বিশ্লেষণ : যেভাবে রেহাই পেলেন ট্রাম্প
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৯:৪৬
ইমপিচমেন্ট বিচারপ্রক্রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যেতে হচ্ছে না। তবে এই ভোটাভুটি উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। কারণ রিপাবলিকান রাজনীতিবিদরা অন্ধভাবে দলের পক্ষে সমর্থন জানাতে গিয়ে ট্রাম্পকে অন্যায়ের যাবতীয় অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়েছেন।
এই ঘটনাকে এ কারণেও লক্ষণীয় মনে করা হয় যে, এটিই ছিল শেষবারের মতো এমন বিচার যেখানে নিজ দলের রিপাবলিকান কোনো সিনেটরও প্রকাশ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন! মার্কিন ইতিহাসে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবে নিজ দলের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কোনো সিনেটরের ভোট দেয়ার ঘটনা এবারই প্রথম।
ইমপিচমেন্ট তদন্তে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকারকারী বেশির ভাগই রিপাবলিকান ছিলেন না। কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটরসহ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও ট্রাম্পের প্রবল বিরোধিতা করেছিলেন এবং তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। ডেমোক্র্যাটরা আশা করেছিলেন, তারা মিট রমনির পথ ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবে ভোট দেবেন, কিন্তু তারা তা করেননি। এদের বেশির ভাগই সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের আচরণের সমালোচনা করলেও তাদের বক্তব্য হচ্ছে, সেটা ইমপিচ করার পর্যায়ে যায়নি। তারা ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে রাজি ছিলেন না।
ফলে শেষ পর্যন্ত ইউটাহ থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনিই ছিলেন একমাত্র রিপাবলিকান, যিনি দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। তবে ডেমোক্র্যাটদের নিরাশ করেছেন অন্য দু’জন মধ্যপন্থী রিপাবলিকান সিনেটর মেইনের সুসান কলিনস এবং আলাস্কার লিসা মারকাওস্কি। প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারা নিজের পক্ষ ত্যাগ করেননি। ফলে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট হয়নি, তিনি টিকে গেছেন। সুতরাং সব সময় একজন অভিযুক্ত প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও ট্রাম্পের টিকে থাকা একটি বড় রাজনৈতিক বিজয় হিসেবেই গণ্য হবে। এটি কিভাবে সম্ভব হয়েছিল তা নিচে বর্ণনা করা হলো।
ব্যর্থ হলো আটকানোর চেষ্টা
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন কি থাকবেন না, সিনেটে এ নিয়ে ভোটাভুটি হয়। এতে নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির সিনেটরদের ভোটে তার ক্ষমতার আসন অটল থেকে যায়। নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে দাঁড়ালে ট্রাম্পই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট, সিনেটে যার ইমপিচমেন্ট বিচার হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট পড়ে ৫২টি, বিপক্ষে পড়ে ৪৮টি। কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট পড়ে ৫৩টি, বিপক্ষে পড়ে ৪৮টি। দু’টি অভিযোগের ক্ষেত্রেই বেশি ভোট পেয়ে ট্রাম্প উতরে গেলেন ইমপিচমেন্টের ঝুঁকি।
নির্বাচিত রিপাবলিকানরা পক্ষে ছিলেন
যেদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত যায় সেদিকেই অনুসরণ করেন নির্বাচিত রাজনীতিবিদরা। এ ক্ষেত্রেও দলীয় আনুগত্যে তেমন বরখেলাপ দেখা যায়নি। রমনি বাদে নির্বাচিত রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের পক্ষ নিয়েছেন, তার সাফাই গেয়েছেন, তাকে সমর্থন করেছেন। রমনি বাদে ট্রাম্পকে সিনেটর আলেকজান্ডার থেকে প্রতিনিধি লি জেলডিন পর্যন্ত সবাই সমর্থন করেন। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল, লিন্ডসে গ্রাহাম এবং অন্যরা বিচারের আগে বলেছিলেন যে তারা বিচার শুরু হওয়ার সাথে সাথে নিরপেক্ষতার শপথ নেয়ার পরও তারা নিরপেক্ষ বিচারক হবেন না। ট্রাম্পের প্রতি তাদের এ রকম আনুগত্যের কারণে তাকে আটকানোর কোনো প্রমাণ বা যুক্তি আশাই করা যায়নি।