২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যাকারীর ২২ বছরের কারাদণ্ড

জর্জ ফ্লয়েড (বায়ে) ও হত্যাকারী ডেরেক শভিন (ডানে)। - ছবি- সংগৃহীত

আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডকে ২০২০ সালের মে মাসে মিনেয়াপোলিস শহরে হত্যার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনকে ২২ বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বিচারক রয়েছেন, বিশ্বাস ও দায়িত্বশীলতার এক পদের অপব্যবহার ও বিশেষ করে ফ্লয়েডের ওপর যে নিষ্ঠুরতা তিনি দেখিয়েছেন, সেসব কারণে তাকে এই দণ্ড দেয়া হয়েছে।

গ্রেফতারের সময় ৪৮ বছর বয়সী ফ্লয়েডের গলার ওপর কয়েক মিনিট হাঁটু গেড়ে বসে থাকার কারণে তার মৃত্যু হয়। তার এই হত্যার ফলে সারা বিশ্বে বর্ণবাদ ও পুলিশি নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।

৪৫ বছর বয়সী শভিন গত মাসে সেকেন্ড ডিগ্রি হত্যাকাণ্ড ও আরো কয়েকটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। বিচার চলার সময় তার আইনজীবী দাবি করেছিলেন, এই হত্যার ঘটনাটি আসলে 'সরল বিশ্বাসে করা একটি ভুল'।

সাজার রায়ে ডেরেক শভিনকে 'প্রিডেটরি অফেন্ডার হিসেবে তালিকাভুক্ত করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সংস্থা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নজরদারি করে থাকে। একইসাথে শভিনকে আজীবনের জন্য অস্ত্রের মালিক হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি ও যুক্তরাষ্ট্রের আরো তিনজন সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আলাদাভাবে জর্জ ফ্লয়েডের সাধারণ নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ফ্লয়েডের পরিবার ও তাদের সমর্থকরা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। আইনজীবী বেন ক্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছেন, এই ঐতিহাসিক সাজার মাধ্যমে পরিণতি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ফ্লয়েড পরিবার এবং আমাদের জাতিকে আরো (এই ধরনের ঘটনা) নিরাময়ের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।

ফ্লয়েডের বোন ব্রিজেট ফ্লয়েড বলেছেন, এই কারাদণ্ড পুলিশের নিষ্ঠুরতার অভিযোগ যে শেষ পর্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়ে থাকে, সেটাই প্রমাণ করলো। তবে এখনো আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘সাজাটি সঠিক বলেই মনে হচ্ছে।’ যদিও তিনি বিস্তারিত সব কিছু জানেন না।

শুনানিতে কী বলা হয়েছে?
আদালতে যখন সাজার শুনানি চলছিল, তখন ফ্লয়েডের ভাই টেরেন্স ফ্লয়েড সর্বোচ্চ সাজা, ৪০ বছরের কারাদণ্ডের দাবি করেছিলেন।

ফ্লয়েডের সাত বছরের গায়ানাকে একটি ভিডিও রেকর্ডিয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়, যেখান তাকে বলতে শোনা যায় যে সে তার বাবার অভাব বোধ করছে ও তাকে ভালোবাসে। ফ্লয়েডের সন্তান গায়ানা বলেন, ‘সে (বাবা) কোথায়? আমি সবসময়ে জানতে চাই। আমার বাবা সমসময়ে আমার দাঁত মাজতে সাহায্য করতো।’

মামলার বিচারক পিটার কেহিল বলেছেন, এই মামলাটি পুরো সম্প্রদায় ও দেশের জন্য কষ্টদায়ক। কিন্তু সবচেয়ে বেশি কষ্টের ফ্লয়েডের পরিবারের জন্য। আবেগ বা সহানুভূতির ওপর নির্ভর করে এই সাজা দেয়া হয়নি। কিন্তু আমি এটাও বলতে চাই যে গভীর ও অবর্ণনীয় বেদনা সব পরিবারগুলো অনুভব করছে, বিশেষ করে ফ্লয়েডের পরিবার, আমি সেটা অনুভব করতে পারছি।

আদালতে ডেরেক শভিন বলেছেন, ফ্লয়েড পরিবারের প্রতি তিনি তার সমবেদনা প্রকাশ করেছেন ও বলেছেন, ওই ঘটনা সম্পর্কে ভবিষ্যতে হয়তো অন্য কিছু তথ্য জানা যাবে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে সবকিছু মিলিয়ে হয়তো আপনাদের মনে শান্তি আসবে। কিন্তু তিনি ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি।

আদালতে ডেরেক শভিনের মা বলেছেন, তিনি একজন ভালো ব্যক্তি। সন্তানকে উদ্দেশ্য করে মা ক্যারোলিন পাউলেন্টি বলেন, ‘তোমার নির্দোষিতার ওপর আমার সবসময়েই বিশ্বাস আছে। আমি সেখান থেকে কখনোই টলবো না।’

মিনেসোটার অ্যাটর্নি জেনারেল কেইথ এলিসন বলেছেন, ডেরেক শভিনের এই সাজা হচ্ছে, ভয়াবহভাবে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সবচেয়ে দীর্ঘ সাজার অন্যতম।

জর্জ ফ্লয়েডের কী হয়েছিল?
২০২০ সালের ২৫ মে মিনেয়াপোলিসের একটি দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট কিনেছিলেন ৪৬ বছর বয়সী জর্জ ফ্লয়েড। দোকানের এক সহায়তাকর্মী মনে করেছিলেন যে তিনি ২০ ডলার মূল্যের একটি নকল বিল ব্যবহার করছিলেন ও ফ্লয়েড যখন সিগারেটের প্যাকেটটি ফেরত দিতে চাননি তখন তিনি পুলিশ ডাকেন। পুলিশ পৌঁছানোর পর তারা ফ্লয়েডকে তার পার্ক করে রাখা গাড়ি থেকে নামতে বলেন ও তার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয়া হয়।

পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় ফ্লয়েড চিৎকার করার চেষ্টা করলে ধ্বস্তাধস্তি হয়। তারা তাকে জোর করে মাটিতে ফেলে দেহের ওজন দিয়ে চেপে ধরেন। শভিন তার হাঁটু ফ্লয়েডের পেছনের ঘাড়ের ওপর নয় মিনিট ধরে চেপে ধরে বসে থাকেন। এ সময় ফ্লয়েড অন্তত কুড়িবার বলেছিলেন যে তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না। ফ্লয়েড বলছিলেন, ‘দয়া করুন, দয়া করুন, দয়া করুন’।

যখন অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছায় ততক্ষণে ফ্লয়েড নিথর হয়ে গেছেন। এর এক ঘণ্টা পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার এই হত্যার ঘটনাটি মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেছিলেন এখন ১৮ বছরের তরুণী ডার্নেলা ফ্রাজিয়ের। সেই সময় একজন আত্মীয়ের সাথে রাস্তায় হাঁটার সময় তিনি ঘটনাটি দেখতে পান।

তিনি বলেছেন, মোবাইল ফোনে ঘটনাটির রেকর্ড করতে শুরু করি। কারণ আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, একজন মানুষ প্রচণ্ড ভীত হয়ে তার জীবন ভিক্ষা চাইছে। এই মাসের শুরুর দিকে ফ্রাজিয়েরকে আমেরিকান সাংবাদিকতার সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার পুলিৎজারের বিশেষ পুরস্কার দেয়া হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement