২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তাইওয়ানে এখনই হামলা করবে না চীন : মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

তাইওয়ানে এখনই হামলা করবে না চীন : মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী - ছবি : সংগৃহীত

তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সাতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ দিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের হুঁশিয়ারি ও পাল্টা হুঁশিয়ারিতে সেই উত্তেজনা আরো বেড়েছে। এমনকি তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত করতে বেইজিং সামরিক পন্থায় হাঁটার কথাও জানিয়ে রেখেছে।

তবে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, তাইওয়ানে এখনই হামলা করবে না চীন।

রোববার তিনি বলেন, তাইওয়ানে এখনই চীনের হামলার সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি। তবে তাইওয়ানের চারপাশে সামরিক তৎপরতা চালিয়ে সেখানে ‘নিউ নরমাল’ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে বেইজিং।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমনিতেই তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে উত্তেজনা চলছে। তার ওপর গত আগস্টে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দেয়।

এর জেরে পেলোসির সফরের পরপরই তাইওয়ানের চারপাশে বিশাল সামরিক মহড়া শুরু করে চীন। সেসব মহড়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। যদিও তা সীমিত পরিমাণে এবং মহড়ার মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে চীনের সশস্ত্র বাহিনী।

এই পরিস্থিতিতে রোববার সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এ সম্প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, ‘আমি (তাইওয়ানে চীনের) আসন্ন আক্রমণ দেখতে পাচ্ছি না।’

তার ভাষায়, ‘আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো- চীন (তাইওয়ানের চারপাশে) একটি নতুন স্বাভাবিক অবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়ে চলেছে। সেখানে তাদের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে-আমরা তাদের বিমানকে তাইওয়ান প্রণালীর বেশ কয়েকটি লাইন অতিক্রম করতে দেখেছি। সময়ের সাথে সাথে সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাইওয়ানের আশপাশে চীনের ভূখণ্ড এবং জলসীমায় আমরা চীনের বর্ধিত কার্যকলাপ দেখছি।’

অবশ্য চীনের মহড়া ও সামরিক কর্মকাণ্ডের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাতায়াত অব্যাহত রেখে মহড়ার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ এবং একটি কানাডিয়ান ফ্রিগেট গত ২০ সেপ্টেম্বর তাইওয়ান প্রণালী দিয়ে ট্রানজিট করে।

এছাড়া গত শুক্রবার রেকর্ড করা সিএনএন-এর ‘ফরিদ জাকারিয়া জিপিএস’-এ একটি সাক্ষাৎকারে লয়েড অস্টিন বলেন, ‘আমরা অবাধ এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বজায় রাখার কাজটি নিশ্চিত করতে আমাদের মিত্র এবং অংশীদারদের সাথে কাজ চালিয়ে যাব।’

গত আগস্টে পেলোসির তাইওয়ান সফরের প্রতিশোধ হিসেবে সিনিয়র-স্তরের সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে সংলাপসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয় চীন। তবে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে সামরিক যোগাযোগের চ্যানেলগুলো পুনরায় খোলার জন্য কাজ করছে বলে জানিয়েছেন লয়েড অস্টিন। বেইজিং-ওয়াশিংটনের মধ্যে সামরিক যোগাযোগ উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বলেও জানিয়েছেন মার্কিন এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

অস্টিন বলেছেন, তিনি ফোনে এবং ব্যক্তিগতভাবে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংঘের সাথেও এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছেন। এ সময় চীনা মন্ত্রী উন্মুক্ত যোগাযোগ উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে একমত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা এই চ্যানেলগুলোকে খোলা রাখতে চাই এবং আমি আশা করব- চীন আরো কিছুটা সামনে এগোবে এবং আমাদের সাথে কাজ করবে।’

ওয়াশিংটন ১৯৭৯ সালে তাইওয়ানের সাথে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। বৈশ্বিক পরাশক্তি এই দেশটি চীনের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে বেইজিংকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। কিন্তু একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে বেশ কৌশলী ভূমিকা পালন করে আসছে।

উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘ দিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।

উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement