ফেস মাস্ক ভাল না মন্দ এ নিয়ে আমেরিকায় সামাজিক মাধ্যম উত্তাল
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ জুলাই ২০২০, ২৩:২৩
আমেরিকার অনেক রাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী, তখন মাস্ক পরা নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ছেয়ে গেছে বিভ্রান্তিমূলক নানা পোস্ট ও ভিডিওতে। মাস্ক পরার বিরুদ্ধে আমেরিকার অনেক জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। এমনকি মাস্ক না পরার জন্য ভুয়া ছাড়পত্রও বাজারে বিক্রি শুরু হয়ে গেছে।
বিবিসির রিয়ালিটি চেক বিভাগ মাস্ক নিয়ে নানাধরনের দাবির সত্যতা যাচাই করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
কোভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে আমেরিকায় মাস্ক পরার বিরোধী যারা তারা প্রকাশ্য জনসভা এবং সামাজিক মাধ্যমে মাস্কের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
যেসব রাজ্যে দোকানের ভেতর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেখানে মাস্ক পরা প্রতিহত করা মানুষের ভিডিও ফুটেজ অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে।
আমেরিকার বিচার বিভাগ এক বিবৃতি জারি করে বলেছে কেউ কেউ প্রকাশ্য স্থানে মাস্ক পরার নিয়ম থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে যে ছাড়পত্র দেখাচ্ছে তা ‘জাল করা কার্ড’।
বাজারে যে কার্ড বিক্রি করা হচ্ছে তাতে লেখা আছে ‘আমাকে ফেস মাস্ক পরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে’ এবং আরো বলা হচ্ছে ‘আমেরিকার ডিসেবিলিটি আইনের অধীনে, আমি আমার অক্ষমতার বিস্তারিত প্রকাশ করতে বাধ্য নই।’
জাল ছাড়পত্রের একটি ভার্সানে এমনকি বিচার বিভাগের সিলমোহরও দেয়া হয়েছে এবং ‘ফ্রিডম টু ব্রিদ এজেন্সি’ নামে নি:শ্বাস নেবার অধিকার সংক্রান্ত একটি সংস্থার লিংকও জুড়ে দেয়া হয়েছে। কার্ডে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কাউকে জোর করে মাস্ক পরতে বাধ্য করলে তথাকথিত এই সংস্থার কাছে সেই দোকানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে।
কিন্তু বিবিসি জেনেছে এই কার্ড ভুয়া।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে: ‘এই কার্ডের কোন আইনপ্রয়োগকারী ক্ষমতা নেই। ‘ফ্রিডম টু ব্রিদ এজেন্সি’ নামে সরকারের কোন সংস্থা নেই।’
একটি তথ্য অনুসন্ধান সংস্থা জানাচ্ছে ফ্রিডম টু ব্রিদ এজেন্সি একটি ফেসবুক গ্রুপ যারা নিজেদের পরিচয় দিয়েছে এই বলে যে তারা ‘আমেরিকান নাগরিকের স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তা রক্ষায় নিবেদিত একটি গর্বিত আন্দোলন গোষ্ঠী’।
মাস্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে?
এরই মধ্যে মাস্ক পরার গুণাগুণ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছে নানা ধরনের খবর। একটি গ্রাফিক চিত্র সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হয়েছে কয়েক হাজার বার। এতে রয়েছে বিভ্রান্তিকর দাবি। এতে তুলে ধরা হয়েছে আপনি ফেস মাস্ক পরলে আপনার কী হতে পারে?
বিভ্রান্তিমূলক গ্রাফিক্স চিত্র দিয়ে দাবি করা হয়েছে ফেস মাস্ক কীভাবে শরীরের ক্ষতি করে এমনকি তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কীভাবে দমিয়ে রাখে। অবশ্যই এর স্বপক্ষে তথ্য প্রমাণ নেই বলে বিবিসির তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ এ ব্যাপারে খুবই স্পষ্ট। শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়া যায় এমন জিনিস দিয়ে তৈরি ফেস মাস্ক যদি ঠিকমত পরা হয় তা শরীরের জন্য কোন সমস্যা সৃষ্টি করে না।
তাদের নির্দেশনা হল: ‘মেডিক্যাল মাস্ক যদি ঠিকমত পরা হয়, তাহলে দীর্ঘ সময় পরে থাকলেও তার থেকে কোন কার্বন ডাই অক্সাইড বিষক্রিয়া বা অক্সিজেন ঘাটতি হবে না।’
সামাজিক মাধ্যমে এইসব পোস্টে দাবি করা হচ্ছে মাস্ক শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চেপে রাখে। এর সমর্থনে যদিও কোন তথ্য প্রমাণ বিবিসি পায়নি।
সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ কিথ নিয়েল বরং বলছেন, ‘মাস্ক পরলে জীবাণু আপনার মুখ ও নাক দিয়ে শরীরে ঢুকবে না। আর জীবাণু শরীরে না ঢুকলে আপনার রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ারও সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রয়োজন হবে না। তবে মাস্ক পরার অর্থ এই নয় যে মাস্ক আপনার শরীরে এই ব্যবস্থাকে অকেজো করে দিচ্ছে।’
বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে এই তথ্য শেয়ার করা হয়েছে যেগুলোর মধ্যে একটি দাবি করছে তাদের নাম ‘ন্যাচারাল মেডিসিন ডেটাবেস’ এবং তাদের অনুসারীর সংখ্যা ৭০ হাজার। আর একটি অ্যাকাউন্ট থেকে রুশ ভাষায় এর একটি সংস্করণ পোস্ট করে নানাধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
মাস্কের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণাই চালানো হচ্ছে মিমের মাধ্যমে যেখানে মাস্ক নিয়ে চলছে ঠাট্টা মস্করা।
টেকস্টে লেখা : ‘ভাইরোলজিস্টরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে এমন পোশাকই পরেন। তবে আপনার মুখে কাপড় বাঁধলেও চলবে।’
ল্যাবে ভাইরোলজিস্টের দরকার সুরক্ষা পোশাক আর আপনার দরকার শুধু কাপড় বা রুমাল - ভাইরাল হওয়া উপরের এই মিমের একটি ভার্সান প্রথমদিকে পোস্ট করা হয়েছিল কিউ-অ্যানন নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে, যেটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ট্রাম্প জুনিয়ার আবার পোস্ট করেছিলেন। তার পোস্টিংয়ে শেয়ার বা লাইক পড়েছিল এক লাখের ওপর।
তবে মজার ব্যাপার হল আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সিডিসি করোনার বিস্তার ঠেকাতে মানুষকে পরামর্শ দিয়েছে মুখ ঢাকার জন্য যে কোন কাপড় এমনকি রুমাল ব্যবহারেরও।।
'ডাক্তারের স্বীকারোক্তি'র ভিডিও
ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক-এ ‘একজন ডাক্তারের স্বীকারোক্তি' নাম একটি ভিডিও ১৫ লক্ষ মানুষ দেখেছে। এই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে ওই ডাক্তার স্বীকার করছেন করোনাভাইরাস আক্রান্তের হিসাব বাড়িয়ে বলা হচ্ছে।
ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এত বিশাল হবার কারণ হল, যেই হাসপাতালে যাচ্ছে, তা ভাঙা পা নিয়ে হোক বা বুলেটের জখম নিয়ে হোক- ‘লিখে দেয়া হচ্ছে ওই ব্যক্তি করোনা পজিটিভ’।
যে ব্যক্তিকে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তার নাম ড্যারেল উলফ, তিনি থাকেন কানাডায়। তিনি বলেছেন তিনি ‘প্রাকৃতিক ওষুধের’ চিকিৎসায় কাজ করেন।
তার ভিডিও প্রথম পোস্ট করা হয় ফেসবুকে। সেখানে এর ভিউ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার। ভিডিওতে স্থানীয় একটি হাসপাতালের কথা বর্ণনা করা হয় এবং তিনি বলেন এই ‘তথ্য সরাসরি একজন ডাক্তারের দেয়া’।
তিনি কোনো হাসপাতালের কথা বলেছেন তা স্পষ্ট নয়। বিবিসি বিস্তারিত তথ্যা জানতে চেয়ে কোন উত্তর পায়নি।
টিকটকের যে অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয় তাতে ভিডিওতে কে কথা বলছেন তা বলা হয়নি। যে হাজার হাজার মানুষ ভিডিওটি দেখে মন্তব্য করেছেন তারা স্পষ্টতই ধরে নিয়েছেন আমেরিকার কোন হাসপাতাল সম্পর্কে এই বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
তবে আমেরিকা অথবা কানাডার কোন্ হাসপাতালে যে কোন রোগীকেই করোনা পজিটিভ বলে নথিভুক্ত করার কোন তথ্য বিবিসি পায়নি।
দুটি দেশেই করোনা পজিটিভ রোগীর তথ্য নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন আছে। অন্য যে কোন রোগ বা আঘাত নিয়ে কেউ হাসপাতালে গেলে তাকে করোনা রোগী হিসাবে নথিভুক্ত দুটি দেশের কোন হাসপাতালে করার স্বপক্ষে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
‘গভীর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’
ইউটিউবে পোস্ট করা একটি ভিডিও যা দেখেছে সাড়ে সাত লাখ মানুষ তাতে এই মহামারিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ‘গণমাধ্যমের ব্যাপক বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা’ এবং ‘রাজনৈতিক ভাঁওতা’ হিসাবে।
এই ভিডিওতে নানা ধরনের ভিত্তিহীন দাবি তুলে ধরা হয়েছে যেখানে আমেরিকায় নির্বাচনের বছরে একটা মহামারি তৈরি করার গভীর ষড়যন্ত্রের গল্প বলা হয়েছে।
শুরুতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফুটেজ আর ধোঁয়ায় আছন্ন আকাশ দিয়ে একটা ভয়ার্ত আসন্ন দুর্যোগের আবহ তৈরি করা হয়েছে - অনেকটা ঘরে তৈরি নেটফ্লিক্স তথ্যচিত্রের ধাঁচে।
ভিডিওতে মানুষকে বলা হচ্ছে ‘মাস্ক খুলে ফেলে দাও’।
ভাষ্যকার বলছে ডেমোক্রাটিক রাজনীতিকরা ইচ্ছে করে মাস্ক পরিয়ে মানুষের ক্ষতি করতে চাইছে, যাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ে আর মহামারি নিয়ে তৈরি হয় বিশাল একটা আতঙ্ক।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা