ন্যাটোর প্রধান হচ্ছেন মার্ক রুটে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২১ জুন ২০২৪, ১২:৩৮
ন্যাটোর পরবর্তী সেক্রেটারি জেনারেল হচ্ছেন নেদারল্যাান্ডসের কার্যকরী প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে।
বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল স্টলটেনবার্গের পদে থাকার মেয়াদ আগামী অক্টোবরে শেষ হবে। তারপর রুটে এই দায়িত্বভার নেবেন। ন্যাটো সদস্যদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২০২৩ সালের জুলাইতে ১৩ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকার পর রুটে ঘোষণা করেন, ‘তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন। নেদারল্যান্ডসের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কেন তিনি এই ঘোষণা করেছিলেন?
জোটের মধ্যে অভিযোগ ওঠে, রুটে অভিবাসীদের প্রতি নরম মনোভাব দেখাচ্ছেন। এর ফলে চার দলীয় জোট ভেঙে যায়। এরপর নির্বাচনে দক্ষিণপন্থিরা সবচেয়ে বেশি আসন পায়। রুটে তার রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় হারের মুখে পড়েন।
তারপর থেকে তিনি কার্যকরী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন। কারণ দক্ষিণপন্থি দল এখনো সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে।
অবসরের পরিকল্পনা বাতিল
২০২৩ সালে ৫৭ বছর বয়সী রুটে তার অবসর ঘোষণার কথা ভুলে ন্যাটোর শীর্ষ পদে বসার ইঙ্গিত দিতে থাকেন। রুটে ন্যাটো দেশগুলোর প্রধানদের সাথে দেখা করতে শুরু করেন। তিনি এতদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকার সূত্রে তাদের আগে থেকেই চিনতেন ও জানেন।
রুটে হলেন ইউক্রেনের একনিষ্ঠ সমর্থক। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেতেও তার অসুবিধা হয়নি। পরে ন্যাটোর অন্য সদস্য দেশও তাকে সমর্থন জানায়।
তবে হাঙ্গেরির দক্ষিণপন্থি জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সমর্থন পেতে তার কিছুটা দেরি হয়। অরবানের সাথে রুটের সম্পর্ক আগে খুব একটা মধুর ছিল না। রুটেকে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়, তিনি যতদিন ন্যাটোর নেতৃত্ব দেবেন, ততদিন হাঙ্গেরি ন্যাটোর সীমার বাইরে ইউক্রেনকে সাহায্য করবে না। অরবানের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক খুব ভালো এবং তিনি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন।
অতীতে ইইউ-তে রুটের উদারনৈতিক মনোভাবের সাথে অরবানের মতের সঙ্ঘাত হয়েছে। ২০২১ সালে হাঙ্গেরি যখন এবজিবিটিকিউপ্লাস-এর বিরোধী আইন করেন, তখন রুটে বলেছিলেন, যদি ইইউ-র নীতির সাথে এমন বিরোধ হয় তো অরবান ইইউ ছেড়ে চলে যেতে পারেন। তবে রুটে এমনিতে এমন একজন মানুষ, যার রসিকতাবোধ আছে। যিনি সাধারণ বাড়িতে থাকেন। সাইকেলে করে অফিসে আসেন। মাঝেমধ্যে তিনি হেগ সেন্ট্রাল স্টেশনে পিয়ানো বাজান।
তবে ন্যাটো প্রধান হিসেবে তাকে আরেকটু সিরিয়াস হতে হবে ও কূটনৈতিক পথে চলতে হবে। ন্যাটোর ৩২টি সদস্য দেশের বিরোধী স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য করে চলতে হবে, যাতে সকলে একসুরে কথা বলতে পারে। স্টলটেনবার্গ একটু নির্বিকার প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তার সাফল্যের পিছনে এই মনোভাব কাজ করেছে বলে মনে করা হয়।
দক্ষ ক্রাইসিস ম্যানেজার
ডাচ সাংবাদিক ও রুটের জীবনী লেখক শীলা সিটালসিন বলেন, ‘রুটে এক সময় বলেছিলেন, প্রকৃত নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা নির্ভর করে সেই মানুষটির অন্যের কথা ও ভিন্ন মত শোনার ক্ষমতা কতটা আছে তার ওপর। এই ক্ষমতা থাকায় রুটে ন্যাটো প্রধান হিসেবে ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা, রুটে হলেন একজন সফল ক্রাইসিস ম্যানেজার।’
দীর্ঘদিন ধরে তিনি দেশকে স্থিরতা দিয়েছেন, কোভিড-১৯-এর সময় অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছেন। কোনো অভিযোগ তার গায়ে লাগেনি। নেদারল্যান্ডসে তাকে বলা হয় ‘টেফলন রুটে’।
ন্যাটোর প্রধান হিসেবে তাকে এই সম্ভাবনার কথাও মাথায় রাখতে হবে যে, ট্রাম্প নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। আগে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন রুটের সাথে তার সম্পর্ক ভালো ছিল। ট্রাম্প তাকে ‘বন্ধু’ বলে ডাকতেন। তবে রুটে ট্রাম্পের আর্থিক নীতির তীব্র বিরোধী ছিলেন।
আরেকটা জায়গায় ট্রাম্পের সাথে তার মতে মেলে না। ট্রাম্প বিরোধী হলেও, রুটে মনে করেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা উচিত।
সূত্র : ডয়চে ভেলে