ইতিহাসের পাতায় জো বাইডেন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ নভেম্বর ২০২০, ০০:০১
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন।
বিবিসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, তিনি ২৭৩টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন, অর্থাৎ তিনি জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, যদিও তা নির্ভর করবে আইনগত চ্যালেঞ্জের ফলাফলের ওপর।
ভোটের ফলাফলের হিসাবে পেনসিলভেনিয়ায় জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। পেনসিলভেনিয়ায় জেতার মাধ্যমে বাইডেন সেখানকার ২০টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে গেলেন। এর ফলে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টি ভোট তিনি ছাড়িয়ে গেলেন।
পেনসিলভেনিয়া সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যে ভোটগণনা এখনো চলছে। এগুলোর মধ্যে জর্জিয়া, অ্যারিজোনা এবং নেভাডাতে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। ফলে এই তিনটি রাজ্যে তিনি জিতলে তিনি জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইলেকটোরাল ভোটের চেয়ে আরো বেশি ভোট পেয়ে যাবেন। এই ভোটগুলো পেলে তার ঝুলিতে যাবে ৩০৬টি ভোট।
বাইডেনের বিজয়ের খবর জানাজানি হওয়ার পর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির বিএলএম প্লাজায় উল্লসিত লোকজন ‘ঈশ্বরকে প্রশংসা, ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদায় নিয়েছেন’ বলে গান গাইতে দেখা যায়।
এক নজরে বাইডেন
জন্ম: বাইডেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভানিয়ার স্ক্রানটনে। স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলাওয়ারে তার বেড়ে ওঠা। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি।
বাবা-মা: বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র, মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। তার মা আইরিশ বংশোদ্ভূত।
শিক্ষা: বাইডেন ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে ডিগ্রি নেন।
পরিবার: সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাইডেন ১৯৬৬ সালের নিলিয়া হান্টারকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে তিন সন্তান রয়েছেন—জোসেফ আর ‘বিউ’ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা। ১৯৭২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিলিয়া নিহত হন। পরে ১৯৭৩ সালে বাইডেন জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
রাজনৈতিক জীবন: বাইডেন ১৯৬৯ সালে অ্যাটর্নি হন, ১৯৭০ সালে কান্ট্রি কাউন্সিলে নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মত সিনেটে নির্বাচিত হন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পঞ্চম কনিষ্ঠতম সিনেটর। ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০২ এবং ২০০৮ সালগুলোতেও সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৮ সালের মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পক্ষ থেকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি বারাক ওবামার সাথে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এর পূর্বে ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্য থেকে সিনিয়র সিনেটর নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় লাভ করেন।
ধর্ম: জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত প্রথম কোন রোমান ক্যাথলিক বিশ্বাসী। আর দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত প্রথম কোন রোমান ক্যাথলিক। তার আগে জন এফ কেনেডি ছিলেন প্রথম রোমান ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট।
যেভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে বাইডেন
২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম বাইডেনকে ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করে। তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিবিধ ও বিপরীতার্থক উত্তর প্রদান করতেন এবং বলতেন, "কখনোই না বলবেন না"। একবার তিনি বলেন তিনি পুনরায় নির্বাচন করবেন এমন সম্ভাবনা দেখছেন না। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি বলেন, "আমি যদি হাটতে পারি তাহলে নির্বাচন করবো।" ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এই নির্বাচনে বাইডেনের অংশগ্রহণ চেয়ে টাইম ফর বাইডেন নামে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি কমিটি গঠিত হয়।
প্রচারাভিযান
২০১৯ সালের ১৫ জুলাই অমুনাফাভোগী বাইডেন ক্যানসার ইনিশিয়েটিভ ভবিষ্যতের জন্য তাদের কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। প্রেসিডেন্ট প্রচারাভিযানের পূর্বে নৈতিক পূর্বসতর্কতা হিসেবে বাইডেন ও তার স্ত্রী এপ্রিলে এই ইনিশিয়েটিভের বোর্ড সদস্যের পদ ছেড়ে দেন।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কিকে বাইডেন ও তার পুত্র হান্টার বাইডেনের অপকর্মের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য চাপ দেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ অভিযোগ সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার অপকর্মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যম তাদের কাজের তদন্তের জন্য চাপ দেওয়াকে বাইডেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জয়ের সুযোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা বলে উল্লেখ করে, যার ফলে রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির সূত্রপাত হয় এবং হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ট্রাম্পকে অভিশংসিত করে।
২০২০ সালের ১৮ আগস্ট ২০২০-এর ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে বাইডেন দাপ্তরিকভাবে ২০২০-এর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন।
২০ আগস্ট ৭০ জন সাবেক রিপাবলিকান সিনিয়র জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা "ট্রাম্প জাতীয় সংকটকালে নেতৃত্ব দিতে অনুপযুক্ত ছিলেন" এই মর্মে বাইডেনকে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দেন।
সর্বোচ্চ ভোটারপ্রিয় প্রার্থী
২০০৮ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বারাক ওবামা ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫শ’র বেশী ভোট পেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী ভোটারপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন। এবারের ২০২০ সালের নির্বাচনে একই দলের প্রার্থী জো বাইডেন ৭ কোটি ২১ লাখ ৫৭ হাজারেরও বেশী ভোট পেয়ে সর্বোচ্চ ভোটারপ্রিয়তার স্বাক্ষর রাখলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে শূন্য ভোট পাওয়ার রেকর্ড থাকলেও এখন পর্যন্ত এত বেশি ভোট পেয়ে কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। তবে জনপ্রিয়তার বিবেচনায়, ১৭৮৮ সাল এবং ১৭৯২ সালের উভয় নির্বাচনে ইলেক্টোরাল ও পপুলার, উভয় ভোটেই নির্দলীয় প্রার্থী জর্জ ওয়াশিংটনের শতভাগ ভোটপ্রাপ্তিই একমাত্র বিরল ঘটনা। পরবর্তীতে কোন প্রার্থী কোন ভোটের কোন পদ্ধতিতেই শতভাগ ভোট পাননি।
সূত্র : বিবিসি ও উইকিপিডিয়া
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা