ট্রাম্প ‘খুব হতাশ‘ এবং জেলেনস্কিকে অবশ্যই খনিজ সম্পদের চুক্তি করতে হবে : মার্কিন উপদেষ্টা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:০৬

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আবার আলোচনায় বসতে হবে এবং ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে একটি চুক্তি করতে হবে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদের অংশীদারিত্ব দাবি করলে গত বুধবার জেলেনস্কি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ওই চুক্তি করলে রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধে মার্কিন সহায়তার ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন থাকবে।
মাইক ওয়ালটজ গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের এক ব্রিফিংয়ে ওই মন্তব্য করেন। তার ওই মন্তব্য কিয়েভে জেলেনস্কি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনবিষয়ক প্রধান দূত কিথ কেলোগের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের গুরুত্বকে ছাপিয়ে যায়।
ওয়াল্টজ বলেন যে সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘অগ্রহণযোগ্য‘ অপমান করার কারণে হোয়াইট হাউজ ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি ‘খুব হতাশ‘।
ইউক্রেন বিপুল পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ। সেসবের মাঝে যেমন লিথিয়াম ও টাইটানিয়াম আছে, পাশাপাশি অনেক বড় পরিসরে কয়লা, গ্যাস, তেল ও ইউরেনিয়ামের মজুদ রয়েছে- যার বাজার মূল্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।
বৃহস্পতিবারের আগে ওয়াল্টজ পরামর্শ দিয়েছিলেন, ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রকে তার খনিজ সম্পদে প্রবেশ করার অধিকার দেয়, তাহলে তাদেরকে মার্কিন সহায়তা দেয়া যেতে পারে। বা ইতোমধ্যে যে মার্কিন সহায়তা দেয়া হয়েছে, এটিকে তার ক্ষতিপূরণ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
‘আমরা ইউক্রেনীয়দের সত্যিই একটি অবিশ্বাস্য এবং ঐতিহাসিক সুযোগ দিয়েছি‘ যোগ করে মাইক ওয়াল্টজ বলেন, এটি ‘টেকসই‘ এবং ইউক্রেনের জন্য ‘সেরা‘ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কিন্তু জেলেনস্কি এই প্রস্তাবকে নাকচ করে বলেন, ‘আমি আমাদের রাষ্ট্রকে বিক্রি করতে পারি না।‘
কিয়েভে কিথ কেলোগের সাথে জেলেনস্কির বৈঠক শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরে ইউক্রেনীয় নেতা ঘোষণা করেন যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘একটি বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা চুক্তি‘ করতে প্রস্তুত, যা ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করতে সাহায্য করবে।
এরপর মাইক ওয়াল্টজ হোয়াইট হাউজের সংবাদ সম্মেলনে ওই মন্তব্য করেন।
জেলেনস্কি কিয়েভের বৈঠকটিকে ‘ফলপ্রসূ‘ বলে অভিহিত করেন ঠিকই। কিন্তু এটিকে অনেকটা অপ্রতিভ রাজনৈতিক সাক্ষাতের মতো মনে হচ্ছিল।
ডোনাল্ট ট্রাম্পের পক্ষের সিনিয়র নেতারা যখন সরাসরি মস্কোর সাথে যোগাযোগ করছিল, তখন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল কেলোগ বলেন, তিনি কিয়েভে কেবল ‘শুনতে‘ গিয়েছিলেন।
কিন্তু এটি খুব দ্রুতই স্পষ্ট হয়ে যায় যে তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলবেন না। কারণ, শেষ মুহূর্তে একটি সংবাদ সম্মেলন বাতিল হয়ে যায়।
বিবিসি জানতে পেরেছে, এটি একটি মার্কিন সিদ্ধান্ত ছিল। ইউক্রেনীয় সূত্রগুলো দাবি করেছে যে তারা বিশ্বাস করে, কেলোগকে হোয়াইট হাউজ সাইডলাইনে রেখেছে।
কিয়েভের জন্য কেলোগের সাথে বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা তার মাধ্যমে তাদের চাওয়াগুলো ওয়াশিংটনকে জানাতে পারতেন।
এক্স-এ শেয়ার করা এক পোস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ও বিশেষ মার্কিন দূত যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি, যুদ্ধবন্দীদের ফেরত আনার উপায় এবং কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা নিয়ে ‘বিস্তারিত আলোচনা‘ করেছেন।
তিনি আরো যোগ করেন, ‘ইউক্রেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাথে একটি শক্তিশালী, কার্যকর বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা চুক্তি করার জন্য প্রস্তুত।‘
বৃহস্পতিবারের পর জেলেনস্কি জানান যে তিনি কানাডা, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতাদের সাথে কথা বলেছেন।
এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউক্রেন সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত নয়।‘
কিথ কেলোগ কেন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে চাননি, তার সম্ভাব্য কারণগুলো উঠে আসছে।
কেলোগের এই বৈঠক এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে হয়েছে, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ চলছে। ট্রাম্প সম্প্রতি ইউক্রেনের নেতাকে ‘অনির্বাচিত একনায়ক‘ বলে আক্রমণ করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো দাবি করেন যে এই যুদ্ধের জন্য জেলেনস্কিই দায়ী।
এখন বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘের একটি প্রস্তাবকে স্বীকৃতি দিতে চাইছে না, যেখানে মস্কোকে আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে সিনিয়র রাশিয়ান এবং মার্কিন কর্মকর্তারা যুদ্ধ শেষ করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে সৌদি আরবে একটি বৈঠক করেন। সেখানে জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তিন বছর আগে শুরু হয়, যখন রাশিয়া ইউক্রেনে পুরোদমে আক্রমণ শুরু করে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে এক মাস ধরে ক্ষমতায় থাকা ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে এই যুদ্ধে মার্কিন সম্পৃক্ততা আমেরিকার স্বার্থে নয়। তাই তিনি আগের মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসে সরাসরি রাশিয়ার সাথে আলোচনা করে দ্রুত যুদ্ধ শেষ করতে চাইছেন।
গত মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সৌদি আরবে রাশিয়ান কূটনীতিকদের সাথে চার ঘণ্টার বেশি আলোচনার পরে জানান, উভয় পক্ষই আলোচনার প্রাথমিক ধাপে সম্মত হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে বৈঠকের পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন যে ভলোদিমির জেলেনস্কি ‘যুদ্ধ শুরু করেছিলেন‘- যা নিয়ে জেলেনস্কি মন্তব্য করেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘মস্কোর তৈরি বিভ্রান্তিকর তথ্যের জগতে বসবাস করছেন।‘
তার জবাবে ট্রাম্প তাকে ‘একনায়ক‘ আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করেন এবং দাবি করেন যে ইউক্রেনের মানুষদের মধ্যে ভলোদিমির জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা কমে গেছে।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা