২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ শাবান ১৪৪৬
`

যুদ্ধ বন্ধ করতে না পারায় ইউক্রেনকে দুষলেন ট্রাম্প

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সৌদি আরবে আলোচনা করেছেন - ছবি : বিবিসি

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈঠক হয় মঙ্গলবার। এই বৈঠকে ইউক্রেনের পক্ষের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না, যেটাকে ‘অপ্রত্যাশিত‘ বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের এই প্রতিক্রিয়ায় ‘হতাশা‘ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

প্রায় তিন বছর আগে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ ‘আরো আগেই শেষ করা যেত‘ বলে মনে করেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগো রিসোর্টে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন মার্কিন প্রসিডেন্ট।

এ সময় এক সংবাদিক জানতে চান, তিন বছর ধরে যুদ্ধে বিপর্যস্ত ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধি রিয়াদের আলোচনায় না থাকা নিয়ে আপনি কোনো বার্তা দিতে চান কিনা।

জবাবে ট্রাম্প বলেন, ’আমি আসলে হতাশ। তিন বছর ধরে আমি দেখছি এখানে কী ঘটছে। এই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আলোচনার বিষয় হওয়াই উচিত ছিল না।...তারা আলোচনায় অংশ নিতে না পারা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। কিন্তু গত তিন বছর ধরেই তাদের জন্য এই সুযোগ খোলা ছিল। খুব সহজেই এই যুদ্ধ বন্ধ করা যেত।

এদিকে রিয়াদের বৈঠকের পর রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার জন্য তারা দল গঠন করতে রাজি হয়েছে।

তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, কোনো শান্তি চুক্তির আওতায় ইউক্রেনে ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশের সেনা মোতায়েন মেনে নেবে না রাশিয়া।

সৌদি আরবে মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে তিনি এখন ‘আরো আত্মবিশ্বাসী।’

‘বৈঠক ফলপ্রসূ ছিল। রাশিয়া কিছু করতে চায়। তারা এই ভয়ঙ্কর বর্বরতা বন্ধ করতে চায়।’

তিনি বলেন, ’আমি মনে করি, এই যুদ্ধ শেষ করার ক্ষমতা আমার আছে।’

ইউক্রেনে ইউরোপীয় দেশগুলো সেনা পাঠাতে পারে কিনা এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ’যদি তারা তা করতে চায়, তাহলে দারুণ! আমি এটিকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি।’

রিয়াদে অনুষ্ঠিত মঙ্গলবারের এই বৈঠক ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো রাশিয়া ও মার্কিন প্রতিনিধিদের মুখোমুখি বৈঠক।

এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সহকারী ইউরি উশাকভ এবং রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ।

বৈঠকের পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ’অন্য কোনো পতাকার অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিত থাকলেই বিষয়টি বদলে যাবে না। এটি অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।’

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া যত দ্রুত সম্ভব দুই দেশে নিজেদের দূত নিয়োগ দেবে এবং ‘পূর্ণ মাত্রায় সহযোগিতা‘ কার্যক্রম পুনরায় চালু করবে।

তিনি বলেন, ’এটি খুব ফলপ্রসূ আলোচনা ছিল। আমরা পরস্পরকে শুনেছি ও বুঝেছি।’

তিনি রাশিয়ার পূর্বের অবস্থান আবার তুলে ধরে বলেন, ন্যাটো জোটে ইউক্রেন যোগ দিলে তা রাশিয়ার জন্য ‘সরাসরি হুমকি‘ বলে বিবেচিত হবে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, তিনি ‘বিশ্বাস করেন‘, যুদ্ধ করার জন্য রাশিয়া যেকোনো ’কঠিন আলোচনায় যুক্ত হতে প্রস্তুত’।

তিনি বলেন, ’সব পক্ষকেই কিছু ছাড় দিতে হবে। আমরা আগে থেকে ঠিক করে দেব না যে সেগুলো কী হবে। আজ একটি দীর্ঘ ও কঠিন পথচলার প্রথম ধাপ। কিন্তু এটি গুরুত্বপূর্ণ।’

রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার কর্মকর্তারা বসার আগেই ইউরোপীয় নেতারা গত সোমবার প্যারিসে খুব দ্রুত আয়োজিত এক বৈঠকে অংশ নেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠার প্রতিক্রিয়ায় কী করা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা করা হয় সেখানে। তবে এ বিষয়ে তারা কোনো একক অবস্থানে পৌঁছাতে পারেননি।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেছেন যে ইউক্রেন নিয়ে যেকোনো চুক্তির জন্য ‘মার্কিন সমর্থন‘ দরকার হবে, যাতে রাশিয়া আবার আক্রমণ করতে না পারে। তিনি জানান, ইউক্রেনে ব্রিটিশ সেনা পাঠানোর সম্ভাবনাও বিবেচনা করছেন।

তবে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, যিনি ন্যাটোর অন্যতম প্রধান মিত্র, বলেন যে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করা বর্তমানে ’পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয়’।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কও বলেছেন যে সৈন্য পাঠানোর ইচ্ছে নেই তার।

ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া একমাত্র ইউরোপীয় নেতা ইতালির জর্জিয়া মেলোনিও সেনা পাঠানোর এই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

তিনি প্যারিসের বৈঠকে বলেন, ’ইউক্রেনে শান্তি আনার জন্য দেশটিতে ইউরোপীয় সেনা মোতায়েন করা সবচেয়ে জটিল ও সবচেয়ে কম কার্যকর উপায় হবে।’

রিয়াদে মার্কো রুবিও বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও আলোচনায় আসতে হবে। কারণ তারা ইতোমধ্যেই রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

বৈঠকে ইউক্রেনের অনুপস্থিতি সম্পর্কে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ’কেউই বিচ্ছিন্ন হচ্ছে না।’

তুরস্কে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বৈঠকের বিষয়ে কথা বলার সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে দৃশ্যতই ক্লান্ত ও হতাশ মনে হচ্ছিল।

তিনি বলেন, ’আমরা চাই সবকিছু ন্যায়সঙ্গত হোক এবং আমাদেরকে অন্ধকারে রেখে কেউ যেন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়।’

তিনি আরো বলেন, ’ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করার সিদ্ধান্ত ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে নেয়া যাবে না।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement