ্রুত কৌশলগত তাৎপর্য অর্জন করছে এমন একটি অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সুমেরু অঞ্চলে বরফের নিচে কাজ করতে সক্ষম প্রচলিতভাবে চালিত ১২টি সাবমেরিন কিনতে যাচ্ছে।

কানাডা ন্যাটো সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে কম ব্যয়কারী অন্যতম দেশ। প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির দুই শতাংশ ব্যয় করার জন্য জোটটির প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে এই ক্রয়টি অটোয়ার ওপর প্রবল চাপ কমাতে সাহায্য করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কানাডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিল ব্লেয়ার বুধবার ওয়াশিংটনে ন্যাটো প্রধানদের বৈঠকের সময় এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিশ্বের দীর্ঘতম উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে কানাডার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র গুচ্ছের প্রয়োজন।’

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা নির্মাতাদের সাথে বৈঠক শুরু করেছে এবং ক্রয়ের জন্য শরৎকালে আনুষ্ঠানিকভাবে দরপত্র গ্রহণ করবে।

বিবৃতিটিতে বলা হয়, ‘কানাডার ক্ষেপণাস্ত্রের জন্যে মূল সক্ষমতাগুলোর মধ্যে প্রয়োজন গোপনীয়তা, প্রাণঘাতী ক্ষমতা, টিকে থাকার শক্তি এবং সুমেরু অঞ্চলে স্থাপনযোগ্যতা- যার অর্থ ক্ষেপণাস্ত্রটির অবশ্যই প্রসারিত পরিসীমা এবং সহ্যক্ষমতা থাকতে হবে। কানাডার নতুন নৌবহরটিকে এই প্রয়োজনীয়তাগুলোর একটি অনন্য সমন্বয় প্রদান করতে হবে যাতে কানাডা প্রয়োজনে তিনটি সমুদ্রেই প্রতিপক্ষকে শনাক্ত করতে পারে, ট্র্যাক করতে পারে ও প্রয়োজনবোধে পরাজিত করতে পারে এবং মিত্রদের সাথে অর্থপূর্ণভাবে অবদান রাখতে পারে এবং কানাডা সরকার আমাদের অংশীদার এবং মিত্রদের সমর্থনে এই নৌবহর বিদেশে মোতায়েন করতে পারে।’

এর এক দিন পরে ওয়াশিংটন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র এবং ফিনল্যান্ড একটি যৌথ বিবৃতিতে আর্কটিক অঞ্চলের জন্য আইসব্রেকার নির্মাণের চুক্তি ঘোষণা করে।

দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, এই চুক্তিতে মেরুঅঞ্চলীয় আইসব্রেকার উৎপাদনের বিষয়ে বর্ধিত তথ্য আদান-প্রদানের কথা বলা হয়। এর ফলে তা প্রতিটি দেশের কর্মী এবং বিশেষজ্ঞদের তিনটি সমুদ্রজুড়ে শিপইয়ার্ডে প্রশিক্ষণের অনুমতি দেয় এবং মিত্রদের তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র, ফিনিশ বা কানাডার শিপইয়ার্ড থেকে মেরুঅঞ্চলীয় আইসব্রেকার কেনার বিষয়টি উৎসাহিত করে।

একই দিনে ওয়াশিংটনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ঘোষণা করেন, তার সরকার ন্যাটো নেটোর প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষার সমর্থনে উত্তর আটলান্টিকে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য জার্মানি এবং নরওয়ের সাথে একটি ত্রিপক্ষীয় চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে।’

ট্রুডোও প্রথমবারের মতো বলেন, কানাডা ২০৩২ সালের মধ্যে ন্যাটো জিডিপি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রার দুই শতাংশে পৌঁছানোর আশা করছে। ট্রুডো এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বুধবার একটি বৈঠকের আগে কানাডা ইউক্রেনে ৩৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের নতুন সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

প্রতিরক্ষা খাতে আরো ব্যয় করার জন্য কানাডার ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে এই প্রতিশ্রুতিটি করা হয়। ন্যাটোর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে দেশটি জিডিপির মধ্যে জোটটির পঞ্চম-সর্বনিম্ন ব্যয়কারী সদস্য এবং এই সপ্তাহ পর্যন্ত ২০২৯-৩০ বাজেট বছরের মধ্যে জিডিপির এক দশমিক ৭৬ শতাংশ ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

ন্যাটো মিত্ররা ২০০৬ সালে প্রতিরক্ষা খাতে দুই শতাংশ খরচের সীমায় প্রথমে সম্মত হয় এবং ২০১৪ ও ২০২৩ সালে তারা এটি পুনরায় নিশ্চিত করে। এই বছর ৩২টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ২৩টি রাষ্ট্র এ লক্ষ্য পূরণ করবে বা অতিক্রম করবে।

বেশ কয়েকটি দেশ সুমেরু অঞ্চলে তাদের সামরিক ও বাণিজ্যিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, কারণ বরফ গলে যাওয়ার ফলে সুমেরু মহাসাগরে চলাচল এবং পেট্রোকেমিক্যাল অনুসন্ধানকে আরো বাস্তবসম্মত করে তুলেছে। রাশিয়ার আর্কটিক উপকূলবর্তী অঞ্চল জুড়ে একটি সমুদ্রপথ চীন ও ইউরোপের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত সমুদ্রপথ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়।

সুমেরু মহাসাগর থেকে চীনের দূরত্ব সত্ত্বেও বেইজিং ওই অঞ্চলের একটি বড় অংশের ওপর দাবি প্রকাশের জন্য নিজেদের ‘আর্কটিক অঞ্চলের কাছাকাছি দেশ’ বলে অভিহিত করেছে।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা