১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিতর্কিত ফুটবল তারকা ও. জে. সিম্পসনের মৃত্যু

প্যারোল মঞ্জুর হওয়ার খবর জেনে সাবেক প্রো-ফুটবল তারকা ও. জে. সিম্পসনের প্রতিক্রিয়া। লাভলক সংশোধন কেন্দ্র, নেভাদা - ফাইল ছবি

ও. জে. সিম্পসন ৭৬ বছর বয়সে মারা গেলেন। আমেরিকার এই ফুটবল তারকা ও চিত্রাভিনেতাকে ১৯৯৫ সালে নিজের সাবেক স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে এক সংবেদনশীল বিচারপ্রক্রিয়া শেষে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। তবে এক দেওয়ানি মামলায় জানা গিয়েছিল যে তার সাবেক স্ত্রীর হত্যার জন্য তিনি দায়ী ছিলেন। পরে সশস্ত্র ডাকাতি ও অপহরণের জন্য তিনি কারারুদ্ধ হয়েছিলেন।

লস এঞ্জেলিসের জুরিরা সিম্পসনকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সেই মামলাকে 'শতকের সেরা বিচারপ্রক্রিয়া' বলে অভিহিত করেছিল। যাইহোক, সিম্পসনের পরিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে ক্যান্সার রোগের সাথে লড়াইয়ের পর বুধবার জীবনাবসান হয়েছে তার।

১৯৯৪ সালে লস এঞ্জেলিসে সিম্পসনের সাবেক স্ত্রী নিকোল ব্রাউন সিম্পসন ও তার (স্ত্রীর) বন্ধু রোনাল্ড গোল্ডম্যানকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত না হওয়ায় সিম্পসনকে সেবার জেলে যেতে হয়নি। তবে, সশস্ত্র ডাকাতির ১২টি অভিযোগ ও লাস ভেগাসে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে দুই ক্রীড়া স্মারক ডিলারকে অপহরণ করার দায়ে ২০০৮ সালে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং নেভাদায় দীর্ঘ নয় বছর জেল খাটতে হয়।

সিম্পসনের ডাকনাম ছিল 'দ্য জুস'। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে তিনি ছিলেন সেরা ও জনপ্রিয়তম ক্রীড়াবিদদের অন্যতম। শৈশবে তিনি শারীরিক দুর্বলতায় ভুগেছেন। কিন্তু ওই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সাউদার্ন ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্দান্ত দৌড়বিদ হয়ে উঠেছিলেন এবং কলেজ ফুটবলের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে তিনি হেইসম্যান ট্রফি জয় করেছিলেন। বাফেলো বিল্স ও স্যান ফ্রান্সিসকো ফর্টি নাইনার্সদের হয়ে এনএফএল-এ রেকর্ড সৃষ্টিকারী কর্মজীবনের পর তাকে ‘প্রো-ফুটবল হল অফ ফেম’-এ জায়গা দেয়া হয়েছিল।

ফুটবলের নক্ষত্র হিসেবে তার অবস্থানের ক্ষতি করে তিনি ক্রীড়াসংবাদ ভাষ্যকার , বিজ্ঞাপনী মধ্যস্থতাকারীর পেশা বেছে নিয়েছিলেন। এমনকি 'নেকেড গান' সিরিজসহ হলিউডের একাধিক ছায়াছবিতে অভিনয়ও করেন।

তবে, ১৯৯৪ সালের ১২ জুন নিকোল ব্রাউন সিম্পসন ও গোল্ডম্যানকে নিকোলের লস এঞ্জেলিসের বাড়ির বাইরে এক রক্তাক্ত দৃশ্যে মারাত্মকভাবে টুকরো হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় এবং এই ঘটনার পর সব কিছু বদলে গিয়েছিল।

সেই ‘ঐতিহাসিক’ মামলার শুরুতে সিম্পসন নিজেকে “একেবারে ১০০ ভাগ নিরপরাধ” বলে ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৯৫ সালের ৩ অক্টোবর ১০ জন নারী ও দুইজন পুরুষের প্যানেল (এই প্যানেলে কৃষ্ণকায়দের আধিক্য ছিল) তাকে মুক্তি দেয়ার পর তিনি জুরিদের দিকে হাত নাড়েন এবং বলেন, 'আপনাদের ধন্যবাদ।'

এই বিচারপ্রক্রিয়া আমেরিকায় আলোড়ন তুলেছিল। হোয়াইট হাউসে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন ওভাল অফিস থেকে বেরিয়ে তার সেক্রেটারির টিভিতে এই মামলার রায় দেখেছিলেন। বহু কৃষ্ণকায় আমেরিকান তার মুক্তিকে উদযাপন করেছিলেন। কারণ তাদের মনে হয়েছিল যে সিম্পসন ধর্মান্ধ ও জাতিবিদ্বেষী পুলিশের শিকার। অনেক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান তার বেকসুর অব্যাহতি দেখে হতবাক হয়েছিলেন।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement